
সম্পাদকীয়
শান্তিনিকেতন এক শান্তিধাম– বাঙালি সংস্কৃতিবান মানুষের কাছে পরম আরাধ্য এক স্থান। বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শান্তিনিকেতন এক পঙ্ক্তিতে উচ্চারণযোগ্য। শান্তিনিকেতনেই জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রচনা করে গেছেন বিপুল সাহিত্য সম্ভার এবং গান। ১৯০১ সালে শান্তিনিকেতনে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এরপর ১৯২১ সালে বিশ্বভারতী নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা হয়। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছরই শিক্ষার্থীরা সেখানে শিক্ষাগ্রহণের জন্য যান। গান শেখার জন্যও বহু শিল্পী গিয়েছেন কবি এবং কবির পছন্দের সঙ্গীতশিল্পীদের স্মৃতিবিজড়িত শান্তিনিকেতনে। বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী শান্তিনিকতনে বেশ কয়েক বছর সঙ্গীতশিক্ষার অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন।
শিল্পকলায় উচ্চশিক্ষার জন্যও গিয়েছেন বহু চিত্রকর। তবে কেবল বাঙালির কাছেই নয়, ভারতের সব ভাষাভাষী সচেতন নাগরিকদের কাছেই কলকাতা থেকে একশ’ মাইল উত্তরে অবস্থিত শান্তিনিকেতন একটি সমীহজাগানো স্থান। সেই শান্তিনিকেতন বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি লাভ করেছে, এটি বড় সুসংবাদ। বহু আগেই এটি শান্তিনিকেতনের প্রাপ্য হলেও দেরিতে স্বীকৃতি আসায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন প্রাজ্ঞজনেরা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (আগের নাম টুইটার) ছবিসহ একটি পোস্ট দিয়ে প্রথম এ তথ্য জানায় ইউনেসকো। তাতে বলা হয়, ‘ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে ভারতের শান্তিনিকেতন। অভিনন্দন!’ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলায় অবস্থিত শান্তিনিকেতনকে ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিতে বহুদিন ধরে চেষ্টা চালাচ্ছিল ভারত সরকার। অবশেষে সেই স্বীকৃতি দিল ইউনেসকো। গত শুক্রবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে ইউনেসকোর সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পরিষদ বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির ৪৫তম বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার দুই দিন পর রবিবার শান্তিনিকেতনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায় ইউনেসকো।
শান্তিনিকেতনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়ে ইউনেসকো বলেছে, ‘কলকাতা থেকে একশ’ মাইল উত্তরে অবস্থিত শান্তিনিকেতন মূলত একটি আশ্রম। এটি প্রতিষ্ঠা করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে যেকোনো মানুষ সেখানে গিয়ে সৃষ্টিকর্তার আরাধনা করতে পারতেন।’ শান্তিনিকেতন বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস বলছে, ‘বাংলার জন্য এ এক গর্বের মুহূর্ত।
ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শান্তিনিকেতন। সংস্কৃতি ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় কবিগুরুর যে অবদান, এর মাধ্যমে তারই স্বীকৃতি দেওয়া হলো। আসুন, আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এই অমূল্য সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করি।’ বাংলাদেশও সুন্দরবন, মঙ্গল শোভাযাত্রার মতো কয়েকটি ক্ষেত্রে বিশ^ ঐতিহ্যের স্বীকৃতি অর্জন করেছে। তবে আরও অনেক স্থান রয়েছে, যেমন– চট্টগ্রামের ওয়ার সিমেট্রি, লালবাগ কেল্লা– যেগুলো বিশ^ ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেতেই পারে। তাই সম্ভাব্য তালিকা করে সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। এতে বাংলাদেশের সুনাম আরও বাড়বে। ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হবে।