ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১২ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক

-

প্রকাশিত: ২০:৩২, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক

সম্পাদকীয়

সরকার তথা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আন্তরিক উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে, দেশে অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিকের দৌরাত্ম্য-আধিপত্য কমানো যাচ্ছে না কিছুতেই। করোনা অতিমারির ভয়ঙ্কর দুঃসময়ে যেমন স্বাস্থ্য খাতের চরম অব্যবস্থা-অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা দেখা গিয়েছিল, অনুরূপ পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে অধুনা ডেঙ্গু মহামারিকে কেন্দ্র করে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ডেঙ্গুর সংক্রমণ প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর হারও। ঢাকার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলো ডেঙ্গু সংক্রমিত রোগীর ভিড়ে গিজগিজ করছে। স্থান সংকুলান বড় একটি সমস্যা। সেই সঙ্গে করোনা ও নিউমোনিয়ার সংক্রমণের খবরও আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ঢাকার বাইরে থেকে ডেঙ্গু রোগীদের রাজধানীতে না আসার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তবু প্রতিদিন বাড়ছে রোগীর ভিড়। আর রোগী ও স্বজনদের এই দুর্বলতাকে পুঁজি করে আবারও মাঠে নেমেছে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো।
ডেঙ্গু শনাক্তের জন্য প্রাথমিকভাবে রোগীর রক্ত পরীক্ষা করাতে হয়। আর জটিল রোগীদের ভর্তি করাতে হয় হাসপাতালে ব্লাড প্লাটিলেট ও অক্সিজেন দেওয়ার জন্য। সরকারি হাসপাতালে জায়গা না পেয়ে অনেকের স্বজন নিতান্ত নিরুপায় হয়ে দ্বারস্থ হন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোয়। মূলত সেখানেই চলছে চরম অরাজকতা ও স্বেচ্ছাচারিতা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু  শনাক্তের জন্য রক্তসহ সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষায় রেট বেঁধে দিলেও কেউই তা মানছে না। যে যেভাবে পারছে রোগীর স্বজনদের জিম্মি করে  আদায় করে নিচ্ছে মাত্রাত্রিরিক্ত অর্থ মানুষের জীবনমরণকে জিম্মি করে। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো যেন নেমে পড়েছে অর্থ লুটপাটে। চলতি সপ্তাহের শুরুতে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আবারও দেশব্যাপী অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দেওয়া হয়।

এরই অংশ হিসেবে সোমবার ঢাকার ভাটারা হাসপাতালটি বন্ধ তথা সিলগালা করে দেওয়া হয় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে। ডেঙ্গু পরীক্ষার নামে অতিরিক্ত ফি আদায়সহ অনেক অনিয়ম এবং লাইসেন্স নবায়ন না করার অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে। খোদ রাজধানীতেই যদি প্রকাশ্যে এমন অবৈধ চিকিৎসা ও ব্যবসা চলে, তাহলে সারাদেশের দুরবস্থা সহজেই অনুমেয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সারাদেশের অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ব্লাড ব্যাংক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দফায় অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য, যা ইতিবাচক অবশ্যই। 
পরিসংখ্যানে জানা যায়, দেশে নিবন্ধিত মোট বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ১৩ হাজার ৬১১টি। লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করেছে ২২ হাজার ৪২৭টি। নতুন হাসপাতাল তৈরির আবেদনের সংখ্যা ১৮ হাজার ৬২৫টি। ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা এসব হাসপাতাল-ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসক-নার্স-টেকনোলজিস্ট তো দূরের কথা, ভুয়া ডিগ্রির লোকজন দিয়ে অবাধে চলছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত বছরের আগস্টে দেশব্যাপী অভিযান চালিয়ে ৫৩৮টি অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেয় সিলগালা করে। এরপরও এগুলোর দৌরাত্ম্য বন্ধ করা যায়নি। এসবের সর্বাত্মক প্রতিরোধে অবিলম্বে আলাদা একটি অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করাসহ গাইডলাইন তৈরি এবং কঠোর আইন প্রণয়ন অত্যাবশ্যক।

×