
সম্পাদকীয়
তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ (আল জিহাদী) নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনের সন্ধান পেয়েছে পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট। ১৩ সেপ্টেম্বর দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতা জুয়েল মোল্লাসহ তিনজন পদস্থ নেতাকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বানচাল করে মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় দেশকে। ২০২৪ সালে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বড় ধরনের নাশকতা ও জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের। সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে শতাধিক জঙ্গি কর্মীসহ প্রয়োজনীয় অর্থ, অস্ত্র ও বোমা বানানোর পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল সংগঠনটি।
তাওহীদুল উলূহিয়্যাহর (আল জিহাদী) প্রতিষ্ঠাতা জুয়েল মোল্লা এর আগে ৯ মাস করাগারে থাকাকালে সেখানে বসেই নতুন জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয়। ইতোপূর্বে তিনি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য ছিলেন। এমন কি কারাগারে হামলা চালিয়ে অন্য জঙ্গিদের মুক্ত করার পরিকল্পনাও ছিল তাদের। ভারত উপমহাদেশের আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদার নেটওয়ার্ক পরিচালনাকারী ‘গজওয়াতুন হিন্দ’ নামের অনলাইন সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাদের। ওই সংগঠনের সঙ্গে বান্দরবানের জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুন আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া এবং ইমাম মাহমুদের কাফেলারও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল বলে জানতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
যেটি আশঙ্কার তা হলো, গত বছরের ২০ অক্টোবর দিন-দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন আদালতের জনাকীর্ণ প্রাঙ্গণ থেকে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার পর নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের বিষয়টি সামনে আসে। ইতোপূর্বে ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশের প্রিজন ভ্যান থেকে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রেও হাত ছিল সংগঠনটির। এই দুটো ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, দেশের কারাগারগুলোতেও কারাবন্দি বিপুলসংখ্যক জঙ্গি তাদের অপতৎপরতা চালিয়ে যেতে পারছে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারাগারের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা একশ্রেণির দুর্নীতিবাজ কারারক্ষীর জড়িত থাকাও বিচিত্র নয়।
তা না হলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কনডেম সেলে থাকা জঙ্গিরা মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুযোগ পায় কিভাবে? দেখা যাচ্ছে পুলিশ-র্যাব-কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতায় দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে অনেকাংশে সাফল্য এলেও তা একেবারে নির্মূল হয়েছে- এমনটা বলা যাবে না। মাঝে-মধ্যেই বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নব্য জেএমবি, আল্লার দল অথবা নতুন কোনো নামে জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের ধরপাকড়ের খবর পাওয়া যায়।
বর্তমান সরকার ধর্মীয় উগ্রপন্থাসহ সব রকম জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্র মতবাদের কোনো স্থান নেই। প্রকৃতপক্ষে জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের হাত ধরে দেশে ধর্মীয় রাজনীতি ও জঙ্গিবাদের উদ্ভব ঘটে। একাত্তরে পরাজিত হলেও পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক শাসনপুষ্ট সরকারগুলোর সহায়তায় দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গি কার্যক্রমের বিকাশ ঘটতে থাকে। আশার কথা এই যে, দেশের মাটিতে তা কখনই শিকড় গেড়ে বসতে পারেনি এবং জনসমর্থন পায়নি। তবে এতে আত্মপ্রসাদের কিছু নেই। দেশীয় জঙ্গিদের অস্ত্র ও অর্থের উৎসসহ উৎসাহদাতা, মদতদাতাসহ আন্তর্জাতিক যোগাযোগের বিষয়টি প্রতিনিয়ত নজরদারির দাবি রাখে। জঙ্গি সন্ত্রাসীরা শুধু অস্ত্র ও বোমাই নয়, প্রযুক্তি ব্যবহারেও দক্ষ। সে ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে টেক্কা দিতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও সর্বদাই সতর্ক ও তৎপর থাকতে হবে।