ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১২ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

বিচিত্র প্রতারণার ফাঁদ

-

প্রকাশিত: ২০:২২, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বিচিত্র প্রতারণার ফাঁদ

সম্পাদকীয়

ডিজিটাল প্রতারকরা বিচিত্র সব প্রতারণার ফাঁদ পেতে অসতর্ক অসচেতন লোকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। বেশির ভাগ সময়েই এই অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে বিদেশে। সম্প্রতি গণমাধ্যমে এ ধরনের কয়েকটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে এবং অ্যাপ খুলে প্রলোভনের জালে আটকে মানুষের পকেট থেকে টাকা বের করে আনা হচ্ছে। দেশে এখন অনলাইন জুয়াও বড় আকারে চলছে। বলা হচ্ছে, অভিযানে ক্যাসিনো ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলেও তার জায়গা নিয়েছে অনলাইন জুয়ার অ্যাপ। একের পর এক অ্যাপ বা ওয়েবসাইট খুলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন চক্র। ঘরে বসেই প্রলোভনে পড়ে ডিজিটাল মাধ্যমে অনলাইন জুয়া খেলছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এতে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে।

দেশে ধুরন্ধর ব্যক্তির যেমন অভাব নেই, তেমনি প্রতারণার বিচিত্র কৌশল প্রয়োগের ঠগবাজও দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রতারণার জন্য রীতিমতো তারা সৃজনশীল শক্তি প্রয়োগ করছে! মানুষ ঠকানোর জন্য এই বুদ্ধিমত্তা যদি সঠিক উপার্জনে ব্যয় হতো, তবে একদিকে যেমন প্রতারকরা সমাজে অসম্মানিত হতেন না, তেমনি সহজে মানুষকে বিশ^াস করে ফেলার মনমানসিকতা সম্পন্ন দুর্বলচিত্তের ব্যক্তিরাও রেহাই পেতেন। তাদের অর্থনাশ ঘটত না। মানুষের ভেতর লোভ ও লালসা রয়েছে বিস্তর। শর্টকাট রাস্তা ধরে ধনবান হওয়ার বাসনাও বিদ্যমান। রয়েছে অতিরিক্ত স্বার্থপরতা ও আত্মকেন্দ্রিকতা। এসব কিছুকেই পুঁজি করে থাকেন প্রতারকরা। দশজনকে টার্গেট করলে যদি তিনজনও ফাঁদে আটকা পড়ে যায়, তাহলেই কেল্লা ফতে। মানুষকে প্রতারণার জালে আটকে ফেলার জন্য নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার বিষয়টিও ইদানীং খুব দেখা যাচ্ছে। 
অ্যাপ খুলে ৬ মাসে ৩০০ কোটি টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছেন চীনের এক নাগরিক। চটকদার বিজ্ঞাপনে বলা ছিল, ‘বরগাটা’ নামের একটি অ্যাপ নামিয়ে সেখানে ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে দৈনিক ৮০০ থেকে ৫ হাজার টাকা আয় করুন।’ বিজ্ঞাপনটি দেখে ধাপে ধাপে অনেকেই টাকা বিনিয়োগ করেন। এরপর টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায় অ্যাপভিত্তিক ওই প্রতিষ্ঠান। অপরদিকে, ফেসবুকে একটি বিজ্ঞাপন দেখে ঢাকার এক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা (নারী) সাত কোটি টাকা দিয়েছেন সৌম্য চেহারার দরবেশরূপী এক ব্যক্তিকে, যিনি নিজেকে সৌদি আরবের একটি মসজিদের ইমাম বলে পরিচয় দিয়ে মানুষের সমস্যা সমাধানে কাজ করেন বলে জানান। আসলে তিনি এক মহাপ্রতারক।
মানুষের পকেট থেকে টাকা বের করা খুব কঠিন কাজ। ধূর্ত প্রতারকরা নানা ফন্দিফিকির করে এই কঠিন কাজটিই সহজ করে ফেলে। হ্যামিলনের বংশীবাদকের মতো এমন এক বাঁশির সুর তারা বাজায়, যাতে সম্মোহিত হয়ে তাদের অনুসরণ করে সাধারণ মানুষ। বাঁশির সেই সুরটি হচ্ছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ লাভের, প্রলোভনের। ফলে, সহজেই ফাঁদে পা দেয় এবং আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়। প্রতারক রাঘব বোয়ালরা আইনের জালে ধরা পড়ার পরই মানুষ বুঝতে পারে সে কিভাবে ঠকেছে। প্রতারকদের হাত থেকে বাঁচার দুটি বড় উপায় রয়েছে। এক. আত্মসংবরণÑ নিজেকে অহেতুক লোভমুক্ত রাখা। দুই, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয় উদ্যোগ। প্রতারকদের কঠোর শাস্তিবিধানে প্রয়োজনে নতুন আইনও করা যেতে পারে।

×