ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংকটে অপচয় নয়

বাবুল কান্তি দাশ

প্রকাশিত: ২১:০৬, ৭ জুন ২০২৩

সংকটে অপচয় নয়

গরমের আঁচ যত বাড়ছে, ততই তীব্র হচ্ছে পানির আকাল

গরমের আঁচ যত বাড়ছে, ততই তীব্র হচ্ছে পানির আকাল। পাড়ায়-পাড়ায় পানিকলের সামনে লাইনও দীর্ঘায়িত হচ্ছে ক্রমশ। অবশ্য নলবাহিত পানীয় পানি প্রকল্পের সুবিধে এখনো পৌঁছায়নি সর্বত্র। এসব জায়গায় ভরসা সেই নলকূপ। গরম বাড়লেই পানির স্তর তলানিতে পৌঁছায়। ফলে, পানি মেলাই ভার হয় তখন। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী পানীয় পানির পরিমাণ অনেকাংশে কমে গিয়েছে। অবাধে পানি ব্যবহার করলে ভবিষ্যতে পানি সংকট বৃদ্ধি পাবে তাই পানির অতিরিক্ত অপচয় রোধ করতে হবে। বোধশক্তি জাগ্রত হওয়ার পর থেকে জানি- ‘পানির অপর নাম জীবন’। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহের ওজনের ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশই হলো পানি।

শরীরকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখার জন্য তাই একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ২ থেকে ৪ লিটার পানি পান করা উচিত। উপযুক্ত পরিমাণ পানি খেলে মানুষের দেহে যে কোনো ধরনের সংক্রমণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। পানিকে আমরা ব্যবহার করি খুবই অবহেলার সঙ্গে। আসলে যে জিনিসটা আমরা খুব সহজে পেয়ে থাকি তার মর্যাদা দিতে পারি না। এখনো পর্যন্ত পানি আমাদের কাছে সহজলভ্য। কিন্তু সত্যিই কি তাই? পৃথিবীর লোক সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। জনসংখ্যা যতই বাড়ছে, পানির ব্যবহার ও ততোই বাড়ছে। তার সঙ্গে সঙ্গেই বেড়ে চলেছে পানির অপচয়। প্রাত্যহিক জীবনে সাধারণত তিন রকম ভাবে পানি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

কৃষিক্ষেত্রে, কলকারখানায় এবং মানুষের ব্যবহারিক জীবনে। কৃষি ক্ষেত্রে পানির অপচয় হয় সবচেয়ে বেশি। ক্ষেত্রমতে কোথাও কোথাও সংকটও দেখা দেয়। তাই প্রথমে যদি কৃষি ক্ষেত্রে পানির অপচয় বন্ধ করা যায়, তবে কিছুটা সাশ্রয় হবে। এই বেহিসাবি পানির অপচয় এর ফলে ধরিত্রী আজ চরম সংকটে। পৃথিবী আজ গরল কুম্ভে পরিণত হতে চলছে। ছোট বড় নালা, নদী, পুকুর, ঝিল বা ভূগর্ভস্থ পানি, যা প্রকৃতির অকৃপণ অবদান, ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। ভরে উঠছে লাগামছাড়া দূষণে।
সত্যিই যদি পানি ধরে রাখতে হয় তার একমাত্র উপায় হলো গাছপালা। এমন প্রত্যয় রাখার কারণ নেই, পানির প্রাচুর্য জগতের পানীয় পানির সব সংকটই নিবারণ করতে পারবে। কারণ পৃথিবীতে ব্যবহারযোগ্য পানির পরিমাণ মোট পানির তিন ভাগ। জনসংখ্যার বিস্ফোরণে ক্রমেই এই পানির পরিমাণ অপর্যাপ্ত হয়ে উঠছে। এর ওপর আরেকটি বাস্তবতা হলো, একদিন যাদের সৃষ্টি হয়েছে মৃত্যু তাদের অনিবার্য। এই বাস্তবতা পৃথিবী অথবা তার সূর্যের ক্ষেত্রে যেমন সত্য, তেমনি প্রযোজ্য পানির ছোট বড় বিভিন্ন ভার ও সাগর-মহাসাগরের ক্ষেত্রেও। মানুষের দৈনন্দিন জীবনের বিবিধ চাহিদার প্রয়োজনে, পরিবর্তিত জলবায়ুর প্রভাবে তাপমাত্রার ঊর্ধ্বগতির ফলে, ভূপৃষ্ঠের পানির বাষ্পীয়করণের মাত্রা বাড়ায়, বিশ্বের সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নদনদীর জলপ্রবাহ ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে অঞ্চলভেদে।

প্রবহমানতার এই আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে অনেক নদ-নদীর সাগর সঙ্গমও থমকে যাচ্ছে উল্লেখযোগ্য হারে। কেননা অতি ব্যবহারে নদ-নদীর পানির পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত কমতে থাকায় পানি প্রবাহের স্বাভাবিক চক্র বাধাগ্রস্ত হচ্ছে চলমান যাত্রাপথে নিয়মিত গতিময়তা পেতে। বছরের অধিকাংশ সময় পৃথিবীর বেশির ভাগ নদ-নদী পানিহীনতার কারণে শুষ্ক অবস্থাতেও থেকে যাচ্ছে। সমতল ভূমির মানুষদের চাইতেও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে পানি সংকট ক্রমাগত তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। 

বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম থেকে

×