ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অতিষ্ঠ জনজীবন

-

প্রকাশিত: ২০:৫৫, ৫ জুন ২০২৩

অতিষ্ঠ জনজীবন

সম্পাদকীয়

দেশে বিদ্যুৎ সংকট চরমে পৌঁছেছে। এক দিকে অসহনীয় ভ্যাপসা গরম, অন্যদিকে দফায় দফায় যখন তখন লোডশেডিং প্রতিনিয়ত অতিষ্ঠ ও অসুস্থ করে তুলছে জনজীবনকে। খুব শীঘ্রই বিদ্যুৎ সংকট ও লোডশেডিং কমার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। অন্যদিকে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আশু বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনাও নেই। তীব্র গরম ও লোডশেডিংয়ের কারণে রাজধানীবাসীর হাঁসফাঁস অবস্থা। গ্রামগঞ্জের দুরবস্থা সহজেই অনুমেয়। বর্তমানে মধ্যরাতেও উপদ্রব বেড়ে যায় লোডশেডিংয়ের। কেননা, তখন বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। অথচ উৎপাদন কম হয়।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বলছে, দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর মোট উৎপাদন সক্ষমতা ২৩ হাজার ৩৭০ মেগাওয়াট। জ্বালানির অভাবে সাড়ে ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না এখন। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়, যেগুলো প্রধানত জ্বালানি তেল, ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল নির্ভর। বাকি ১৬ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে ১২ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার মেগাওয়াট। গ্যাস ও কয়লা সংকটের কারণে কয়েকটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র আপাতত বন্ধ। ডলার সংকটে এলএনজি ও কয়লা সময়মতো আমদানি করা যাচ্ছে না। ফলে, রামপাল ও পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রও মাঝে মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়। দুটোই রয়েছে হুমকিতে।

বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে আরও অন্তত ১৫-২০ দিন লাগতে পারে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। জনগণকে বলা হয়েছে ধৈর্য ধারণের। প্রশ্ন হলো, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের জন্য যথাযথ প্রস্তুতির অভাব এবং অদক্ষতার দায় দেশের জনসাধারণকে বহন করতে হবে কেন? 
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র বিদ্যুৎ সংকট চলছে মে মাস থেকে। ঘূর্ণিঝড় মোখার মোকাবিলায় মাতারবাড়ির ভাসমান দুটি এলএনজি টার্মিনাল গভীর সমুদ্রে সরিয়ে নেওয়ার কারণে তা আরও তীব্র হয়েছে। অভ্যন্তরীণ মজুত থেকেও পর্যাপ্ত গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। সিএনজি স্টেশনগুলোতে চাপ কম থাকায় বন্ধপ্রায়। অনুরূপ হয়েছে কয়লার ক্ষেত্রেও। এমতাবস্থায় পরিবেশবিদরা যাই বলুক না কেন, দিনাজপুরের দীঘিপাড়া খনি থেকে অবিলম্বে কয়লা উত্তোলন এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে এর জরুরি ব্যবহার অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। সরকার এ বিষয়ে ত্বরিত পদক্ষেপ নেবে বলেই প্রত্যাশা।
চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরাবিশ্বে কয়লাসহ  জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পেলে সরকারকে বাধ্য হয়ে করতে হয় লোডশেডিং। বাসাবাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দেওয়াসহ ব্যাহত হয় কলকারখানার উৎপাদন। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া পার্টনারশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের এই মেগা প্রকল্প রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে কয়লা সংকটে, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। অথচ ২০২৩ সালের জুনে কেন্দ্রটি দ্বিতীয় ইউনিট থেকে আরও বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। অনুরূপ হয়েছে পায়রায়।

বারবার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় যন্ত্রপাতিসহ রক্ষণাবেক্ষণে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জাতীয় অর্থনীতিও। কয়লা আমদানিতে প্রয়োজন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার না দেওয়ায় কয়লা এলএনজিসহ অন্যবিধ জ্বালানি আমদানি করা যাচ্ছে না নিয়মিত। সে অবস্থায় বিদ্যুৎ সমস্যায় আশু সমাধানে দেশীয় কয়লাখনির মজুত ব্যবহারের বিকল্প নেই।

×