
৭০ বছর পর নতুন রাষ্ট্রপ্রধানের অভিষেক প্রত্যক্ষ করেন ব্রিটিশরা
৭০ বছর পর নতুন রাষ্ট্রপ্রধানের অভিষেক প্রত্যক্ষ করেন ব্রিটিশরা। এ উপলক্ষে শহর ও নগরজুড়ে রাস্তাগুলো পতাকা ও রংবেরঙের কাপড়ে সাজানো হয়েছিল, দোকানগুলো স্মৃতিচিহ্ন ও অভিনব পোশাকে ভরে গিয়েছিল এবং নাগরিকদের রাজার অভিষেক উদ্যাপনের জন্য দেশটিতে অতিরিক্ত একদিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে রাজার অভিষেক নিয়ে অনেকেরই মাথাব্যথা ছিল না। আবার কারও কারও মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে
রাজতন্ত্র সারা বিশ্বের সামনে ব্রিটেনের অন্যতম প্রধান প্রতীক। ইতিহাসের এক হাজার বছরেরও বেশি সময়ে এই রাজতন্ত্রকে ব্রিটেনের সফট পাওয়ারের সবচেয়ে শক্তিশালী উৎস বলে বিবেচনা করা হয়। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যু যেভাবে বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণ করেছে এবং বিশ্বজুড়ে মিডিয়া তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ও নতুন রাজা তৃতীয় চার্লসের উত্তরাধিকারের প্রক্রিয়াটিকে যেভাবে সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করেছে তাতে রাজতন্ত্রের আকর্ষণ করার ক্ষমতাটি স্পষ্ট দেখা গেছে।
গত বছর রানীকে বিদায় জানাতে আসা জনতার দীর্ঘ লাইন ব্রিটিশ নাগরিকদের মধ্যে দ্বিতীয় এলিজাবেথ এবং রাজতন্ত্রের প্রবল জনপ্রিয়তার সাক্ষী হয়ে রয়েছে। এমনটা অবশ্য প্রত্যাশিতই ছিল। যেমন, মার্চের মাঝামাঝিতে ব্রিটেনে ইউগভ নামে জরিপ সংস্থার এক সমীক্ষায় দেখা গেছে উত্তরদাতাদের মধ্যে ৮১ শতাংশের কাছে রাজশাসকের ভাবমূর্তি ছিল ইতিবাচক। সে কারণেই এত জনপ্রিয়তা এবং হাজার বছরের ইতিহাসের জন্য ব্রিটেনকে এখন রাজতন্ত্র ছাড়া কল্পনা করাও কঠিন। কিন্তু ১৭শ’ শতকে এমনও এক সময় ছিল যখন ইংল্যান্ডে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। সেটি ছিল রাজা প্রথম ও দ্বিতীয় চার্লসের শাসনের মাঝখানের এক দশক।
কাকতালীয়ভাবে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের উত্তরাধিকারী প্রিন্স চার্লস এখন রাজা হয়ে তৃতীয় চার্লস নাম গ্রহণ করেছেন। ইংল্যান্ডে ১৬৪০-এর দশকে রাজা প্রথম চার্লস এবং পার্লামেন্টের মধ্যে বাধে বিরোধ, যার পরিণামে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ ব্লেয়ার ওয়ার্ডেন সেই সময় সম্পর্কে অনেক লিখেছেন এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তার কর্মজীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন। তিনি বলছেন, সেই পরিস্থিতিতে তিনটি ভিন্ন সংকট একই সঙ্গে দেখা দিয়েছিল। রাজা প্রথম চার্লস, যিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হতে চেয়েছিলেন। তার মধ্যে একটি ছিল সাংবিধানিক সংকট। রাজা প্রথম চার্লস ফ্রান্স এবং স্পেনের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী রাজাদের স্টাইলে শক্তিশালী হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু সেটা ছিল এমন এক সময় যখন তার অবস্থান ছিল খুবই দুর্বল। রাজকার্য চালানোর জন্য তার কাছে পর্যাপ্ত অর্থও ছিল না। অর্থের জন্য তিনি নির্ভর করতেন জমিদারদের আয়ের ওপর। কিন্তু তাদের দেয়া অর্থের পরিমাণ বাড়ছিল না। ওদিকে ইংল্যান্ডে তখন মূল্যস্ফীতিও দ্রুত বাড়ছিল। কারণ আমলাতন্ত্রের কাঠামো বাড়ছিল। ফলে তাদের পেছনে ব্যয়ও বাড়ছিল। তহবিল সংগ্রহের জন্য রাজাকে নির্ভর করতে হতো আইনসভার ওপর এবং আইনসভা যখন অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে অস্বীকার করল তখন সংসদকে পাশ কাটিয়ে রাজা কর বাড়ানোর চেষ্টা করেন। এর ফলে তৈরি হয়েছিল এক সাংবিধানিক সংকট, ব্যাখ্যা করছেন অধ্যাপক ওয়ার্ডেন। একই সময় স্কটল্যান্ডের ক্যাথলিক গির্জার ওপর অ্যাংলিকান প্রটেস্টান্ট রীতিনীতি চাপিয়ে দেওয়ার প্রশ্নে রাজা প্রথম চার্লস জেদ ধরেছিলেন। ফলে দেখা দেয় একটি ধর্মীয় সংকট।
স্কটল্যান্ডের অধিবাসীরা এটার বিরুদ্ধে এমন প্রতিরোধ তৈরি করেছিল যে, পরে শুরু হয়েছিল তথাকথিত বিশপদের যুদ্ধ। তৃতীয়টি ছিল একটি ব্রিটিশ সংকট। কারণ, ইংল্যান্ডের রাজারা একই সঙ্গে স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডেরও শাসক ছিলেন। ১৭শ’ শতকের শুরুতে ইংরেজরা আয়ারল্যান্ডে জমির মালিকানা পাচ্ছিলেন। এর ফলে তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় লোকজন বিদ্রোহ করতে শুরু করে। ফলে সব মিলিয়ে ১৬৪০ সালের দিকে এসব রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংকট ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের মধ্যে সংকটের সঙ্গে যুক্ত হয়, বলছিলেন অধ্যাপক ওয়ার্ডেন। রাজা প্রথম চার্লসের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টের বিজয়ের সঙ্গে সেই গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটেছিল। কিন্তু পরে যা ঘটেছিল তার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিল না।
১৯৫৩ সালের পর ব্রিটেনের প্রথম রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ওই সময় চার্লসের মা রানী এলিজাবেথকে রাজমুকুট পরানো হয়েছিল। গত বছর সেপ্টেম্বরে ৯৬ বছর বয়সে এলিজাবেথের মৃত্যু হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রাজা হন চার্লস। রাজ্যাভিষেক প্রয়োজনীয় না হলেও এর প্রতীকী গুরুত্ব হয়েছে। এমন সময় এই রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন ব্রিটেনজুড়ে জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে সংকট রয়েছে। অনেকে সমালোচনা করে আধুনিক যুগে এমন আয়োজনের প্রশ্ন তুলছেন। যদিও এবারের রাজ্যাভিষেক ৭০ বছর আগের রাজ্যাভিষেকের তুলনায় অনেক ছোট আকারে আয়োজন করা হয়েছে। ৬ মে ২০২৩-এর রাজ্যাভিষেকে রাজা চার্লসের প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার ঘোষণা করেন অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের নেতারা।
এর আগে চার্লস কমনওয়েলথ অব নেশন-এর নেতাদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছেন। স্বেচ্ছাসেবী এই সংস্থাটি ৫৬টি রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত। এটির প্রধান হলেন ব্রিটিশ রাজা। অস্ট্রেলিয়া ও কানাডাসহ যে ১৪টি দেশের তিনি রাজা সেসব দেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাজ প্রতিনিধিদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ব্রিটিশ রাজা চার্লস। রাজপরিবারের ভক্তরা দ্য মল নামের প্রশস্ত পথে জড়ো হয়েছিলেন। এই পথটি বাকিংহাম প্যালেসে পৌঁছেছে। এই আয়োজনকে ঘিরে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা লন্ডনে হাজির হয়েছিলেন। মার্কিন ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে টুইটারে লিখেছেন, ঐতিহাসিক মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করা গর্বের বিষয়। শেষ পর্যন্ত ব্রিটেনের রাজা হিসেবে শপথ নিয়েছেন তৃতীয় চার্লস।
যুক্তরাজ্যের রাজতন্ত্রের ৪০তম সিংহাসন আরোহী হিসেবে ৬ মে ২০২৩ শনিবার তিনি শপথ নেন। একই সঙ্গে রাজ্যাভিষেক হয়েছে চার্লসের স্ত্রী কুইন কনসর্ট ক্যামিলারও। ক্যান্টারবুরির আর্চবিশপ জাস্টিন ওয়েলবি রাজা চার্লসের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, রাজ্যাভিষেক শপথের আইনি প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। রাজাকে আর্চবিশপ বলেন, নতুন রাজা যেন তার শাসনকালে আইনের শাসন ও চার্চ অব ইংল্যান্ডের মর্যাদা সমুন্নত রাখেন। রাজা তৃতীয় চার্লস পবিত্র গসপেলে হাত রেখে শপথ নেন এবং আইনের শাসন ও চার্চ অব ইংল্যান্ডের মর্যাদা সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার করেন। এ ছাড়া একজন একনিষ্ঠ প্রোটেস্ট্যান্ট হিসেবে দ্বিতীয় শপথও নেন রাজা তৃতীয় চার্লস।
এর আগে রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যুক্তরাজ্যের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে পৌঁছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস এবং তার স্ত্রী কুইন কনসর্ট ক্যামিলা। বাকিংহাম প্যালেস থেকে একটি ঘোড়ার গাড়িতে করে শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে পৌঁছান তারা। ১৯৩৭ সালের পর এটি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হওয়া প্রথম অভিষেক অনুষ্ঠান। রঙিন পর্দায় এবং অনলাইনে সম্প্রচার হওয়া প্রথম ব্রিটিশ রাজ্যাভিষেকও এটি। রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠান হলো ধর্মীয়ভাবে রাজাকে স্বীকৃতি প্রদানের অনুষ্ঠান। শনিবারের দুই ঘণ্টার ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার বেশিরভাগেরই নেতৃত্ব দেন ক্যান্টারবুরির আর্চবিশপ জাস্টিন ওয়েলবি। এ ধর্মীয় স্বীকৃতির রীতিটি ১০৬৬ সাল থেকে চলে আসছে। তবে পুরনো রীতিগুলোর অনেকগুলো বহাল থাকলেও এবার চার্লসের রাজ্যাভিষেকে কিছু ব্যতিক্রম দৃশ্যও দেখা যায়। যেমন যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে এবারই প্রথম কোনো রাজ্যাভিষেকে নারী বিশপেরা হাজির ছিলেন।
ব্রিটিশ রাজা হওয়ার সুবাদে চার্চ অব ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ গভর্নর চার্লস। তবে তার মা রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজ্যাভিষেকের সময়ের তুলনায় যুক্তরাজ্য এখন ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিকভাবে অনেক বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ। এ অভিষেক অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তারা বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও রাজা-রানীদের কাতারে বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। জীববৈচিত্র্য ও টেকসই উন্নয়নের প্রতি চার্লসের আগ্রহের প্রতিফলন ঘটে এ অনুষ্ঠানে। এদিকে রাজার আমন্ত্রণে এ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
৭০ বছর পর নতুন রাষ্ট্রপ্রধানের অভিষেক প্রত্যক্ষ করেন ব্রিটিশরা। এ উপলক্ষে শহর ও নগরজুড়ে রাস্তাগুলো পতাকা ও রংবেরংয়ের কাপড়ে সাজানো হয়েছিল, দোকানগুলো স্মৃতিচিহ্ন ও অভিনব পোশাকে ভরে গিয়েছিল এবং নাগরিকদের রাজার অভিষেক উদ্যাপনের জন্য দেশটিতে অতিরিক্ত একদিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে রাজার অভিষেক নিয়ে অনেকেরই মাথাব্যথা ছিল না। আবার কারও কারও মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। ইউগভের সাম্প্রতিক এক জরিপে বলা হয়েছে, ৬৪ শতাংশ ব্রিটিশ এই অভিষেক অনুষ্ঠান সম্বন্ধে খুব বেশি ভাবেননি। যেখানে ৪৮ শতাংশ বলেছেন যে, তাদের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠান উদ্যাপনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা নেই।
চার্লস ও রাজকীয় বিষয়াদি সম্বন্ধে লন্ডনের ক্যারিবিয়ান কমিউনিটির কয়েকজনের অভিমত তুলে ধরা যেতে পারে। ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ, নিপীড়ন ও লুটপাটের কারণে দুর্দশাগ্রস্ত ইতিহাসের অংশ ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দেশগুলোর মানুষ। এমনকি ওই অঞ্চলের মানুষ এখন আর ব্রিটিশ রাজাকে নিজেদের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দেখতে চায় না। ব্রিটিশদের ইতিহাস ঔপনিবেশিকতা, বর্ণবাদ, দাসত্ব ও দুর্নীতির ওপর ভিত্তি করে রচিত। দুর্ভাগ্যবশত ইতিবাচক তেমন কিছু নেই বললেই চলে। ক্যারিবিয়ান দেশগুলোর রাজতন্ত্র বিলোপ সম্বন্ধে দর্শন বলছে, তাদের বন্ধন ছিন্ন করতে হবে।
ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের মানুষ হিসেবে তাদের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, তারা রাজতন্ত্র থেকে স্বাধীন হয়ে ওঠে। এটি গুরুত্বপূর্ণ যে, তাদের সামরিক বাহিনীকে তাদের দেশ থেকে বের করে নিতে বলা হয়েছে। সেখানে তাদের কোনো কাজ নেই। চার্লস সম্পর্কে তাদের মূল্যায়ন হচ্ছে, তিনি তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চান। তিনি আরও আধুনিক হতে চান। কিন্তু জানি না তার আসলেই অনেক শক্তি বা ওজন আছে কি না তার মা রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মতো। রানীর নীরবতা এবং তার নাম প্রকাশ না করার কারণ তাকে আরও রহস্যময়তা দিয়েছে। যদি কোনো সমস্যা হতো তবে তিনি সর্বদা তার মুখ বন্ধ রাখতেন এবং মর্যাদাপূর্ণ উপায়ে মোকাবিলা করতেন।
এটা এখন একটি ভিন্ন প্রজন্ম। রাজা চার্লস নতুন এক যুগে প্রবেশ করছেন। দাসত্বের কারণে তিনি রাজতন্ত্রের পক্ষেও নন বলেও জানান। দাসত্বের সময় থেকে এখনো প্রচুর অর্থ উপার্জন করা হচ্ছে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সমস্যা তারা আক্রমণ এবং লুণ্ঠন করেছিল। যে ইতিহাস এতদিন লুকিয়ে ছিল সে সম্পর্কে তরুণ প্রজন্ম একটু বেশিই জানে। রাজতন্ত্রের প্রতি নতুন প্রজন্মের আস্থা নেই জানিয়ে অনেকে বলেন, তারা রাজতন্ত্রের কথা ভাবে না। কারণ রাজতন্ত্র তাদের মতো দরিদ্র মানুষের জন্য নয়। এটা সময়ের অপচয় মাত্র। রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে যুক্তরাজ্য এই সময় প্রথমবারের মতো আবির্ভূত হয়েছিল।
কারণ প্রজাতান্ত্রিক সেনাবাহিনী আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ড জয় করেছিল এবং এই দুটি দেশ প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে মিলিত হয়েছিল। তাই যদিও ওই রাজনৈতিক কাঠামোটি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি তবুও ওই সময়ের অশান্ত পরিস্থিতি এবং কট্টরবাদের কারণে যে পরিবর্তনগুলো সম্ভব হয়েছিল তা পরবর্তী দশকগুলো, এমনকি শতাব্দীজুড়ে ব্রিটিশ দ্বীপরাষ্ট্রের বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। ওই সময়টি আরেকটি বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেছিল। যদিও রাজা দ্বিতীয় চার্লসের শাসনকালে রাজতন্ত্রের পুনরুদ্ধার ঘটেছিল রাজা প্রথম চার্লসের মতোই, তবুও ১৬৮৮ সালে এমন কিছু রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছিল যাতে সংসদের সঙ্গে পরামর্শ করার প্রশ্নে রাজাকে বাধ্য করার প্রথা চালু হয়।
এর মধ্য দিয়ে শাসনব্যবস্থায় সত্যিকার পরিবর্তন ঘটেছিল। যাই হোক, রাজা তৃতীয় চার্লস নতুন এক যুগে প্রবেশ করছেন। জানি না তার একইরকম গুরুত্ব ও সম্মান আছে কি না, যা রানীর ছিল। তারপরও সময়ই বলে দেবে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ভবিষ্যৎ রাজা তৃতীয় চার্লস কোনদিকে নিয়ে যান।
লেখক : গবেষক, লন্ডন প্রবাসী