ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আর কত জীবনহানি

-

প্রকাশিত: ২০:৪০, ২১ মার্চ ২০২৩

আর কত জীবনহানি

সম্পাদকীয়

দেশে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা, জীবন ও সম্পদহানির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে তেমন উদ্যোগ-আয়োজনও দৃশ্যমান নয়Ñ না সরকারি না বেসরকারি। রবিবার ভোরে চালক জাহিদ হাসান খুলনা থেকে ইমাদ পরিবহনের একটি বাস নিয়ে রওনা দেন ঢাকার উদ্দেশে। মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুরে পদ্মা সেতু এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে যায় বাসটি ১০০ ফুট নিচে। আন্ডারপাসের দেওয়ালের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা লেগে দুমড়ে-মুচড়ে যায় যানটি।

ঘটনাস্থলেই নিহত হন চালক, সহকারী, সুপারভাইজারসহ ১৯ যাত্রী। আহত ১২ জনকে ভর্তি করা হয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিআরটিএর ভাষ্যে জানা যায়, চালক জাহিদ হাসান গত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৩০ ঘণ্টার বেশি একটানা বাস চালিয়ে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত শরীর নিয়ে ঘুমচোখে বাসটি চালাচ্ছিলেন। দ্রুত গতিসহ হঠাৎ চাকা ফেটে যাওয়াও দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। জেলা প্রশাসন ও হাইওয়ে পুলিশ দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। মামলা দায়ের করা হয়েছে বাসের মালিকের বিরুদ্ধে।

বিআরটিএ বলেছে, ইমাদ পরিবহনের বাসটির চলাচলের অনুমতি ছিল না। ফিটনেস সনদের মেয়াদও ফুরিয়ে গিয়েছিল। এর আগেও বাসটি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে, যাতে মারা যান তিনজন। তার মানে, এতকিছুর পরেও বাসটি অবৈধভাবে চলাচল করছিল সড়কে প্রশাসনের নাকের ডগায়। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, বিআরটিএ, ট্রাফিক বিভাগ সর্বোপরি বাস-মালিক পরিবহন সমিতি কি করে? বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, তারা কোনো আইন-কানুন বা নিয়মনীতি বা বিধিমালার তোয়াক্কাই করে না। রাজপথে রক্ত ঝরায় তাদের যেন যায় আসে না কিছুই। ঢাকাসহ সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বাড়ছেই। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? সড়কে মৃত্যুর মিছিল কি বাড়তেই থাকবে?
দেশের ৯০ শতাংশ মানুষই ট্রাফিক আইন মানে নাÑ এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্যটি সবিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ৮৪ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে দ্রুতগতির কারণে। সেক্ষেত্রে ৯০ শতাংশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য প্রায় অসম্ভব কাজ। উল্লেখ্য, বেপরোয়া বাসের চাপায় রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানী ও আশপাশের লাখো শিক্ষার্থী রাজধানীতে রাস্তায় নেমে এসে বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে।

সর্বস্তরের মানুষ এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও এই আন্দোলনের সারবত্তা ও যৌক্তিকতা উপলব্ধি করে তাতে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানায়। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্যক উপলব্ধি করে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮-এর অনুমোদন দেন। এও বলেছেন দূরপাল্লার বাসে চালককে যথাযথ বিশ্রাম দেওয়ার জন্য। 
বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে, পরিস্থিতির উন্নতি তো দূরের কথা, ন্যূনতম শৃঙ্খলা নেই কোথাও। বাস্তবায়িত হতে পারেনি আইনও। বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে রীতিমতো হতাশা প্রকাশ করে ডিএমপি কমিশনার বলেছেন, আগামীতে ট্রাফিক পুলিশের অভিযান আরও জোরালো ও বেগবান করা হবে। সড়কে যানবাহনের গতি নজরদারি করা হবে কঠোরভাবে। নেওয়া হবে ট্রাফিক ব্যবস্থা যথাযথ ও  টেকসই করার, যাতে পরিবহন খাতসহ শৃঙ্খলা ফিরে আসে সড়ক-মহাসড়গুলোতে।

এর পাশাপাশি দূর করতে হবে দীর্ঘদিন থেকে পরিবহন খাতে বিরাজমান অরাজকতা ও নৈরাজ্য। সরকার, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ, ট্রাফিক বিভাগসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, পৌর কর্তৃপক্ষ সর্বোপরি পরিবহন শ্রমিক ও মালিক সমিতি একসঙ্গে বসে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সমাধানের পথ বের করতে না পারলে সড়কের নৈরাজ্য দূর হবে না।

×