ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মৃত্যুঞ্জয়ী বীর আতিকউল্লাহ খান মাসুদ

প্রকাশিত: ২০:৩৮, ২১ মার্চ ২০২৩

মৃত্যুঞ্জয়ী বীর আতিকউল্লাহ খান মাসুদ

সম্পাদকীয়

আজ দৈনিক জনকণ্ঠ সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিকউল্লাহ খান মাসুদ (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)-এর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ছিলেন দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক, মুদ্রাকর ও প্রকাশক এবং গ্লোব-জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের চেয়ারম্যান। জীবনের শেষ দিনও তিনি কাজ শেষে জনকণ্ঠ প্রেসে না যাওয়া পর্যন্ত অফিসে উপস্থিত ছিলেন। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই ২০২১-এর ২২ মার্চ সোমবার ভোরে শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় তাঁকে বাসভবনের নিকটস্থ একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুঃসংবাদটি দেন। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগতে তাঁর নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হবে চিরদিন। কারণ, তিনি এমন ভূমিকা পালন করেছেন যা অন্য কোনো সম্পাদক ও সংবাদপত্র উদ্যোক্তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। আত্মপ্রকাশকালে দৈনিক জনকণ্ঠ সত্যিকারার্থেই হয়ে ওঠে জনতার কণ্ঠ। সামরিক স্বৈরাচারের সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বুকে নিয়ে গণমাধ্যমকে এগিয়ে নেওয়া ছিল কঠিন কাজ।

দেশে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প যখন সব শুভবোধকে গ্রাস করে ফেলেছিল সেই সময়ে অকুতোভয় গণমাধ্যম হিসেবে দৈনিক জনকণ্ঠ অত্যন্ত প্রগতিশীল ভূমিকা রেখেছিল তাঁরই প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে। 
প্রায় তিন দশক আগে যখন যাত্রা শুরু করেছিল জনকণ্ঠ, তখন একযোগে ঢাকাসহ পাঁচটি অঞ্চল থেকে মুদ্রণ ও প্রকাশ হতো জনকণ্ঠ। ফলে রাজধানীর সংবাদপত্র পাঠকের মতোই প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাঠকের হাতেও সাত সকালেই পৌঁছে যেত জনকণ্ঠ। তখন দেশ ডিজিটাল ছিল না। ছিল না ইন্টারনেট। এমনকি কম্পিউটারের ব্যবহারও ছিল সীমিত। এমন একটি সময়ে দেশের নানা স্থান থেকে একযোগে দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাশের মৌলিক চিন্তা এবং তা বাস্তবায়নের ভেতর দিয়ে সম্পাদক আতিকউল্লাহ খান মাসুদ অনন্য অদ্বিতীয় ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।

এ থেকে তাঁর আধুনিক মানস এবং গণমাধ্যমের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা তথা দেশপ্রেম আরও একবার সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। দুঃখজনক হলো, ‘ওয়ান ইলেভেন’ সরকার তাঁকে ৪২টি মিথ্যা মামলায় ২২ মাস ১২ দিন কারান্তরীণ রাখে অন্যায়ভাবে। পরে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া হয়।  
এমন একজন সম্পাদকের কখনই মৃত্যু হতে পারে না। তিনি বেঁচে থাকবেন তাঁর যুগান্তকারী ভূমিকা ও অবদানের জন্য। একাত্তরে তিনি যেমন ছিলেন একজন নির্ভীক বীর মুক্তিযোদ্ধা, তেমনি স্বাধীন দেশেও তিনি সাহসী কর্মবীর হিসেবেই তাঁর উজ্জ্বল ভূমিকা রেখে গেছেন। আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করি। একইসঙ্গে আমরা গ্লোব-জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের শোকসন্তপ্ত কর্মীবৃন্দ তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি জানাই আন্তরিক গভীর সমবেদনা। মহান সৃষ্টিকর্তা যেন তাঁদের এই শোক বহন করার শক্তি দেন।

×