ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নয় সময়ের অপচয়

নাভিদ তাসনিম

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ২৫ জানুয়ারি ২০২৩

নয় সময়ের অপচয়

ঘণ্টার পর ঘণ্টা উদ্দেশ্যবিহীনভাবে হোমফিড স্ক্রল করাই ডুমসার্ফিং বা ইনফিনিট স্ক্রল

ঘণ্টার পর ঘণ্টা উদ্দেশ্যবিহীনভাবে হোমফিড স্ক্রল করাই ডুমসার্ফিং বা ইনফিনিট স্ক্রল। বিশেষজ্ঞমতে বর্তমানে একজন সোশ্যাল-মিডিয়া ব্যবহারকারী গড়ে ১৯ সেকেন্ড পরপর একটি ফিড থেকে অন্য ফিডে মুভ করছেন- অর্থাৎ মিনিটে ৫টি ফিডের সম্মুখীন হচ্ছেন। এখন এতে ক্ষতি কি? অন্যতম ক্ষতি হলো অনিয়ন্ত্রিত ডোপামিন হান্ট। খুশি বা সুখানুভূতির সঙ্গে ডোপামিন হরমোন জড়িত। আনন্দদায়ক যেকোনো কিছুর সম্মুখীন হলে মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসরিত হয়, এবং ব্রেন পুনরায় সেটির পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে সেই সুখ আবার পেতে চায়।

ডুমসার্ফিং-এর মাধ্যমে মানবমস্তিষ্ক অবচেতনমনে একের পর এক কন্টেন্টে সেই ডোপামিনজনিত সুখকেই বারবার খুঁজে চলে- যে প্যাটার্নকে কাজে লাগিয়েই বিনোদন সাইটগুলো ক্রমাগত নিজেদের সাইটকে আকর্ষণীয় করে চলেছে। এর কারণেই ইউটিউবে একটি ভিডিওর পর আরেকটি সক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যায়, ফেসবুকে নানারকম ভিডিও হোমফিডে আসতেই থাকে- কারণ দর্শকের মনোযোগ ধরে রাখাই ডিজিটাল যুগের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

ক্ষতিকারক দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মানসিক বিকৃতি এবং সময়ের অপচয়। সময় কিভাবে অপচয় হয় সেটা সচেতন পাঠকমাত্রেরই অনুমেয়; আর ক্রমাগত এই ডোপামিন হান্টের মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী মানসিক অবসাদের সৃষ্টি হয়। একটা নির্দিষ্ট সময় পর অনুধাবন করা সম্ভব হয়- যে আগে একটি কন্টেন্টই যত সহজে খুশি জোগাত, এখন তেমন দশটি দেখলেও সেই সুখানুভূতি আর জাগছে না। স্ক্রিনের নীল আলোয় চোখের উপর ক্ষতিকর প্রভাবের পাশাপাশি ডিপ্রেশন এবং মানসিক অবশতারও সৃষ্টি হয়। সঙ্গে বিনোদনে অশালীনতার অন্তর্ভুক্তিতে মানসিক বিকৃতির প্রভাব সমাজে বৃদ্ধি পাচ্ছে আশঙ্কাজনকভাবে।
এর উত্তরণে সকল প্রযুক্তিনির্ভর বিনোদন কঠোর দ্বিপাক্ষিক মনিটরিংয়ের আওতায় আনা জরুরি। প্রথমত, অশালীন কন্টেন্ট নির্মাতা-প্রচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার পাশাপাশি সোশ্যাল সাইটগুলোকে স্বীয় মনিটরিং বাড়াতে বাধ্য করতে হবে। দেশে ফেসবুক, ইউটিউব এর বৃহৎ বাণিজ্যবাজার থাকায় তাদেরকে অবশ্যই দেশীয় শর্তাধীন করা সম্ভব। আর দ্বিতীয়টি হলো, পারসোনাল মনিটরিং বাড়ানো।

৩০ সেকেন্ডের রিল দেখতে গিয়ে যে কেবল ৩০ সেকেন্ড ব্যয়ই হয় না- এটা মানবমস্তিষ্কে সহজে বোধগম্য হয় না। তাই দিনের কতটা সময় অনলাইনে কাটানো হচ্ছে তার একটা ট্র্যাক রাখা- প্রয়োজনে একদিন ডায়েরিতে নোট নিয়ে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। ছোট্ট একটা কাজ করতে হবে: কাছে থাকবে ডায়েরি আর কলম, কখন ইন্টারনেটে ঢুকলাম এবং কখন বের হলাম- একদম ঘণ্টা-মিনিটসহ ডায়েরিতে লিখে ফেলতে হবে। একদিন নোট নিলেই প্রকৃতপক্ষে কতটুকু সময় ব্যয় করতে হবে আর কতটা বাঁচাতে হবে- ব্যবহারকারী নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

একইসঙ্গে, সুস্থ-সাংস্কৃতিক বিনোদনচর্চার প্রসার বাস্তব এবং অনলাইন- উভয়ক্ষেত্রেই বাড়াতে হবে। একটা সময় ছিল, যখন আমরা অনলাইন বিনোদন বাদেই প্রাত্যহিক খেলাধুলা, বইপড়ার মতো নানা সাংস্কৃতিক বিষয়ে আগ্রহী ছিলাম। কেন সে যুগ হারালাম, এবং পরিবর্তিত বিনোদন মাধ্যম আমাদের জন্য কতটুকু সুফল বয়ে আনছে- এই পর্যালোচনা আমাদের স্বীয় স্বার্থ সংরক্ষণে করতেই হবে।
কুষ্টিয়া থেকে

×