ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

সুদের হার

-

প্রকাশিত: ২০:২২, ১৭ জানুয়ারি ২০২৩

সুদের হার

সম্পাদকীয়

চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংক আমানতে সুদের সীমা বাতিল এবং ভোক্তা ঋণের সুদহার বাড়ানোর নীতি গৃহীত হওয়ায় এই মুদ্রানীতিকে সতর্ক ও সংকুলানমুখী হিসেবে অভিহিত করা চলে। এমনটাই প্রত্যাশিত ছিল। বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের অর্থনীতিও যখন করোনার ভয়াবহতা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছিল, আমদানি, রপ্তানি, অভ্যন্তরীণ চাহিদা সবটাতে গতিসঞ্চার হয়েছিল, তখনই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দামামা সব ওলট-পালট করে দেয়।

বিশ্ববাজারে আমদানি পণ্যের দাম রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়েছে। যার প্রভাব অভ্যন্তরীণ বাজারে পড়তেও বাধ্য। দেশের মূল্যস্ফীতির পরিমাণ বিশ্ব বাজারের ন্যায় লক্ষ্যমাত্রা থেকে ছাড়িয়ে যায়। অর্থনীতির স্বাভাবিক সূত্র অনুযায়ী, আমানতের সুদের হার গড় মূল্যস্ফীতির ওপরে থাকা বাঞ্ছনীয়। তাই আমানতের সুদের হার আর ৬ শতাংশে বেঁধে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না।

আমানতের সুদহারের সীমা উঠিয়ে নিলে সংগত কারণেই ঋণের সুদহারও আর ৯ শতাংশে বেঁধে রাখা যাবে না।এ জন্য দুটোতেই (৬-৯ হার) পরিবর্তন আনার বিষয়ে আলোচনা চলছিল। নতুন মুদ্রানীতি সেই আলোচনা-পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণেরই ফল। প্রচলিত অর্থশাস্ত্র মতে, বাজারে তারল্য বা অর্থের সরবরাহ বেশি থাকলে বাজারে সুদের হার কমবে। মানুষের হাতে টাকার সরবরাহ বেশি হলে ব্যাংক তুলনামূলক কম সুদে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে।
বাংলাদেশে সরকার তথা নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক বেঁধে দেওয়া সুদহার প্রবর্তিত হয়েছিল দুই বছরেরও বেশি আগে। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়া এ সুদহার নয়-ছয় সুদহার নামেই পরিচিতি পায়। বাজার ব্যবস্থার ওপর ছেড়ে না দিয়ে যে পদ্ধতিতে ওই সুদহার নির্ধারিত হয়েছিল, তা অর্থনীতির মূল সূত্র বহির্ভূত হলেও সে সময়ে মানুষের কাছে প্রশংসিত হয়েছিল। ২০২০ সালের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল দেশ ছাপিয়ে বহির্বিশ্বেও আলোচিত।

পেছন ফিরে পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলেই দেখা যাবে, সে সময়ে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন তথা জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় আট শতাংশের কাছাকাছি এবং তা কয়েক বছর ধরেই ধারাবাহিকভাবে অর্জিত হচ্ছিল। সরকারি উদ্যোগে যেমন বিভিন্ন মেগা প্রজেক্ট নেওয়া হচ্ছিল, ঠিক তেমনই সমানতালে বেসরকারি উদ্যোগে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার লাভ করছিল। এমন পরিস্থিতিতে দেশীয় উদ্যোক্তারা যাতে করে প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহ করতে পারেন এবং মূলধন সংগ্রহ খরচ যথার্থ হয়, সেজন্যই মূলত ব্যাংকঋণের সুদের হার কমানোর যৌক্তিকতা।

ঋণের সুদের হার কমানো সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। সরকার চাচ্ছিল দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে জনদুর্ভোগ লাঘব করতে। কিন্তু করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চিত্রপট বদলে দিয়েছিল।
ঋণের সুদ বৃদ্ধির নীতিগত সিদ্ধান্ত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে, এমনটাই বিশ্লেষণ অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের। মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে গভর্নর আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, অর্থনীতির পরিস্থিতি এখন যে পর্যায়ে রয়েছে, তার চাইতে আর খারাপ হবে না। দেশের মানুষেরও এমনটাই প্রত্যাশা। নতুন মুদ্রানীতির ফলে অর্থনীতিতে নতুন প্রাণপ্রবাহ সৃষ্টি হলেই এই পরিবর্তন সার্থক হবে।

×