
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও ঋতুর ধারাবাহিকতায় শীতল সমীরণ বইছে সারাদেশে
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও ঋতুর ধারাবাহিকতায় শীতল সমীরণ বইছে সারাদেশে। শীতের আমেজের পাশাপাশি প্রাণচঞ্চল, সহজ-সরল মানুষদের জীবনে এসেছে কিছুটা স্থবিরতা। একদিকে, কুয়াশাঢাকা সকাল ও শিশিরভেজা ঘাস যেমন বাঙালির জীবনকে রাঙিয়ে তুলেছে নানা রঙে; অন্যদিকে, অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত ও আবাসনহীন মানুষদের ব্যস্তময় জীবনধারা হিমচাদরে পড়েছে ঢাকা। তবে, ঋতুর এই বৈচিত্র্য দারিদ্র্য মানুষদের জীবনে নিয়ে এসেছে সীমাহীন কষ্ট ও অসহনীয় যন্ত্রণা।
কেননা, যারা দু’মুঠো ভাতের জন্য মরিয়া হয়ে থাকে, সেখানে হাড়কাঁপানো ঠা-ার কাছে এখন নিতান্তই অসহায় তারা। মাঘ মাসের আবির্ভাব হতে না হতেই কনকনে শীতে সুবিধাবঞ্চিত, ছিন্নমূল, অসহায় মানুষ ও পথশিশুদের জীবন সংগ্রামটা যেন আরও বেশি কঠিনতর হয়ে পড়েছে। যদিওবা রাস্তা-ঘাটে পড়ে থাকা কাগজ ও খড়কুটো পুড়িয়ে নিজেদের উষ্ণ রাখার চেষ্টা করছে প্রতিনিয়ত।
কিন্তু এই তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ও হিমেল হাওয়ার প্রকোপ থেকে বস্ত্রহীন, আশ্রয়হীন মানুষের আত্মরক্ষার প্রচেষ্টা যেন আঁখিদ্বয়কে নমনীয় করে তোলে। এছাড়াও, অসহায় মানুষেরা গাছতলায় বা খোলা আকাশের নিচে বা ফ্লাইওভার ব্রিজের ওপরে বস্তা বা পলিথিন গায়ে দিয়ে যেভাবে রাত যাপন করছে তা সত্যিই বেদনাদায়ক। পথশিশুরা ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে রোদের তাপে নিজেদের উষ্ণ রাখার প্রাণান্তকর চেষ্টায় নিয়োজিত।
তাছাড়া, শীতজনিত বিভিন্ন রোগ-বালাই ফুটপাতে থাকা শিশু ও প্রবীণদের দুর্ভোগকে বাড়িয়ে তুলেছে দ্বিগুণ। অন্যদিকে, শহরের গণ্ডি পেরিয়ে প্রত্যন্ত ও দুর্গত অঞ্চলগুলোতে ঠা-ার প্রকোপ বেশি হওয়ায় বিপুল জনগোষ্ঠী অবর্ণনীয় কষ্টভোগ করছে। এমতাবস্থায় তাদের পাশে দাঁড়ানো যে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব তা মাদার তেরেসার জীবনদর্শন থেকে আমরা শিক্ষা পাই। আমরাও মানবতার দূত হয়ে শীতার্তদের পাশে দাঁড়াতে পারি। তবে, মানবসেবা করতে হলে প্রয়োজন উদার হৃদয় ও আত্মত্যাগ।
আসুন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মাদার তেরেসার মতো আর্তমানবতার সেবায় আত্মনিয়োগ করি ও গভীর ভালোবাসা দিয়ে তাদের কষ্টকে উপলব্ধি করি। প্রতিবছরই বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও সংগঠনসমূহ শীতার্তদের সহায়তা করে কিন্তু তা অপ্রতুল। কাজেই, এক্ষেত্রে সম্মিলিত সহায়তাও নিতান্তই দরকার। এদিকে, মানবতার হাত প্রসারিত করতে শিখতে হবে। পাশাপাশি তরুণদের মানবিক মূল্যবোধসমূহ বিকশিত করাও দরকার।
এক্ষেত্রে, সমাজের সামর্থ্যবান এবং বিত্তবান ব্যক্তিদের পক্ষে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের নির্বাক চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক আনা যেন অসম্ভব কিছু নয়। তবে, প্রয়োজন ভাসমান মানুষের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা এবং মানবতাবোধ। তাই, এই শীতে বিলাসিতা, উপভোগ ও আরাম-আয়েস নয়, উন্মেষ ঘটুক মানবিক শিক্ষা ও সচেতনতার।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা থেকে