ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

অমর একুশে এবং বঙ্গবন্ধুর অনশন ও মুক্তি

প্রকাশিত: ২০:৪২, ১৮ জানুয়ারি ২০২১

অমর একুশে এবং বঙ্গবন্ধুর অনশন ও মুক্তি

সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রাজনৈতিক কার্যকলাপ সম্পর্কিত তথ্য ও বিবরণী তৈরি করে সরকারের উর্ধতন মহলে প্রেরণ করত। তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এতটাই ঐকান্তিক ও পেশাদারী ছিল যে সোহ্রাওয়ার্দী তার সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, যদি শেখ মুজিবের মতো তার পাঁচজন মানুষ থাকত, তাহলে গোটা দেশই তার সঙ্গে থাকত। বায়ান্ন সালের একুশে ফেব্রুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেলে থাকার প্রেক্ষিতে অনেকেই ভাষা আন্দোলনে তাঁর সম্পৃক্ততা নিয়ে নানা কথা বলেন। তিনি তখন জেলে থেকে যে ভূমিকা পালন করেন সেটির বাাইরেও জেলের বাইরে এসে রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য কি ভূমিকা পালন করেন সেটিও আমাদের জানা দরকার। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের দাবিতে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি সারাদেশে ধর্মঘটের ঘোষণায় মুসলিম লীগ সরকার রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর দমন পীড়ন বাড়িয়ে দেয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের চিকিৎসা না করে ঢাকা জেলে প্রেরণ করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ৬-২-৫২ তারিখে তাঁর পিতার কাছে জেল থেকে চিরকুটে লিখেছেন ‘হার্ট চিকিৎসা কিছুই হয় নাই। ভয়ের কোন কারণ নেই। খোদার রহমতে আমি মরব না। হার্ট চিকিৎসা না করেই পাঠিয়ে দিয়েছে। কারণ সদাশয় সরকার বাহাদুরের নাকি যথেষ্ট টাকা খরচ হয় আমার জন্য। এদের কাছে বিচার চাওয়া আর সাপের দাঁত এর কাছে মধু আশা করা একই কথা।’ শামসুল হুদা হারুন, বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাতকার গ্রহণের সময় শেখ মুজিব নিজে এই চিরকুটের কথা তাকে জানান; শাসকদের প্রাণে কোন দয়ামায়া আছে বলে মনে হয় না। আমরা এখন স্পষ্ট করে অনুভব করতে পারি যে একুশের মহান ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু যাতে কোনভাবেই যুক্ত না থাকতে পারেন তার জন্যই বঙ্গবন্ধুকে জেলে পাঠানো। তারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এতটাই আতঙ্কিত ছিল যে তাঁকে ঢাকা জেল থেকে ফরিদপুর জেলেও পাঠিয়ে দেয়া হয়। কারাবন্দী শেখ মুজিব এবং মহিউদ্দিন আহমেদ ৯ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিনের বরাবরে তাদের আটকাদেশের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রত্যাহার না করা হলে ১৬ তারিখ থেকে অনশন ধর্মঘট করার হুমকি দিয়ে একটি স্মারকলিপি প্রেরণ করেন। এরই প্রেক্ষিতে সরকার তাদের ঢাকা জেল থেকে ফরিদপুর জেলে প্রেরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। পাকিস্তান সরকার কি পরিমাণ আতঙ্কগ্রস্ত থাকত শেখ মুজিবকে নিয়ে তার জন্য নিচের উদ্ধৃতাংশ দ্রষ্টব্য : ফরিদপুর জেলে পৌঁছেই তাঁরা দুজন অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। ‘শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দিন আহমেদের অনশন ধর্মঘট’ শিরোনামে নিম্নলিখিত প্রচারপত্র সারাদেশে বিলি করা হয় : শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দিন আহমেদের অনশন ধর্মঘট : বিভিন্ন সংবাদপত্র ও নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রকাশ যে নিরাপত্তা বন্দী শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দিন আহমেদ গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হতে অনশন ধর্মঘট আরম্ভ করেছেন। আরও প্রকাশ, গত ৯ ফেব্রুয়ারি তাহারা পূর্ব পাকিস্তানের উজিরে আজম নুরুল আমিন সমীপে এক স্মারকলিপি পেশ করেন। এতে তাঁদের নিরাপত্তা আইনানুসারে আটক সম্পূর্ণ অন্যায় এবং নীতিবিরুদ্ধ বলে জানানো হয়। কারণ, প্রকাশ্য আদালতের বিচারে তাদের বিরুদ্ধে প্রামাণ্য কোন অভিযোগ নিতে সরকার সক্ষম হয়নি। তারা পাকিস্তান সংগ্রামের গৌরবময় অধ্যায়ে তাঁদের অপার ত্যাগ ও কাজের উল্লেখ করেন... সরকার যদি তাঁদের সমস্ত নিরাপত্তা বন্দীসহ ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মুক্ত না করেন তবে তাঁরা প্রতিবাদে ১৬ ফেব্রুয়ারিতে আমরণ অনশন করবেন উপযুক্ত প্রচারপত্রের ওপর ভিত্তি করে ‘শেখ মুজিবের অনশন ধর্মঘট’ নামে খবর বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়। শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহিউদ্দিন আহমেদের অনশন ধর্মঘট ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করার হুমকি দিয়েছিলেন। তাঁরা যাতে অনশন শুরু করতে না পারেন সে জন্য নুরুল আমিন সরকার তাঁদের ঢাকা জেল থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর জেলে প্রেরণ করেন। ফলে তাঁরা ওই দিন অনশন শুরু করতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহিউদ্দিন আহমেদ ১৮ তারিখ সকাল থেকে ফরিদপুর জেলে অনশন শুরু করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং মহিউদ্দিনের অনশন নিয়ে পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশনে ২০ ফেব্রুয়ারি তারিখে আনোয়ারা বেগম, বেশ জোরালো বক্তব্য রাখেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কারাজীবন স্বাস্থ্যের অবনতি তাঁর প্রতি অত্যাচার-নির্যাতন সম্পর্কিত বিষয় জাতির বিবেককে বিশেষ করে বঙ্গীয় পরিষদকে প্রচণ্ডভাবে নাড়া দেয়, তাঁর স্বাস্থ্য সম্বন্ধে জনগণের উদ্বেগ জাতীয় দাবি হয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বলেন, সরকার আমাকে ঢাকা জেলে পাঠিয়ে দিলেন, ভালভাবে চিকিৎসা না করে। আমি জেলে এসে মহিউদ্দিনকে সকল কথা বললাম। মহিউদ্দিনও রাজি হলো অনশন ধর্মঘট করতে। আমরা দুজনে সরকারের কাছে পহেলা ফেব্রুয়ারি দরখাস্ত পাঠালাম। যদি ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আমাদের মুক্তি না দেয়া হয় তাহা হলে ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে অনশন ধর্মঘট শুরু করব। দুইখানা দরখাস্ত দিলাম। আমাকে যখন জেল কর্তৃপক্ষ অনুরোধ করল অনশন ধর্মঘট না করতে, তখন আমি বলেছিলাম, ছাব্বিশ-সাতাশ মাস বিনাবিচারে বন্দী রেখেছেন। কোন অন্যায়ও করিনি। ঠিক করেছি জেলের বাইরে যাব, হয় আমি জ্যান্ত অবস্থায় না হয় মৃত অবস্থায়। তাঁরা সরকারকে জানিয়ে দিল। বাইরে সমস্ত জেলায় ছাত্রলীগ কর্মীরা যেখানে যেখানে আওয়ামী লীগ ছিল সেখানে খবর পাঠিয়ে দিয়েছিল। এদিকে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদও গঠন করা হয়েছে। এদিকে জেলের ভেতর আমরা দুজন প্রস্তুত হচ্ছিলাম অনশন ধর্মঘট করার জন্য। আমরা আলোচনা করে ঠিক করেছি, যাই হোক না কেন, আমরা অনশন ভাঙব না। যদি এ পথেই মৃত্যু এসে থাকে তবে তাই হবে। ১৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে সকালবেলা আমাকে জেলগেটে নিয়ে যাওয়া হলো এই কথা বলে যে, আমার সাথে আলোচনা আছে অনশন ধর্মঘটের ব্যাপার নিয়ে। আমি যখন জেলগেটে পৌঁছলাম দেখি, একটু পরেই মহিউদ্দিনকেও নিয়ে আসা হয়েছে একই কথা বলে। আমাদের নারায়ণগঞ্জ থানায় নিয়ে যাওয়া হলো। একজন চেনা লোককে থানায় দেখলাম, তাকে বললাম, শামসুজ্জোহাকে খবর দিতে। এক ঘণ্টার মধ্যে জোহা সাহেব, বজলুর রহমান ও আরও অনেকে থানায় এসে হাজির। আমি ওদের বললাম ‘রাতে হোটেলে খেতে যাব’ কোন্্ হোটেলে যাব বলে যান। আপনারা পূর্বেই সে হোটেলে বসে থাকবেন। আলাপ আছে। বেশি সময় তাদের থানায় থাকতে দিল না। হোটেলের নাম বলে বিদায় নিল। আমরা যথাসময়ে হোটেলে পৌঁছলাম। আটদশ জন কর্মী নিয়ে জোহা সাহেব বসে আছেন। আলাপ আলোচনা করলাম। ভাসানী সাহেব, হক সাহেব ও অন্য নেতাদের খবর দিতে বললাম। আমরা যে আগামীকাল থেকে আমরণ অনশন শুরু করব, সে কথাও তাদের বললাম। নারায়ণগঞ্জের কর্মীদের ত্যাগ তিতিক্ষার কথা কোন রাজনৈতিক কর্মী ভুলতে পারে না। তারা আমাকে বলল, ‘২১ ফেব্রুয়ারি তারিখে নারায়ণগঞ্জে পূর্ণ হরতাল হবে। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি তো আছেই, আপনাদের মুক্তির দাবিও আমরা করব।’ রাত চারটায় ফরিদপুর পৌঁছলাম। অনশন ধর্মঘট শুরু করলাম। দুদিন পর অবস্থা খারাপ হলে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। আমাদের দুজনেরই শরীর খারাপ। একজন কয়েদিকে দিয়ে গোপনে কয়েক টুকরা কাগজ আনালাম। যদিও হাত কাঁপে তথাপি ছোট ছোট করে চারটা চিঠি লিখলাম। আব্বার কাছে একটা, রেনুর কাছে একটা, আর দুটো শহীদ সাহেব ও ভাসানী সাহেবের কাছে। ২১ ফেব্রুয়ারি আমরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে দিন কাটালাম, রাতে সিপাহীরা ডিউটিতে এসে খবর দিল, ঢাকায় ভীষণ গোলমাল হয়েছে। কয়েকজন লোক গুলি খেয়ে মারা গেছে। রেড়িওর খবর। ফরিদপুরে হরতাল হয়েছে, ছাত্রছাত্রীরা শোভাযাত্রা করে জেলগেটে এসেছিল। তারা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিল, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই,’ বাঙালীদের শোষণ করা চলবে না,’ ‘শেখ মুজিবের মুক্তি চাই,’ ‘রাজবন্দীদের মুক্তি চাই’, আরও অনেক স্লোগান। আমার খুব খারাপ লাগল। কারণ, ফরিদপুর আমার জেলা, মহিউদ্দিনের নামে কোন স্লোগান দিচ্ছে না কেন? শুধু ‘রাজবন্দীদের মুক্তি চাই’, বললেই তো হতো। রাতে যখন ঢাকার খবর পেলাম তখন ভীষণ চিন্তাযুক্ত হয়ে পড়লাম। কত লোক মারা গেছে বলা কষ্টকর। তবে অনেক লোক গুলি খেয়ে মারা গেছে শুনেছি। দুজনে পাশাপাশি বিছানায় শুয়ে আছি। ডাক্তার সাহেব আমাদের নড়াচড়া করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু উত্তেজনায় উঠে বসলাম। দুজন কয়েদি ছিল আমাদের পাহারা দেয়ার এবং কাজকর্ম করে দেয়ার জন্য। তাড়াতাড়ি আমাদের ধরে শুইয়ে দিল। খুব খারাপ লাগছিল, মনে হচ্ছিল চিন্তাশক্তি হারিয়ে ফেলেছি। গুলি করার তো কোন দরকার ছিল না। হরতাল করবে, সভা ও শোভাযাত্রা করবে, কেউ নেই। ১৪৪ ধারা দিলেই গোলমাল হয়, না দিলে গোলমাল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। অনেক রাতে একজন সিপাহী এসে বলল, ছাত্র মারা গেছে অনেক। বহু লোক গ্রেফতার হয়েছে। রাতে আর কোন খবর নেই। ঘুম তো এমনিই হয় না, তারপর আবার এই খবর। পরের দিন নয়-দশটার সময় বিরাট শোভাযাত্রা বের হয়েছে, বড় রাস্তার কাছেই জেল। শোভাযাত্রীদের স্লোগান পরিষ্কার শুনতে পেতাম, হাসপাতালের দোতলা থেকে দেখাও যায়, কিন্তু আমরা নিচের তলায়, হর্ন দিয়ে একজন বক্তৃতা করছে। আমাদের জানার জন্যই হবে। কি হয়েছে ঢাকায় আমরা কিছু কিছু বুঝতে পারলাম। জেল কর্তৃপক্ষ আমাদের কোন খবর দিতে চায় না। আমরা যেন কোন খবর না পাই, আর কোন খবর না দিতে পারি বাইরে এই তাদের চেষ্টা। খবরের কাগজ তো একদিন পরে আসবে, ঢাকা থেকে। ২২ তারিখে সারাদিন ফরিদপুরে শোভাযাত্রা চলল। কয়েক ছাত্রছাত্রী এক জায়গায় হলেই স্লোগান দেয়। ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়ে রাস্তায় বেড়ায় আর স্লোগান দেয়। ২২ তারিখে খবরের কাগজ এলো, কিছু কিছু খবর পেলাম। উত্তেজনা চলতে থাকে। ২৩ ও ২৪ তারিখও সরকারী দমন নীতি অব্যাহত থাকে। পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করার আশঙ্কা ব্যক্ত করে গবর্নর ২৪ তারিখ আইন পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেন। ২৫ ফেব্রয়ারি কর্তৃপক্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেন এবং ছাত্রদের হল ত্যাগ করার নির্দেশ প্রদান করেন। অন্যদিকে ২৭ ফেব্রুয়ারি গণদাবির মুখে সরকার শেখ মুজিবুর রহমানকে ফরিদপুর জেল থেকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। এ প্রসঙ্গে অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু আরও বলেন, আমার বুকে ব্যথা শুরু হয়েছে। সিভিল সার্জন সাহেবের কোন সময় অসময় ছিল না। আসছেন, দেখছেন, চলে যাচ্ছেন। ২৭ তারিখ দিনের বেলা আমার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়ল। বোধহয় আর দুই একদিন বঁাঁচতে পারি। ২৭ তারিখ রাত আটটার সময় আমরা দুজন (বঙ্গবন্ধু ও মহিউদ্দিন) চুপচাপ শুয়ে আছি। কারও সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা নেই, শক্তিও নেই। দুজনেই শুয়ে শুয়ে কয়েদির সাহায্যে অজু করে খোদার কাছে মাপ চেয়ে নিয়েছি। দরজা খুলে বাইরে থেকে ডেপুটি জেলার এসে আমার কাছে বসলেন এবং বললেন, ‘আপনাকে যদি মুক্তি দেয়া হয়, তবে খাবেন তো?’ বললাম, ‘মুক্তি দিলে খাব, না দিলে খাব না। তবে আমার লাশ মুক্তি পেয়ে যাবে।’ ডাক্তার সাহেব এবং আরও কয়েক কর্মচারী এসে গেছে চেয়ে দেখলাম। ডেপুটি জেলার সাহেব বললেন, ‘আমি পড়ে শোনাই, আপনার মুক্তির অর্ডার এসে গেছে রেড়িওগ্রামে এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের অফিস থেকেও অর্ডার এসেছে। দুটো অর্ডার পেয়েছি।’ তিনি পড়ে শোনালেন, আমি বিশ্বাস করতে চাইলাম না। মহিউদ্দিন শুয়ে শুয়ে অর্ডারটা দেখল এবং বলল যে, তোমার অর্ডার এসেছে। আমাকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। ডেপুটি সাহেব বললেন, ‘আমাকে অবিশ্বাস করার কিছুই নেই। কারণ, আমার কোন স্বার্থ নেই; আপনার মুক্তির আদেশ সত্যিই এসেছে।’ ডাক্তার সাহেব ডাবের পানি আনিয়েছেন। মহিউদ্দিনকে দুজন ধরে বসিয়ে দিলেন। সে আমাকে বলল, ‘তোমাকে ডাবের পানি আমি খাইয়ে দেব।’ দুই চামচ ডাবের পানি দিয়ে মহিউদ্দিন আমার অনশন ভাঙিয়ে দিল। মহিউদ্দিনের কোন অর্ডার আসেনি এখনও। এটা আমায় আরও পীড়া দিতে লাগল। ওকে ছেড়ে যাব কেমন করে? ঢাকা ॥ প্রথম লেখা ২৩ জানুয়ারি ২০২০ সর্বশেষ সম্পাদনা ১৬ জানুয়ারি ২০২১ (মতামত লেখকের নিজস্ব) লেখক : তথ্য প্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাসের চেয়ারম্যান-সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যারের জনক [email protected], www.bijoyekushe.net.bd, www.bijoydigital.com
×