উন্নয়নের নিরবচ্ছিন্ন অগ্রগামিতায় বাংলাদেশের যে কর্মপরিকল্পনা তা আজ জোরালোভাবে দৃশ্যমান। অর্থনীতির মূল নিয়ামক কৃষি শিল্পও সম্ভাবনাময় বলয়ে দৃষ্টিনন্দনভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ বিস্তারের যুগে শিল্পোন্নয়নেও পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের যে মেগা প্রকল্প জনগণের দ্বারে পৌঁছানোর অপেক্ষা সেখানেও সমধিক গুরুত্ব পেয়েছে শিল্পোৎপাদনের নানামাত্রিক কর্মযোগ। সবচেয়ে আকর্ষণীয় কর্মক্ষেত্র ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তাদের নিরলস অংশগ্রহণ। সেখানে আবার বিস্ময়ের বিষয় নারী উদ্যোক্তাদের সর্বাধিক অংশীদারিত্ব। শিল্পটির মূলত উদ্দেশ্য হচ্ছে গ্রামবাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে নারী উদ্যোক্তাদের সফল অংশগ্রহণে এই খাতকে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নিয়ে যাওয়া। সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে নানামাত্রিকে উৎসাহিত করে সাহায্য-সহযোগিতারও আশ্বাস দেয়া হয়। স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া থেকে শুরু করে নতুন ও উৎসাহী উদ্যোক্তাকে প্রাসঙ্গিক কর্মদ্যোতনায় এগিয়ে নিতে ব্যক্তিক অংশগ্রহণ যেমন জরুরী, পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যাংকিং সুযোগ-সুবিধা প্রদানও একান্ত আবশ্যক। তবে গ্রামে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঋণের সুবিধা পেতে কালক্ষেপণ হয় বলে অভিযোগ আছে। নারীদের বেলায় তো অনেকখানি। শহরে, বন্দরে, নগরে স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণের বেলায় তেমন সমস্যা না হলেও গ্রামের নারী উদ্যোক্তারা প্রায়শ এই ঋণ পেতে সমস্যায় পড়ে যান।
এই শিল্পের অপার সম্ভাবনার অন্য বিষয়টি উদ্যোক্তা শুধু নিজে সফল হচ্ছে না, আরও অনেককে কর্মসংস্থানে যুক্ত করে তাদেরও স্বাবলম্বী করতে অভাবনীয় ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। কৃষিনির্ভর অর্থনীতি আজ শিল্পোৎপাদন অর্থনীতিতে তার গতিশীলতাকে এগিয়ে নিচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে জিডিপিতেও। এই খাত থেকে ২৫% যোগ হচ্ছে মোট জাতীয় উৎপাদনে।
প্রধানমন্ত্রী এবার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের মেলা উদ্বোধনে এই খাতকে আরও সম্প্রসারণের উদাত্ত আহ্বান জানান। সরকার প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত। উদীয়মান শিক্ষিত প্রজন্মও যদি এই খাতটিতে নিজের দক্ষতা ও পারদর্শিতা প্রমাণ করতে পারে তাহলে সেটা যেমন নিজের জন্য মঙ্গল, একইভাবে দেশের অর্থনীতির খাতকেও সমৃদ্ধ করতে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করবে। এসএমই উদ্যোক্তাদের পণ্যের বাজারজাতকরণ, প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণের ঘাটতি এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়ে তথ্য-উপাত্তের অপ্রতুলতা রয়েছে। এসব বাধা-প্রতিবন্ধকতা থেকে প্রয়োজনীয় কর্মযোগে বের হয়ে আসাও অত্যন্ত জরুরী। দশ বছরের পথপরিক্রমায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতটি বর্তমানে একটি সম্মানজনক অবস্থানে, বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে। এর আগে এই দরকারি শিল্পখাতকে সেভাবে উৎসাহিত করা হয়নি। পরিবেশ-পরিস্থিতিও সংশ্লিষ্টদের জন্য কোন সম্ভাবনার নির্দেশনা দিতে পারেনি। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার আবশ্যকীয় কর্মপ্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়ে বর্তমানে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের যাত্রাপথকে আরও গতিশীল করে ভবিষ্যতের পরিক্রমায় দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে। জিডিপিতে ২৫% যোগ হলেও কর্মসংস্থানে ৮০% যোগ হচ্ছে এসএমই উৎপাদনে। সঙ্গত কারণেই বৃহৎ শিল্পের মতো ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পটিও অর্থনীতির চাকাকে বিশেষভাবে সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।