ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

জটিল আকার ধারণ করছে ডেঙ্গু-করোনা-চিকুনগুনিয়া ঘরে ঘরে আক্রান্ত

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০১:১৯, ১ আগস্ট ২০২৫

জটিল আকার ধারণ করছে ডেঙ্গু-করোনা-চিকুনগুনিয়া ঘরে ঘরে আক্রান্ত

ডেঙ্গু, করোনা ও চিকনগুনিয়া ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করছে

ডেঙ্গু, করোনা ও চিকনগুনিয়া ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করছে। ভাইরাসজনিত এসব রোগে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ আক্রান্ত হচ্ছে ঘরে ঘরে। বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। ব্যয়বহুল এসব রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে অভাব অনটনে ভুগছেন সীমিত আয়ের মানুষ। রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে পরীক্ষা সরঞ্জামের স্বল্পতার খবর আসছে প্রায়ই।

সরকারি হাসপাতালে সিট না পাওয়ায় অনেক রোগীকে অনেক বাড়তি খরচ দিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন টেস্টের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার পাশাপাশি রোগ নির্ণয়ের জন্য সরকারিভাবে জরুরি ভিত্তিতে সব হাসপাতালে প্রয়োজনীয় র‌্যাপিড টেস্ট কিট সরবরাহের অনুরোধ জানান সংশ্লিষ্টরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দুইজন।

চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৮৩ জনের। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২০,৯৮০ জন। আর ২৪ ঘণ্টায় ২৭৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছর বুধবার পর্যন্ত সারাদেশে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়েছে ২৫৩ জনের শরীরে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার প্রায় ৪৯ শতাংশ। আক্রান্ত রোগীর বেশির ভাগই ঢাকা মহানগরের বাসিন্দা। এছাড়া চলতি বছরে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছে ৭১৯ জনের। মারা যাওয়াদের মধ্যে ১৫ জন পুরুষ ও ১৪ জন নারী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জুলাই মাসে এখন পর্যন্ত ১০,৬৮৪ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৪১ জন। সারাদেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ১ হাজার ২৬২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। যার মধ্যে ঢাকায় ৩৪১ জন, বাকি ৯২১ জন ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগে।

তথ্য অনুযায়ী, এই বছরের জানুয়ারিতে ১ হাজার ১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪ জন, মার্চে ৩৩৬ জন, এপ্রিলে ৭০১ জন, মে মাসে ১ হাজার ৭৭৩ জন এবং জুনে ৫ হাজার ৯৫১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন, এপ্রিলে সাতজন, মে মাসে তিনজন এবং জুনে ১৯ জন মারা গেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিটি পুরুষ। তার বয়স ৮১-৯০ বছরের মধ্যে। এই সময়ের মধ্যে নতুন করে আরও ৩ জনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত করোনার ৮১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার অনুপাতে শনাক্তের হার ২ দশমিক ৭০ শতাংশ। এ নিয়ে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর করোনা শনাক্ত হয়েছে ৭১৯ জনের। মারা যাওয়াদের মধ্যে ১৫ জন পুরুষ ও ১৪ জন নারী।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্য মতে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটি করপোরেশন এলাকার বাসিন্দারা অধিক হারে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া যাচ্ছে মহাখালী, তেজগাঁও, নাখালপাড়া, খিলক্ষেত, নিকেতন, মোহাম্মদপুর, ধানম-ি, উত্তরা, লালবাগ, আজিমপুর, হাজারীবাগ, শান্তিনগর, মালিবাগ, খিলগাঁও, মুগদা, গোড়ান, রামপুরা ও শাহজাহানপুরে।

তথ্যমতে, ২০০৮ সালে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম চিকুনগুনিয়া রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ২০১১ সালে ঢাকার দোহারে কিছু রোগী পাওয়া যায়। তবে ২০১৭ সালে সবচেয়ে বড় প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, ওই বছর প্রায় ১৪ হাজার মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়। এরপর টানা ছয় বছর তেমন কোনো রোগী পাওয়া যায়নি। আইইডিসিআর জানায়, সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর দেশে ৬৭ জন চিকুনগুনিয়ার রোগী শনাক্ত হয়।
এদিকে ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া ও করোনা রোগের পরীক্ষা নিরীক্ষায় হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে ইচ্ছেমতো টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। রোগীদের অভিযোগ, ডেঙ্গু নির্ধারণে সরকারি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকলেও চিকুনগুনিয়া পরীক্ষায় নেই এমন কোনো নির্দেশনা। ফলে, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চলছে দাম বেশি নেওয়ার প্রতিযোগিতা। ডেঙ্গু পরীক্ষা যেখানে ৫০ থেকে ৩০০ টাকায় করা যায়, সেখানে চিকুনগুনিয়া টেস্টের দাম প্রায় কয়েকগুণ।

চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি সরকারি এক প্রজ্ঞাপনে নির্ধারণ করা হয় ডেঙ্গু টেস্টের ফি। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে এনএস ফর ডেঙ্গু, আইজিজি ফর ডেঙ্গু ও আইজিএম ফর ডেঙ্গু পরীক্ষার সরকারি নির্ধারিত সর্বোচ্চ ফি হলো ৫০ টাকা। এ ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আরেকটি আদেশে দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এনএস ফর ডেঙ্গু, আইজিজি ফর ডেঙ্গু ও আইজিএম ফর ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সিবিসি পরীক্ষা করাতে ফি দিতে হয় ৪০০ টাকা। এতে করে রোগীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানান তাদের স্বজনরা।
খুলনা থেকে সংবাদদাতা জানান, খুলনায় করোনার প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে। মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে মারা গেলেন ৪ রোগী। সব মৃত্যু খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে। বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটায় মো. রকমান (২৫) নামে এক যুবক করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার বাড়ি খুলনার হরিণটানা থানার রায়েরমহল এলাকায়। আগের দিন বুধবার সকাল ৯টায় মারা যান রতিকান্ত ডাকুয়া (৮৫) নামে এক বৃদ্ধ। তিনি নগরীর খালিশপুর থানার গাবতলা এলাকার বাসিন্দা।

এর আগে ২৫ জুলাই রাত ৮টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় বাগেরহাটের কচুয়ার আল আমিনের (৩৮)। আর ২১ জুলাই রাত সাড়ে ৩টার দিকে মৃত্যু হয় খুলনার বটিয়াঘাটা থানার স্বপ্নপুরী এলাকার দীপ রায়ের (২৫)। চট্টগ্রাম থেকে সংবাদদাতা জানান, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ল্যাবরেটরি, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইনফেকসাস ডিজিজেজে (বিআইটিআইডি) পিসিআর (আরটি-পিসিআর) ল্যাব থাকলেও চিকুনগুনিয়া পরীক্ষার কিট না থাকায় সরকারি পর্যায়ে রোগ নির্ণয় হচ্ছে না।

প্যানেল হু

×