ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

শিক্ষার্থীদের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন বিলিয়ে দিলেন শিক্ষিকা মাহরিন চৌধুরী

দৌড়াও, ভয় পেও না, আমি আছি

প্রকাশিত: ১৯:২৩, ২২ জুলাই ২০২৫

দৌড়াও, ভয় পেও না, আমি আছি

ছবিঃ সংগৃহীত

জীবন দিয়ে সন্তানসম শিক্ষার্থীদের বাঁচিয়ে গেলেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা মাহরিন চৌধুরী। ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় স্কুল ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ার পরও পিছু না হটে দগ্ধ শরীরে প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থীকে জীবিত বের করে আনেন তিনি। কিন্তু নিজে আর ফিরে আসতে পারেননি।

সোমবার (২১ জুলাই) রাতে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন এই মানবিক শিক্ষিকা। তাঁর শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।

মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভেসে যায় শোক ও শ্রদ্ধার আবেগঘন স্ট্যাটাসে। শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সহকর্মী ও বন্ধুদের অশ্রুসিক্ত নয়নে স্মরণ করেন মাহরিন চৌধুরীর মমতা, সাহস এবং আত্মত্যাগের গল্প।

ঘটনাটি ঘটে ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে। সেখানে একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে ভয়াবহ আগুন ধরে যায়। মুহূর্তের মধ্যে ভবনজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক ও বিভীষিকা।

সেই দুঃসময়ে একজন শিক্ষকের সাহসিকতা জাতিকে কাঁদিয়েছে। তিনি হলেন মাহরিন চৌধুরী, প্রতিষ্ঠানটির সমন্বয়ক। আগুনের লেলিহান শিখার মধ্য দিয়েও একে একে ২০ জন শিশুশিক্ষার্থীকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান।

সাক্ষ্য দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা—"মিস আমাদের বারবার বলছিলেন, ‘দৌড়াও, ভয় পেও না, আমি তো আছি।’ তাঁর এই কথাগুলো আমাদের সাহস জুগিয়েছিল।"

কিন্তু নিজের শরীর তখন আগুনে ঝলসে গেছে। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

এই আত্মত্যাগের গল্প কাঁদিয়েছে গোটা দেশকে। জাতীয় দৈনিক ও টিভি চ্যানেলগুলো গুরুত্ব সহকারে প্রচার করেছে মাহরিন চৌধুরীর বীরত্বগাথা।

জানা গেছে, স্বামী এবং দুই ছেলে রেখে পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন এই মহিয়সী নারী।

তাঁর এক শিক্ষার্থী আবেগভরা কণ্ঠে লিখেছে, “শিক্ষক শুধু পাঠ্য বই শেখান না, শেখান কীভাবে মানুষ হতে হয়। মাহরিন ম্যাম ছিলেন সেই শিক্ষকদের একজন।”

সারাদেশের মানুষ, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, সহকর্মী—সবাই একবাক্যে তাঁকে ‘বীর’ আখ্যা দিয়েছেন।

এই মহান শিক্ষিকার উদ্দেশ্যে হৃদয়ের গভীর থেকে একটি বাক্যই উচ্চারণ করা যায়—
“মাহরিন চৌধুরী, আপনাকে জাতির পক্ষ থেকে অশ্রুসিক্ত স্যালুট।”

ইমরান

×