ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

এক ব্যাগ রক্তে যদি কোনো নিষ্পাপ শিশুর জীবন বেঁচে যায়, তাই ছুটে এসেছি

শেখ ফয়সাল আহমেদ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঢাকা

প্রকাশিত: ০৮:৪৪, ২২ জুলাই ২০২৫

এক ব্যাগ রক্তে যদি কোনো নিষ্পাপ শিশুর জীবন বেঁচে যায়, তাই ছুটে এসেছি

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার জন্য রক্ত দিতে ছুটে এসেছেন রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।

আজ দুপুরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়। মুহূর্তেই চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে আর্তনাদ আর বাঁচার আকুতি। আগুনের লেলিহান শিখায় ঝলসে যায় ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা।

দ্রুত উদ্ধারকাজে নেমে পড়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসক ও নার্সরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন মৃত্যুর মিছিল থামাতে।

সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে রক্তের প্রয়োজনীয়তার খবর। রাজধানীর যে যেখান থেকে পেরেছেন, ছুটে এসেছেন জাতীয় বার্ন ইউনিটে রক্ত দিতে। যারাই আসছেন, সবার একটাই কথা—
“আমার এক ব্যাগ রক্তে যদি কোনো নিষ্পাপ মাসুম শিশুর জীবন বেঁচে যায়, তবে সেটাই আমার প্রাপ্তি।”

এ যেন মানবতার আরেক বাংলাদেশ। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ছুটে এসেছেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, রাজনীতিক, শিক্ষক, চিকিৎসক, কবি-সাহিত্যিক, শ্রমজীবীসহ সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।

রাজধানীর ডেমরা থেকে ছুটে আসা ব্যাংকার শহিদুল হক, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্রী সুমি, কল্যাণপুর থেকে তরুণ রাজনীতিক জনি, মোহাম্মদপুরের মাদ্রাসা শিক্ষক জোবায়ের, এমনকি গাইবান্ধা থেকে আসা রিকশাচালক আতাউর মিয়া— সবাই এসেছেন জাতীয় বার্ন ইউনিটে রক্ত দিতে।

যদিও হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক ইতোমধ্যে জানিয়েছে, আপাতত আর রক্তের প্রয়োজন নেই— তবু মানুষ ছুটে আসছে।

অতীতেও বাংলাদেশের যেকোনো দুর্যোগে বাঙালি জাতি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বিশেষ করে তরুণ শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, রক্তদাতাকে হাসপাতাল পৌঁছে দেওয়া, আহতদের পরিবারের সন্ধান করা ইত্যাদি কাজে এগিয়ে এসেছে।

এটাই মানবতার বাংলাদেশ। জাতির এই ক্রান্তিকালে নেই কোনো ভেদাভেদ। সবাই হাতে হাত মিলিয়ে একসাথে দাঁড়িয়েছে অসহায়ের পাশে।

শেখ ফরিদ 

×