ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

গুমের শিকারদের জন্য ‘নিখোঁজ সনদ’ দেবে সরকার: তদন্ত কমিশনের আশ্বাস

ইসমাঈল হোসাইন, উত্তরা, ঢাকা

প্রকাশিত: ১০:১৫, ১০ জুলাই ২০২৫

গুমের শিকারদের জন্য ‘নিখোঁজ সনদ’ দেবে সরকার: তদন্ত কমিশনের আশ্বাস

ছবি: জনকণ্ঠ

বহু বছর ধরে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। রাষ্ট্রের কোনো স্বীকৃতি না থাকা এই নিখোঁজ ব্যক্তিদের জন্য এবার সরকার ‘ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স সার্টিফিকেট’ বা ‘নিখোঁজ সনদ’ চালুর উদ্যোগ নিচ্ছে। এমনটাই জানিয়েছেন ইউনাইটেড ফর দ্য ভিকটিমস অব এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সেস (UVED)-এর নেতৃবৃন্দ।

বুধবার UVED-এর একটি প্রতিনিধি দল গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং গুম থেকে ফিরে আসা ভুক্তভোগী মারুফ জামান।

সাক্ষাত শেষে UVED জানায়, কমিশন তাদেরকে আশ্বস্ত করেছে—এমন সব পরিবার, যাদের স্বজন বহু বছর ধরে গুম হয়ে আছেন এবং এখনো ফেরেননি, তাদের আইনি অধিকার সুরক্ষায় ‘নিখোঁজ সনদ’ দেওয়া হবে। এই সনদের মাধ্যমে পরিবারগুলো নিখোঁজ স্বজনদের ব্যাংক হিসাব, সম্পত্তি ও অন্যান্য আর্থিক বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত সহায়তা পাবে।

সাক্ষাতকালে UVED গুম হওয়া ২০০ ব্যক্তির একটি তালিকা কমিশনের কাছে হস্তান্তর করে এবং প্রত্যেকটি মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের জোর দাবি জানায়। কমিশন survivors-দের কাছ থেকে নথিপত্র গ্রহণের জন্য আহ্বান জানিয়ে বলে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাঠামোর আওতায় এসব মামলার বিচার সম্ভব।

UVED-এর প্রতিনিধি দলে থাকা গুম থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিরা বলেন, গুম একটি রাষ্ট্রীয় অপরাধে পরিণত হয়েছে, যা বিশেষ করে সদ্য বিদায়ী শেখ হাসিনা সরকারের সময় ব্যাপক মাত্রায় সংঘটিত হয়েছে। তারা দাবি করেন—এই গুমের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হলে আইনি সংস্কার, ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন, এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রতিনিধি দল আরও দাবি করে—২০১৩ সালের নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (প্রতিরোধ) আইন পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে, জাতিসংঘের অপশনাল প্রোটোকল টু দ্যা কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার (OP-CAT) অনুসমর্থন করতে হবে, এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইন বাতিল করতে হবে, যা গুমকে ন্যায্যতা দিতে ব্যবহার করা হয়েছে।
UVED জানায়, গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারদের ‘অধিকার আছে জানার’—তাদের স্বজনেরা বেঁচে আছেন কি না, কীভাবে নিখোঁজ হলেন।

তারা আবারও র‌্যাব বিলুপ্তির দাবি তোলে—যাদের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের অভিযোগ আন্তর্জাতিক মহলেও বহুবার উত্থাপিত হয়েছে।

UVED-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাষ্ট্রীয়ভাবে নিখোঁজদের স্বীকৃতি ও বিচার প্রক্রিয়া শুরু না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।

শিহাব

×