
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নে ঈদুল আযহা উপলক্ষে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য বরাদ্দ দেয়া ভিজিএফ চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভিজিএফ এর তালিকায় দরিদ্রদের নামের পরিবর্তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সরকারী- বেসরকারী শিক্ষকসহ প্রায় দুই হাজার স্বচ্ছল ব্যক্তির নাম।
অভিযোগ রয়েছে এসব নামের বিপরিতে বরাদ্দ দেয়া ১০ কেজি চালের ¯িøপ চেয়ারম্যান-মেম্বারা ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করে দিয়েছিল আগেই। তবে বিতরণের সময় স্থানীয় সচেতন জনতা বাঁধা দেয়ায় এসব বেনামী ¯িøপের চাল উত্তোলন করতে পারেনি ব্যবসায়ীরা। ঈদুল আযহার আগের ৬জুন দিন বিতরণ শেষে গুদামে থেকে যায় প্রায় সাড়ে ১৮মেট্রিক টন চাল।
ভিজিএফের তালিকায় অনিয়ম রয়েছে বলে এসব চাল পরবর্তিতে নির্ভুল তালিকা প্রস্তুত করে বিতরণের কথা বলেছে উপজেলা প্রশাসন। তবে এই তালিকা প্রস্তুতেও অনিয়মের আভাস পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়,ভূরুঙ্গামারী উপজেলার ৮নং বলদিয়া ইউনিয়নে ঈদুল আযহা উপলক্ষে পাঁচ হাজার ৭৪৫জন হতদরিদ্র মানুষের জন্য ৫৭দশমিক ৪৫ মেট্রিক টন চল বরাদ্দ দেয়া হয়। জন প্রতি হতদরিদ্র মানুষ পাবেন ১০কেজি করে চাল। এসব হতদরিদ্র মানুষের তালিকা চেয়ারম্যান-মেম্বাররা প্রস্তুত করেন। পরে উপজেলা কমিটি যাচাই বাছাই করে তালিকা অনুমোদন দেন। তবে ৮নং বলদিয়া ইউনিয়নের হতদরিদ্র মানুষের নাম বাদ দিয়ে প্রায় দুই হাজার স্বচ্ছল ও চাকুরিজীবীদের নাম অন্তুর্ভুক্ত করা হয়। অভিযোগ উঠে গত ঈদুল ফিতরের সময়ও এই তালিকা অনুযায়ী ভিজিএফ চাল বিতরণ করা হয়েছিল। তালিকায় থাকায় প্রায় দুই হাজার স্বচ্ছল ও চাকুরিজীবীদের নামে বরাদ্দকৃত চাল আতœসাত করেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
গত ঈদুল ফিতরে এই কান্ড প্রকাশ হলে এবার ঈদুল আযহার বরাদ্দকৃত চাল বিতরণে অভিযোগ তোলেন স্থানীয় সচেতন মহল। পরে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নামের সাথে ¯িøপ প্রাপ্ত মানুষকে মিলিয়ে চাল বিতরণ করে প্রশাসন। এতে বেড়িয়ে আসে তালিকায় প্রায় দুই হাজার ¯িøপ প্রাপ্ত বেনামী মানুষের নাম। পরে অবিলিকৃত সাড়ে ১৮ মেট্রিক টন চাল নেয়ার মানুষ না পাওয়া গেলে সেগুলো ইউনিয়ন পরিষদ গুদামে সিলগালা করে রাখা হয়।
অনুসন্ধানে তালিকায় দেখা যায়,১১৩৮ নম্বর নামের ঘরে রয়েছেন শ্রী স্বপন কুমার সরকার। তিনি বলদিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ২৫৭ নম্বরে রয়েছে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আশরাফুজ্জামান। ২৫৮ নম্বর তালিকায় রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত সহকারি শিক্ষক আরমান আলীর নাম। ২৯২১ নম্বরে রয়েছেন রফিকুল ইসলাম নামের একজন ব্যবসায়ী। ২৯৩৯ নম্বরে রয়েছে সেচ্ছাবেক দলের নেতা লুৎফর রহমান। ২৯৪৯ নম্বর তালিকায় রয়েছে স্বচ্ছল ব্যক্তি আইনুল হক। এভাবে সচ্ছল মানুষের নাম তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
অবসর প্রাপ্ত সহকারি শিক্ষক আরমান আলী বলেন,ভিজিএফ চাল পাওয়ার মতো ব্যক্তি আমি না। আমি কখনই ভিজিএফ চাল পাইনি। কিভাবে তালিকায় নাম আসল তা বলতে পারি না।
শিক্ষক আশরাফুজ্জামান জানান,কিভাবে ভিজিএফের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সেটা তিনি জানেন না। ভিজিএফ তালিকায় নাম থাকায় এখন তিনি সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন। অথচ তিনি কখনই ভিজিএফ চাল উত্তোলন করেননি বলেও নিশ্চিত করেন।
ইউনিয়নের সেচ্ছাসেবক দলের নেতা লুৎফর রহমান জানান, তার নাম ভিজিএফের তালিকায় দেখে তিনি হতভম্ব হয়েছেন। কারা তার নাম তালিকাভূক্ত করেছেন সেটা তার জানা নেই। তিনি জানান, এসব নাম দিয়ে চেয়ারম্যান-মেম্বাররা চাল বিক্রি করে দেয়। তিনি তদন্ত করে বিচার দাবী করেন।
গত ৬জুন ঈদুল আযহার আগের দিন ইউনিয়ন পরিষদে হাজারো হতদরিদ্র নারী পুরুষ চাল নিতে এসে সারাদিন থেকে সন্ধ্যায় খালি হাতে ফেরত যায়। তারা জানান তাদের নাম তালিকায় নাই বলে তাদের চাল দেয়া হয় নাই। অথচ তারাই হতদরিদ্র। এদের মাঝে অনেকে ঈদুল ফিতরে চাল পেলেও এবার পাননি। কয়েকজন অভিযোগ করেন তাদের চেয়াম্যান মেম্বাররা বিক্রি করে দিয়েছেন।
বলদিয়া ইউপি চেয়াম্যান মোজাম্মেল হক বলেন,এই তালিকা দিয়ে ঈদুল ফিতরে চাল বিতরণ করেছেন তিনি। এবারোও এই তালিকা দিয়েই বিতরণ করা হয়েছে। তালিকায় ভূল ক্রমে কিছু স্বচ্ছল ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তবে বিক্রির অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবী করেন।
ইউনিয়নটিতে চাল বিতরণে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান,বিতরণের শেষ দিনে ১৮৪০ জন তালিকাভূক্ত ব্যক্তি চাল নিতে আসেন নাই। এসব ব্যক্তির বিপরিতে প্রায় সাড়ে ১৮ মেট্রিক টন চাল গুদামে রেখে সীলগালা করে রাখা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম ফেরদৌস জানান, তালিকা ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় চাল বিতরণ বন্ধ রাখা হয়েছে। পরবর্তিতে তালিকা নির্ভুল করে বাকী চাল বিতরণ করা হবে।
অপরদিকে গত ৪জুন জেলার নাগেশ^রী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে সাড়ে ৭ মেট্রিক টন ভিজিএফ চাল উদ্ধার করেছে। ইউনিয়নের আশে পাশে বিভিন্ন গুদাম থেকে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে এসব ভিজিএফ চাল উদ্ধার করা হয়।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানাযায়,ঈদ-উল আযহা উপলক্ষে ওই ইউনিয়নের ৭ হাজার ৯৬৯ দুস্থ মানুষের মাঝে ১০ কেজি করে বিতরণের জন্য ভিজিএফ প্রকল্পের প্রায় ৮০ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু অতি দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত এসব চালের ১০ কেজি করে ¯িøপ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা। ব্যবসায়ীরা সে সব ¯িøপের চাল উত্তোলন করে পরিষদের আশপাশের বিভিন্ন গুদামে মজুদ করেন।
স্থানীয়রা বিষয়টি প্রশাসন ও সেনাবাহিনী জানার পর অভিযান চালিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের পার্শ্ববর্তী বাজারের বিভিন্ন দোকানের গোডাউন থেকে দুঃস্থ মানুষের মধ্যে বিতরণকৃত খাদ্য অধিদপ্তরের সিল সম্বলিত কিছু বস্তাসহ প্রায় দুইশ বস্তা চাল জব্দ করা হয়।
এই বিষয়ে সন্তোষপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খাদিজা বেগম বলেন,পরিষদে ঠিক মতো চাল বিতরণ করা হয়েছে। বাইরে ইউপি সদস্য কি করেছেন আমি তা জানি না।
নাগেশ্বরী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সিব্বির আহমেদ চাল উদ্ধারের কথা স্বীকার করে বলেন,মামলা হবে। আদালতে প্রমাণিত হবে কে দোষী।
Jahan