
রাজধানীতে এখনো কাটেনি ঈদের আমেজ। মঙ্গলবার হোটেল সোনারগাঁও মোড়
ঈদুল আজহা শেষে স্বস্তিতেই ঢাকা ফিরছেন নগরবাসী। সড়ক-মহাসড়কে নেই তেমন কোনো যানজটের দুর্ভোগ। বাস, ট্রেন ও লঞ্চ প্রতিটি গণপরিবহনেই যাত্রী বোঝাই করে রাজধানীতে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। তবে ১০ দিনের সরকারি ছুটি এখনো শেষ হয় নি। তাই ঢাকামুখী যাত্রীদের চাপ তেমন নেই। আগামী রবিবার থেকে পুরোধমে শুরু হবে অফিস-আদালত। এ দিকে ঈদের তিন দিন পরেও ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে অনেকেই। যারা ঈদের আগে গ্রামে যেতে পারেন নি। তাদেরকে গ্রামে আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি বেড়াতে যেতে দেখা গেছে। কিন্তু যাত্রাপথে ঈদের বকশিস নামের অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেন যাত্রীরা।
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ শেষে গ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন কর্মব্যস্ত মানুষ। তাই ঈদের তিন দিন পর মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালে ছিল ঢাকামুখী মানুষের ভিড়। তবে যানবাহনের অতিরিক্ত ভিড় না থাকায় স্বস্তিতেই ঢাকা ফিরতে দেখা গেছে তাদের। এ ছাড়া ঢাকার প্রবেশমুখ যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা, গাজীপুর, আমিনবাজার, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টেও যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক। তবে এবার ঈদ পরবর্তী ছুটি লম্বা হওয়ায় এখনো চাপ বাড়েনি। সড়কপথে তেমন যানজট না থাকায় দূরপাল্লার বাসগুলো সময়মতোই টার্মিনালে পৌঁছতে দেখা গেছে।
অপর দিকে ঈদের পরে এখনো অনেকেই ঢাকার বাইরে যেতে দেখা গেছে। তবে ঈদ বকশিস নামে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেন যাত্রীরা। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় সাজিদ নামের বরিশালের এক যাত্রী জনকণ্ঠকে বলেন, স্বাভাবিক সময় ঢাকা থেকে বরিশালের বাস ভাড়া ৫০০ টাকা। কিন্তু ঈদের সময় এটা নেওয়া হচ্ছে ৮০০-১০০০ টাকা। ঈদের তিন দিন পরও একই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।
রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকায় আবুল হোসেন নামের কুমিল্লার এক যাত্রী জানান, ভাবছিলাম যাওয়ার সময় যেমন ভোগান্তি হয়েছিল, ফেরার সময় হয়তো তার কিছুটা হলেও কম হবে। কিন্তু সব কিছু খুব স্বাভাবিক ছিল। এমনকি আমাদের বাসটা নির্ধারিত সময়ের আগেই ঢাকায় এসে গেছে। পুরো পথে কোথাও কোনো যানজট চোখে পড়েনি। মাসুম নামের বেসরকারি এক চাকরিজীবী জনকণ্ঠকে বলেন, ‘ঈদের আগে গত ৫ জুন বাড়ি গিয়েছিলাম। ঈদ শেষে আজ (মঙ্গলবার) ঢাকায় ফিরলাম।
বাড়িতে ছিলাম ৫ দিন। ঝামেলামুক্তভাবে আসার জন্য আগে আগেই ফিরলাম, যাতে ঢাকায়ও কিছুদিন থাকা যায়। ২ দিন পর থেকে আবার ঢাকায় ফেরার চাপ শুরু হয়ে যাবে। তখন ঢাকায় আসা-যাওয়ার মতো ভোগান্তি হবে। সাধারণত ঈদের পর রাস্তায় অস্থিরতা থাকে, কিন্তু এবার দেখলাম পরিস্থিতি শান্ত।’ শ্যামলী পরিবহনের চালক সরুজ মিয়া জানান, বাড়ি যাওয়ার সময় ঈদের আগে চাপ অনেক বেশি ছিল, কারণ বেশির ভাগ মানুষ একই সময়ে রওনা দেন। কিন্তু ফেরার সময় মানুষ ধীরে ধীরে ফিরছেন বলে সড়কে চাপটা নেই। এতে করে এখনও কোথাও ভোগান্তি হয়নি। রেলওয়ে সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকাল থেকে আন্তঃনগর প্রতিটি ট্রেন নির্ধারিত সময় ঢাকায় প্রবেশ করেছে।
ট্রেনে যাত্রীদের চাপ ছিল, তবে অতিরিক্ত নয়। আগামী বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবারের ট্রেনগুলোতে চাপ আরও বেশি হবে। সরকারি ছুটি আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত হওয়ায় এখন পর্যন্ত রাজধানীমুখী যাত্রী চাপ তেমন বৃদ্ধি পায় নি। এবার ঈদযাত্রায় আন্তঃনগর, মেইল, কমিউটার মিলে প্রতিদিন ৭০ হাজারের বেশি যাত্রী পরিবহন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ঈদ যাত্রায় সব ট্রেন সঠিক সময়ে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। ঈদ যাত্রায় প্রতিদিন ৭০টি ট্রেন চলাচল করেছে। এর মধ্যে ৪৪টি আন্তঃনগর, বাকিগুলো মেইল কমিউটার। কমলাপুর স্টেশনে টিকিট ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। গত ৯ জুন থেকে ফিরতি যাত্রা শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনের কর্মকর্তা (স্টেশন ম্যানেজার) মো. সাজেদুল ইসলাম জানান, আমাদের গতকাল (সোমবার) থেকে ফিরতি যাত্রা শুরু হয়েছে। কিন্তু আজকে (মঙ্গলবার) ঈদের চতুর্থ দিনও মানুষ ঢাকা ছাড়ছে। লম্বা ছুটির জন্য ধীরে ধীরে মানুষ যাচ্ছে। এখন দুপুরে বিকেলে আবার ট্রেনের চাপ বাড়বে। ফিরতি যাত্রা পুরো দমে শুরু হয়নি, শুক্রবার থেকে চাপ বাড়বে। এখনো আসার যাত্রী থেকে যাওয়ার যাত্রী বেশি। মঙ্গলবার সকাল থেকেই নির্ধারিত সময়ে ট্রেন যাচ্ছে এবং ফিরছে। সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় ফিরেছে ১৯টির মতো ট্রেন।
তবে সব ট্রেনেই বেশির ভাগ আসন ফাঁকা দেখা গেছে। আর ঢাকা থেকে ছেড়ে গেছে ২২টি ট্রেন। বগুড়া থেকে ট্রেনে ঢাকায় আসা মনির নামের এক যাত্রী জানান, ঈদের দুই দিন আগে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি গিয়েছি। আজ (মঙ্গলবার) ঢাকায় ফিরলাম। ট্রেন একেবারে ফাঁকা বলা যায়। তেমন কোনো চাপ ছিল না। দাঁড়িয়ে কোনো যাত্রী ছিল না। ছুটি শেষ হবে শনিবার তখনতো অনেক চাপ হবে। তাই আগেই ঢাকাতে ফিরলাম। বাসায় দুইদিন রিলাক্সে থাকা যাবে। অপর দিকে ঈদের চতুর্থ দিনেও কমলাপুর রেলস্টেশন দিয়ে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে অনেককেই। সব ট্রেনই নির্ধারিত সময় ঢাকা ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। স্টেশন ছেড়ে যাওয়া এসব অধিকাংশ ট্রেনেই যাত্রী দাঁড়িয়ে যেতে দেখা গেছে। প্ল্যাটফর্মে অনেক যাত্রীদের ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
ঈদের ছুটি শেষে হবে আগামী শনিবার। বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ এখনো বন্ধ রয়েছে। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ। এসব কারণে ঈদে গ্রামে ফেরা অনেকেই একটু লম্বা ছুটি কাটিয়ে নগরীতে ফিরছেন। বিভিন্ন গন্তব্য থেকে আসা ট্রেনগুলো অনেকটা ফাঁকাই ছিল। ট্রেনগুলো যথানিয়মেই যাতায়াত করছে। ফিরতি যাত্রীরা বলছেন, ভিড় হওয়ার আগেই ঢাকায় ফিরছেন তারা। এ দিকে সময়মতো ট্রেন ছাড়ায় যাত্রীরা বেশ খুশি। কথা হয় নেত্রকোনাগামী ট্রেনের যাত্রী মো. মোস্তফা কামাল জানান, ঈদের অতিরিক্ত ভাড়া এড়াতে আজকের টিকিট কেটেছি। আজকেও ট্রেনে যাত্রী দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। আমরা সিট পেয়েছি। ট্রেনে এখনো ভিড় কমেনি। ভেবেছিলাম নিরিবিলি বাড়ি যাবো।
কিন্তু ছুটি বেশি হওয়াতে এখনো অনেক মানুষ ঢাকা ছাড়ছে। এখন ফিরতি যাত্রায় ভালোভাবে আসতে পারলেই হলো। মোহনগঞ্জগামী এক যাত্রী জানান, ঈদ ঢাকাতে করেছি, এখন শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছি। ঈদের মধ্যে যাইনি ভিড়ের জন্য। ছেলে-মেয়েরতো স্কুল আরও কিছুদিন ছুটি আছে তাই রিলাক্সে যাওয়ার জন্য এখন যাচ্ছি, কিন্তু রিলাক্স কোথায় এখন যাত্রী দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। ট্রেনের টিকিট আজই নিয়েছি। এখনতো ঈদ শেষে মানুষ ঢাকায় ফিরবে, আর আমি ঢাকার বাইরে যাচ্ছি। যাতে কোনো ঝামেলায় পড়তে না হয়।