
ছবি: সংগৃহীত
বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। তিন চার বছরেও শিক্ষক-কর্মচারীরা আবেদন করেও টাকা পান না। অর্থসংকটে কাটে তাদের শেষ জীবন। অনেক শিক্ষকের মৃতুর পর তার সন্তান প্রাপ্য টাকার জন্য অফিসে ঘুরেন। তবে এবার অবসরকালীন শিক্ষকদের বড় অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে অন্তবর্তীকালীন সরকার। অবসর ও কল্যান ট্রাস্ট মিলিয়ে শিক্ষকদের জন্য দুই হাজার দুইশো কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে। দীর্ঘদিন ঘাটতিতে থাকা এই দুই দপ্তরেও স্বস্তি ফিরবে।
অর্থমন্ত্রণালয় বলছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডে’ দুই হাজার কোটি টাকা এবং ‘বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টে’ ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। ভুক্তভোগী শিক্ষকদের প্রায় পাঁচ বছর ধরে ঝুলে থাকা আবেদনগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা সহজ হবে। তবে অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, স্থায়ী তহবিল ও মূলধন তহবিল গঠনে এ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফলে আবেদন করে দিনের পর দিন ঘুরতে থাকা শিক্ষক-কর্মচারীরা হঠাৎ করেই অর্থ ছাড় পেয়ে যাবেন, তেমনটি নয়। সরকার এ দুটি প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী সমাধানের পথে হাঁটতে তহবিল গঠনে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে।
জানা যায়, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী সুবিধা বোর্ডে দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এটি দিয়ে ‘স্থায়ী তহবিল’ গঠন করা হবে। গত ২৪ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাজেট অধিশাখার সম্মতিপত্র থেকে এ তথ্য জানা যায়। সম্মতিপত্রে সই করেছেন সিনিয়র সহকারী সচিব শাহরিয়ার জামিল। এতে বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সহায়তা কার্যক্রমের অধীন ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের অনুকূলে ‘স্থায়ী তহবিল’ গঠনে অন্যান্য অনুদান খাতে দুই হাজার কোটি টাকা অর্থ বিভাগের ‘অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা খাত’ হতে বরাদ্দ প্রদানে নির্দেশক্রমে অর্থ বিভাগের সম্মতি জ্ঞাপন করা হলো। সম্মতিপত্রে বলা হয়েছে, ‘বরাদ্দকৃত এ অর্থ চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জারিকৃত সংশোধিত কর্তৃত্ব অর্পণ আদেশের অংশ হিসেবে গণ্য হবে।’ এতে বেশ কিছু শর্তজুড়ে দেওয়া হয়েছে। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা প্রবিধানমালা, ২০০৫-এর প্রবিধান ৬ অনুযায়ী অধিক আয়ের লক্ষ্যে বোর্ডের অনুকূলে স্থায়ী তহবিল হিসেবে দুই হাজার কোটি টাকা লাভজনক সরকারি সিকিউরিটি বা ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করতে হবে। সিকিউরিটি বা ট্রেজারি বন্ড ক্রয় করার এক সপ্তাহের মধ্যে তার প্রমাণক অর্থ বিভাগে প্রেরণ করতে হবে। স্থায়ী তহবিল হিসাব থেকে বিনিয়োগকৃত ট্রেজারি বন্ডের মেয়াদ শেষে তা নবায়ন বা পুনরায় ট্রেজারি বন্ড ক্রয় করতে হবে এবং ট্রেজারি বন্ডকৃত স্থায়ী তহবিল থেকে কোনো অর্থ অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যাবে না। শুধু সুদ বাবদ প্রাপ্ত অর্থ চলতি তহবিলে জমা করে সেখান থেকে ব্যয় নির্বাহ করতে হবে।
পৃথক সম্মতিপত্রে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের অনুকূলে মূলধন তহবিল গঠনে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। অবসর বোর্ডের মতো এখানেও অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা খাত থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কল্যাণ ট্রাস্টের বরাদ্দেও তিনটি শর্ত দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, এই দুটি দপ্তরে প্রায় ৭৫ হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মচারীর আবেদন অনিষ্পন্ন হয়ে জমা পড়ে আছে। অর্থ সংকটে কারণে আবেদনকারীদের টাকা দেওয়া সম্ভব হয়নি।
শিহাব