
চট্টগ্রামের একটি গার্মেন্টস কারখানা থেকে পার্বত্য সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ-এর বিশ হাজারেরও বেশি ইউনিফর্ম উদ্ধারের ঘটনায় দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। কেএনএফ-এর মোট সদস্যসংখ্যার তুলনায় বহু গুণ বেশি ইউনিফর্ম তৈরির পেছনে কী উদ্দেশ্য ছিল, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানান প্রশ্ন। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, সংগঠনটি বড় ধরনের অপারেশনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল কি না, তা এখনই গভীরভাবে খতিয়ে দেখা দরকার।
চট্টগ্রাম নগরীর বাইজিদের নয়হাট এলাকার ‘রিংভো অ্যাপারেলস’ নামের একটি গার্মেন্টস কারখানায় গত দুই মাস ধরে তৈরি হচ্ছিল কেএনএফ-এর ইউনিফর্ম। সেখান থেকেই ১৮ মে উদ্ধার করা হয় ২০ হাজার ৩০০ পিস ইউনিফর্ম। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয় কারখানার মালিক শাহিদুল ইসলামসহ তিনজনকে।
গার্মেন্টসটির কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে কারখানার কর্মীদের ভাষ্য, গত মার্চ থেকেই সেখানে ইউনিফর্ম তৈরির কাজ চলছিল। ক্রেতা হিসেবে কাজ করছিলেন গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দার নামের দুজন ব্যক্তি। পরবর্তীতে তাদেরও গ্রেফতার করে পুলিশ।
অবাক করা বিষয় হলো, বিপুল পরিমাণ ইউনিফর্ম জব্দের পরও বিষয়টি এক সপ্তাহ ধরে গোপন রেখেছিল পুলিশ। যেখানে কিছু ফেনসিডিল উদ্ধারের পরও ব্যাপক প্রচার চালানো হয়, সেখানে এ ঘটনা আড়াল করার চেষ্টাই যেন স্পষ্ট। এ নিয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন।
সংখ্যার চেয়ে বহুগুণ বেশি ইউনিফর্ম, কার জন্য?
কেএনএফ-এর প্রকৃত সদস্যসংখ্যা নির্দিষ্টভাবে জানা না গেলেও মাঠপর্যায়ের বিভিন্ন সংস্থা ধারণা করছে, তা কয়েকশ থেকে এক হাজারের মতো হতে পারে। তাহলে এত বিপুল পরিমাণ ইউনিফর্ম কার জন্য বানানো হচ্ছিল? সংগঠনটি কি নিয়মিতই এমন পোশাক তৈরি করে? এসব প্রশ্নের কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর এখনো মেলেনি।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, “সম্ভবত কুকিচিন ভূরাজনীতির কোনো একটা ফাঁদে পা দিয়েছে। কারণ তাদের কেউ না কেউ অর্থ যোগান দিচ্ছে। যদি মাথাপিছু দুটি ইউনিফর্ম ধরা হয়, তাহলে প্রায় ১০-১৫ হাজার মানুষের জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। তারা সেই পথেই আগাচ্ছে।”
বিষয়টি নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম উদ দৌলা এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, “টোটাল বম কমিউনিটির জনবলই হচ্ছে ১২ হাজার। সেই ১২ হাজারের মধ্যে ছোট বাচ্চা, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই শামিল। সেক্ষেত্রে এই ৩০ হাজার ইউনিফর্মই কেএনএফ-এর কিনা, সেটা খুঁজে দেখার সুযোগ আছে। আমরা বিষয়টা অত্যন্ত সিরিয়াসলি নিয়েছি।”
জানা গেছে, কুকিচিন সদস্যদের নিয়ে এসে দুই কোটি টাকার চুক্তিতে এই ইউনিফর্ম তৈরির অর্ডার দিয়েছিলেন মহেলা সিন মারমা ওরফে মং নামের এক ব্যক্তি। তবে তিনি এখনো পলাতক রয়েছেন।
চট্টগ্রাম থেকে বিপুল পরিমাণে কেএনএফ-এর ইউনিফর্ম উদ্ধারের ঘটনায় দেশজুড়ে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, তা নিছক সন্দেহ নয়। নিরাপত্তা বিশ্লেষক থেকে শুরু করে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। কে বা কারা সংগঠনটিকে অর্থসহায়তা দিচ্ছে, আর এত বিপুল ইউনিফর্ম আসলে কাদের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল এসব প্রশ্নের জবাব এখন জাতির সামনে উন্মোচনের অপেক্ষায়।
https://tinyurl.com/2s4bc3ab
আফরোজা