ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পৃথিবীর কোথাও এত মানুষ পহেলা জানুয়ারিতে জন্মগ্রহণ করে না: প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ২৭ মে ২০২৫; আপডেট: ০৩:৫৬, ২৭ মে ২০২৫

পৃথিবীর কোথাও এত মানুষ পহেলা জানুয়ারিতে জন্মগ্রহণ করে না: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের কোনো দেশে ১ জানুয়ারি তারিখে জন্মগ্রহণকারীর সংখ্যা এত বেশি নয়, যতটা দেখা যায় বাংলাদেশে। এমন এক তথ্য দিয়ে পরিচয় সংকট ও জন্মনিবন্ধনের দুর্বল বাস্তবতা তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে যত মানুষ ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করে, পৃথিবীর আর কোনো দেশে এত মানুষ এদিন জন্মায় না। এর মানে হচ্ছে, আমরা জানিই না আমাদের প্রকৃত জন্মতারিখ। আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বহু মানুষ নিজের নাম পর্যন্ত জানেন না।

তিনি একটি বাস্তব ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, একজন নারীর সঙ্গে কথা বলছিলাম—আমেনার মা। তাকে কেউ কখনো বলেনি, তার নিজের নাম কী। সে শুধু জানে, সে অমুকের মেয়ে, পরে অমুকের স্ত্রী, এরপর অমুকের মা। তার নাম নেই, পরিচয় নেই। অথচ এই মানুষদের দিয়েই আমাদের সমাজ চলে।

ড. ইউনূস এ অবস্থাকে একটি বড় সামাজিক ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, “জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি তৈরিতে আমরা বড় ধরনের জটিলতা দেখি। অনেক মানুষ জন্মতারিখ জানেন না, নাম নিশ্চিত নন। ৬০ বছর বয়সে এসে কেউ বলে—‘আমার তো জন্মতারিখ জানা নেই, একটা লিখে দাও। কত হবে, ৬০ না ৭০?’ এটা অবিশ্বাস্য শোনালেও বাস্তব।”

এই সমস্যা সমাধানে তিনি হাসপাতালভিত্তিক একটি বাধ্যতামূলক জন্মনিবন্ধন পদ্ধতি চালুর আহ্বান জানান। তার কথায়, যে সব হাসপাতালে সন্তান জন্মায়, তাদের বাধ্যতামূলকভাবে জন্মের সঙ্গে সঙ্গে জন্মসনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, সার্টিফিকেট প্রস্তুত করে দিতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্তদের এটা করতে বাধ্য করতে হবে। না হলে এই সংকট কখনো কাটবে না।

তিনি আরো বলেন, আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের মধ্যে হয়তো ৫০ শতাংশ জন্মতারিখই ভুল, অনেক ক্ষেত্রে এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কারণ জন্মতারিখ জানি না, তাই বসিয়ে দেওয়া হয় ১ জানুয়ারি।

স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের দিকেও ইঙ্গিত করেন তিনি। বলেন, আমাদের অনেক ছাত্রের জন্মতারিখ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বা হেডমাস্টার বসিয়ে দেন, বিশেষ করে ম্যাট্রিক, এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার সময়। আর সেটা হয় প্রায়শই ১ জানুয়ারি।

এই সমস্যাকে সমাধান না করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মও একই সংকটে ভুগবে বলে হুঁশিয়ার করেন ড. ইউনূস। পরিচয়ের শুদ্ধতা, নাগরিক অধিকার ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার জন্য তিনি সঠিক ও স্বয়ংক্রিয় জন্মনিবন্ধন পদ্ধতির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

এসএফ 

×