ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৮ মে ২০২৫, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নুরুল হক নুর

উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সাথে আলোচনা হয়েছে

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ২৬ মে ২০২৫; আপডেট: ০৯:৩৩, ২৬ মে ২০২৫

উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সাথে আলোচনা হয়েছে

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর জানিয়েছেন, উপদেষ্টা পরিষদের পুনর্গঠন ও বর্তমান উপদেষ্টাদের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলেও তিনি সাংবাদিকদের জানান।

রবিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে নুরুল হক নুর বলেন, ‘‘প্রধান উপদেষ্টা স্বীকার করেছেন, সরকার গঠনের শুরুর দিকে অনেক উপদেষ্টা অপরিচিত ছিলেন এবং পরে উপদেষ্টা পরিষদে যোগ দিয়েছেন। এখন তাঁদের পারফরম্যান্স নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। কিছু বিতর্কিত মন্তব্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। এ অবস্থায় উপদেষ্টা পরিষদের পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনার বিষয়টিও সামনে এসেছে।’’

নুর বলেন, ‘‘এই সময়ে বিশেষ করে আমাদের দেশপ্রেমিক সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে নানা ধরনের বিষোদগার ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে সরকারকে বা জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানোর একটা চেষ্টা চলছে। সরকার যেন সামরিক বাহিনীসহ পুরো প্রশাসনকে আস্থায় নিয়ে কাজ করে, তাদের সঙ্গে যেন একটি ভালো আন্ডারস্ট্যান্ডিং বজায় থাকে।’’

নুরুল হক নুর অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের উপদেষ্টাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘অনেক উপদেষ্টা বা সরকারের সহকারী হিসেবে যাঁরা দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করতে চাইলেও অনেক সময় সাড়া পাওয়া যায় না। এ নিয়ে সব দলই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। প্রধান উপদেষ্টাও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন এবং বলেছেন, যোগাযোগ যেন আগের চেয়ে আরও ঘনঘন হয়।’’

বন্দর-করিডর ইস্যুতে সিদ্ধান্ত না নেওয়ার আহ্বান
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমরিং টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে দেওয়া ও করিডর ইস্যু নিয়েও উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন নুর। তিনি বলেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারকে এ বিষয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানিয়েছি।’’

নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে অস্পষ্টতা আছে বলেও মন্তব্য করেন নুর। ‘‘সরকার বলেছে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে, কিন্তু এর মধ্যে রোজা, কুরবানি, ঈদ, ইজতেমা সব পড়ে যাচ্ছে। তাই আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেছি, যেন অন্তত একটি সুনির্দিষ্ট মাস ঘোষণা করা হয় যাতে নাগরিক ও রাজনৈতিক দলগুলো প্রস্তুতি নিতে পারে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘নির্বাচন যত দ্রুত হবে, তত দ্রুত দেশ সংকট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পাবে। সেটাই আমাদের সকলের স্বস্তির হবে।’’


নুর বলেন, ‘‘নির্বাচন ও সংস্কার যদি ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার করে, তবে সেটাই আমরা চাই। সরকার বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ চাপে থাকলেও আমরা তাঁকে পূর্ণ সহযোগিতা করব।’’

তিনি আরও জানান, বৈঠকে রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। ‘‘আমাদের বক্তব্য ছিল মোটামুটি এক, সবাই জানাচ্ছিলেন তাঁদের উদ্বেগ ও প্রস্তাব।’’

নুর স্মরণ করিয়ে দেন, ‘‘নয় মাস আগে আমরা বলেছিলাম, যদি জাতীয় সরকার বা অভ্যুত্থান অংশগ্রহণকারী সরকার না হয় এবং নির্দিষ্ট বলয়ের সরকার হয়, তবে তারা দেশ চালাতে পারবে না। নয় মাস আগে যেভাবে ডান-বাম সবাই সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছিল, সেটা ছিল ড. ইউনূসের ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতার জন্য। এখন আর সেই সমর্থন আগের মতো নেই। কারণ, সরকারের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে হতাশা তৈরি হয়েছে।’’

নুর বলেন, ‘‘প্রধান উপদেষ্টা সব দলের কথা শুনেছেন। টু দ্য পয়েন্ট উত্তর দেননি, আবার সবকিছু খোলাসাও করেননি। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, অনেক উপদেষ্টাই আগে পরিচিত ছিলেন না। এখন তাঁদের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিতর্ক তৈরি হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের পরামর্শ নিয়ে যেন ভবিষ্যতে সরকার সমস্যার সমাধান করে এবং যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে, এই আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।’’

নুরুল হক নুর বলেন, ‘‘আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে আমাদের উদ্বেগ জানিয়েছি। আশা করি, সরকার বুঝতে পেরেছে যে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে যে কনসার্ন তৈরি হয়েছে, সেটি বিবেচনায় নিয়ে তাঁরা নির্বাচন ও জাতীয় ইস্যুগুলো নিয়ে সুনির্দিষ্ট অবস্থান নেবেন।’’

আফরোজা

আরো পড়ুন  

×