
ছবি: সংগৃহীত।
বাংলাদেশে জমি কেনাবেচা, হস্তান্তর বা ব্যাংক লোন নিতে জমির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জমি সংক্রান্ত আইনি কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হলে পর্চা বা খতিয়ান, দলিল এবং মৌজা ম্যাপ সংগ্রহ করা জরুরি। এই কাগজপত্র ছাড়া জমি ক্রয়-বিক্রয় কিংবা মালিকানা সংক্রান্ত যে কোনো আইনি কার্যক্রমে জটিলতা দেখা দিতে পারে। সরকারি বিভিন্ন দপ্তর থেকে এসব কাগজ সংগ্রহ করা সম্ভব।
জমির খতিয়ান বা পর্চা মূলত চারটি সরকারি অফিস থেকে সংগ্রহ করা যায়—ইউনিয়ন ভূমি অফিস, উপজেলা ভূমি অফিস, জেলা প্রশাসকের (ডিসি) অফিস এবং সেটেলমেন্ট অফিস। ইউনিয়ন ভূমি অফিসে খতিয়ান বা পর্চার বালাম বহি সংরক্ষিত থাকলেও এখান থেকে খতিয়ানের মূল কপি পাওয়া যায় না। তবে জমির খতিয়ান নম্বর জানা না থাকলে এই অফিস থেকে সেটি জানা সম্ভব। এছাড়া ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের কাজও এই অফিসে সম্পন্ন হয়। উপজেলা ভূমি অফিস মূলত নামজারি বা খারিজ (মিউটেশন) সংক্রান্ত কাজের জন্য পরিচিত। এখান থেকে খসড়া খতিয়ান সংগ্রহ করা গেলেও সার্টিফাইড কপি (কোর্ট পর্চা) পাওয়া যায় না।
অন্যদিকে, জেলা ডিসি অফিস থেকে সার্টিফাইড খতিয়ান সংগ্রহ করা যায়, যা সব জায়গায় গ্রহণযোগ্য এবং আইনি কার্যক্রমের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নতুন রেকর্ড বা জরিপ সংক্রান্ত খতিয়ান ও মৌজা ম্যাপ সেটেলমেন্ট অফিস থেকে পাওয়া যায়। নতুন জরিপ অনুযায়ী রেকর্ড সংশোধনের প্রয়োজন হলে সেটেলমেন্ট অফিসে যোগাযোগ করতে হয়। খতিয়ান সংগ্রহের ক্ষেত্রে সরকারি নির্ধারিত ফি থাকলেও বিভিন্ন স্থানে সিন্ডিকেটের কারণে ব্যয় কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।
জমির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাগজ হলো দলিল, যা মূলত উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এবং জেলা রেজিস্ট্রি অফিস বা সদর রেকর্ড রুম থেকে সংগ্রহ করা যায়। উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নতুন দলিল রেজিস্ট্রেশন করা হয় এবং এখান থেকে নতুন দলিলের নকল ও মূল কপি সংগ্রহ করা সম্ভব। তবে পুরাতন দলিল বা বায়া দলিল এখান থেকে পাওয়া যায় না। জেলা রেজিস্ট্রি অফিস থেকে নতুন ও পুরাতন দলিলের সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করা সম্ভব, যা জমি সংক্রান্ত আইনি কার্যক্রমের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জমির মালিকানা নিশ্চিত করতে মৌজা ম্যাপ বা নকশা সংগ্রহ করাও জরুরি। সাধারণত এই ম্যাপ দুটি জায়গা থেকে সংগ্রহ করা যায়—জেলা ডিসি অফিস এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর (DLR)। জেলা ডিসি অফিস থেকে সিএস, এসএ, আরএস, বিএস যেকোনো মৌজা ম্যাপ সংগ্রহ করা সম্ভব। তবে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর, যা ঢাকার তেজগাঁও সাতরাস্তার মোড়ে অবস্থিত, সেখানে সারা বাংলাদেশের যেকোনো মৌজা ম্যাপ পাওয়া যায়। এখান থেকে সিএস, এসএ, আরএস, বিএস মৌজা ম্যাপ, জেলা ম্যাপ এবং বাংলাদেশ ম্যাপ সংগ্রহ করা সম্ভব এবং এই অফিসের ম্যাপের গ্রহণযোগ্যতাও অনেক বেশি।
জমি সংক্রান্ত যে কোনো ধরনের জটিলতা এড়াতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিক সময়ে সংগ্রহ করা উচিত। সরকারি নির্ধারিত অফিসগুলো থেকে যথাযথ নিয়ম মেনে খতিয়ান, দলিল ও মৌজা ম্যাপ সংগ্রহ করলে জমি সংক্রান্ত লেনদেন ও হস্তান্তর প্রক্রিয়া সহজ হবে এবং ভবিষ্যতে কোনো ধরনের আইনি জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
সায়মা ইসলাম