
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ প্রত্যাখ্যান
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ প্রত্যাখ্যান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পদায়নসহ ১৫ দাবি করেছে বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন। এ ছাড়াও উপসচিব পুলে উন্মুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন তারা। মঙ্গলবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা এ কথা বলেন।
লিখিত বক্তব্যে অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ তাজিব উদ্দিন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারে আমাদের প্রত্যাশা ছিল জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ২৬ ক্যাডারের মধ্যে বিরাজিত আন্তঃ ও অন্তঃক্যাডার বৈষম্যসমূহ চিহ্নিত করে রাষ্ট্রের সিভিল প্রশাসনকে অধিকতর কার্যকর, গতিশীল ও যুগোপযোগী করার জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করবে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে ক্যাডার বহির্ভূত রাখার যে পরিকল্পনার কথা উঠে এসেছে তা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১৬ হাজার কর্মকর্তাকে তীব্রভাবে আহত করেছে। এ আঘাত এতটাই প্রকট যে, এটা শিক্ষা ক্যাডারের সব সদস্যকে অন্তহীন উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এটা রাষ্ট্রকে দীর্ঘ মেয়াদে অস্থিতিশীল করার মতো একটি পদক্ষেপ বলে আমরা মনে করি।
তাই বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আমরা এ সুপারিশকে প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা এ জাতীয় উদ্যোগের নিন্দা জানাই এবং সংস্কারের নামে এ ধরনের আত্মঘাতী পরিকল্পনা থেকে দ্রুত সরে আসার জন্য সংশ্লিষ্ট কমিশনকে অনুরোধ করছি।
সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের পক্ষ থেকে ১৫ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
দাবিগুলো হচ্ছে- বিসিএস সাধারণ শিক্ষাকে ক্যাডার বহির্ভূত করার পরিকল্পনা ও উদ্যোগ থেকে সরে আসার সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে; সকল প্রকার কোটা-বৈষম্য তুলে দিয়ে মেধার ভিত্তিতে সরকারের উপসচিব পদে যোগদান নিশ্চিত করার জন্য তা শতভাগ উন্মুক্ত করে দিতে হবে এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সকল ক্যাডারের কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে সমান সুযোগ দিতে হবে; মন্ত্রণালয়সহ ক্যডার সংশ্লিষ্ট সকল পদে স্ব-স্ব ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন করতে হবে; বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার একটি পেশা-বিশেষায়িত ক্যাডার হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার অন্তর্গত সাধারণ ও মাদ্রাসা শিক্ষা ধারার সকল শিক্ষা স্তরে প্রশাসন ক্যাডারের অপেশাদার ও অশিক্ষক কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করতে হবে এবং সাধারণ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট যেসব দপ্তরের নিয়োগ বিধিমালায় অন্যায্যভাবে প্রশাসন ক্যাডারের পদস্তর উল্লেখ করে একতরফা গেজেট করা হয়েছে, তা সংশোধন করে তাতে শিক্ষা ক্যাডারের পদস্তর সংযোজন করতে হবে; বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে ৬ স্তরের পদসোপান প্রতিষ্ঠা করতে হবে; বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যাপক পদকে ৩য় গ্রেডে উন্নীত করতে হবে এবং আনুপাতিক হারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ১ম, ২য় ও ৩য় গ্রেডের পদ সৃষ্টি করতে হবে; প্রতিটি শিক্ষাস্তরের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম তদারকির জন্য অঞ্চল, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদ সৃষ্টি ও দপ্তর স্থাপন করতে হবে; কলেজ ও দপ্তর-অধিদপ্তরসমূহে বিদ্যমান প্যাটার্ন অনুযায়ী শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রাপ্য পদ সৃজন করতে হবে; নিয়মিত রুটিনে বছরে দুইবার সকল টায়ারে একই সাথে পদোন্নতি দিতে হবে; শিক্ষাকে নন-ভেকেশন ডিপার্টমেন্ট ঘোষণা করতে হবে এবং অর্জিত ছুটি নিশ্চিত করতে হবে; অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষদের প্রাধিকারের ভিত্তিতে গাড়ি প্রদান নিশ্চিত করতে হবে; বদলি নীতিমালা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে; ক্যাডারে পার্শ্ব প্রবেশ বন্ধ করতে হবে এবং ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স-এ শিক্ষা ক্যাডারের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ তাজিব উদ্দিন। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক রুহুল কাদির, অধ্যাপক খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল, অধ্যাপক সৈয়দ মইনুল হাসান এবং অধ্যাপক মুহাম্মদ ফাতিহুল কাদির প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।