ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

বছরে ৮ বিলিয়ন ডলার পাচার হয় ॥ শামসুল আলম

বিশ্বব্যাংক টাকা দেয়, তাদের কথা শুনতে হবে ॥ অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:১২, ২১ জুন ২০২৪

বিশ্বব্যাংক টাকা দেয়, তাদের কথা শুনতে হবে ॥ অর্থমন্ত্রী

আবুল হাসান মাহমুদ আলী

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, ‘বাজেট সবেমাত্র দিয়েছি, এখনো পাস হয়নি। প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার সম্ভাবনা রয়েছে।’ এ সময় বিশ্বব্যাংক প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশ ভালো আছে। বিশ্বব্যাংক যা বলছে, আমাদের শুনতে হবে, কারণ তারা আমাদের টাকা দেয়। আমাদের টাকা লাগবে। আপনি কি টাকা দেন? আপনি টাকা দেন, আপনার কথা শুনবো।’ সমালোচকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কই সরকারতো পড়ল না। দেশ তো দেউলিয়া হলো না। বিশ্বব্যাংক কিছু বোঝে না, আপনি সবকিছু বোঝেন ?’
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে ‘বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতি : প্রবৃদ্ধি, মুদ্র্রাস্ফীতি, খাদ্য ও পুষ্টি শীর্ষক’ আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। সেমিনারে মুখ্য আলোচক ছিলেন প্রফেসর ড. শামসুল আলম, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।
মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে ডলার সংকট প্রসঙ্গে সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, ‘টাকা পাচার থেকেই ডলার সংকটের শুরু বলে মনে করেন অনেকে। বছরে ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়।

এ কারণে ডলার সংকট দেখা যায়। এটা রোধ করার পদক্ষেপ দরকার।’ বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসানের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, সম্মানিত অতিথি ছিলেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বাংলাদেশ প্র্রতিনিধি ডা. জিয়াওকুন শি।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা বাজেট দিয়েছি অনেক চিন্তাভাবনা করে। এ বাজেট জনবান্ধব। কোনো কিছু থাকলে পুনর্বিবেচনা করার সুযোগ আছে। বাজেট এখনো পাস হয়নি, এটা প্রস্তাবিত বাজেট। অর্থনীতি নিয়ে প্রিম্যাচিউর (অপরিপক্ক) বক্তব্য দেবেন না। আমি আপনাদের নিরাশ করতে চাই না। শেখ হাসিনা সরকার জনবান্ধব।
তিনি বলেন, কৃষি হচ্ছে দেশের আসল জায়গা। কৃষি না থাকলে সর্বনাশ। অনেকে বলে কী বাজেট দিয়েছে, এ সরকার পড়ে যাবে। সরকার তো পড়ে নাই। আবার অনেকে বলে দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। কোথায় দেউলিয়া হয়েছে? দেউলয়া মানে কী? দেখেন আমরা দেউলিয়া হয়েছি কি না। বিশ্বব্যাংক আবার আমাদের ঋণ দিচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা যে বাজেট দিলাম সেটা বোঝার চেষ্টা করুন। দেখবেন এটা জনগণের বাজেট। বাজেটে যেসব প্রস্তাব পেয়েছি, সেগুলো আমরা দেখব। বাজেট এখনো পাস হয়নি। আপনাদের প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার সুযোগ আছে, সেটা সম্ভব। একইসঙ্গে পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেটা নেওয়ারও সময় আছে। 
সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, ঋণের ২২ শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ব্যাংকের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এর রাশ টানতে হবেই। ব্যাংক কমিশন করলে ভালো, না হলে অন্তত শক্তিশালী একটা কমিটি করা উচিত বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদদের নিয়ে। কর ন্যায়পাল নিয়োগ, এনবিআর ও আইআরডির কাজ আলাদা করা উচিত। এডিপি বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। মূল্যস্ফীতি কমাতে আমদানি নীতি সহজীকরণ জরুরি। বাজারে সরবরাহ ঠিক রাখলে চাহিদা ও জোগান ঠিক থাকে।  
তিনি বলেন, সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে করমুক্ত সুবিধা প্রত্যাহারের মতো প্রস্তাব সাহসী। ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ পর্যায়ে উৎসে কর ১ শতাংশ কমানো মূল্যস্ফীতি কমাতে ভূমিকা রাখবে। সামষ্টিক অর্থনীতির ইতিবাচক দিক, ব্যাংকে সঞ্চয় বেড়েছে, রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ, বোরো ধান বাম্পার, শাকসবজি, প্রবাসী আয় ভালো, কিছু পণ্যের দাম কমছে।
সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাজেটের পর দাম বাড়েনি। মে পর্যন্ত ১১ মাসে প্রবাসী আয় দুই বিলিয়ন বেড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল হচ্ছে। অফশোর ব্যাংকের মাধ্যমে ৮.৫ শতাংশ সুদে বিদেশী মুদ্রার আমানত আসবে বলে আশা করা যায়।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, এবারের বাজেটে সরকার বেশকিছু সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। মূল্যস্ফীতি কমানোর উদ্দেশ্যে সরকার এবার বাজেট দিয়েছে। ঘাটতিও কমানো হয়েছে, যা খরচ কমানোর স্বার্থে করা হয়েছে বলে মনে হয়।
তিনি বলেন, সেজন্য বলছি, এটি একটি সাহসী বাজেট। এই বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমবে। কারণ, নয়-ছয় সুদের হার উঠিয়ে নেওয়ায় এতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। করপোরেট করহার কমানো হয়েছে। উৎপাদন বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তি বা যন্ত্রপাতি আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সামষ্টিক অর্থনীতিতে বাজেটের ইতিবাচক দিক হলো রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অর্থমন্ত্রীকে কর আদায়ে জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে শামসুল আলম বলেন, এনবিআরকে শুধু কর আদায়ে ব্যবহার করুন। তবে ঋণখেলাপি কীভাবে কমানো যায় তা চিন্তা করতে হবে। ব্যাংক একীভূত করার যে উদ্যোগ তার ফল অনিশ্চিত।
দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে জানিয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, মানুষের পকেটে টাকা আছে। এক সময় গ্রামে মাছ-মাংস পাওয়া যেত না, সে দশা এখন নেই। মানুষের পকেটে টাকা না থাকলে লাখ টাকা দিয়ে কোরবানি দিতো না।
তিনি বলেন, এক সময় বড় বোয়াল সারাদিন বিক্রি হতো না, বাজারে সকাল থেকে সন্ধ্যা পড়ে থাকত। এখন বড় বোয়ালের তিনজন ক্রেতা দাঁড়িয়ে থাকেন। গ্রামের মানুষেরও সক্ষমতা বেড়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত চার মাসে এক কোটি পরিবারকে প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য বিতরণ করেছি। স্থায়ী দোকানে জুন মাস থেকে সারাদেশে ১০ হাজার ডিলার করে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য দেবো।
ভর্তুকির কারণে রিজার্ভ কমেছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ১৪ বিলিয়ন গেছে সার-তেল আমদানির জন্য। ৪৮ বিলিয়ন থেকে এমনিতে ২০ হয়নি। কৃষি গবেষণা দরকার। পচনশীল পণ্য কাজে লাগাতে হবে। কোন মাসে কত প্রয়োজন এটা নির্ণয় করতে হবে। বাজারে কোনো পণ্যের যেন ঘাটতি না থাকে সেজন্য আমরা কাজ করছি। মিয়ানমার থেকে আদা, মরিচ আমদানির চেষ্টা করছি। ১২ মাস ভোক্তার কোনো পণ্যের যেন কোনো ঘাটতি না থাকে। ডলার দাম বাড়লেও তেলের দাম আমরা স্থিতিশীল রাখছি। ১২ মাস সাপ্লাই চেইন ঠিক করতে চাই।

×