ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

১৫৭টিতে ভোট ॥ কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা

দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:২৩, ২১ মে ২০২৪

দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ

দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনের জন্য কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয় ব্যালট বাক্স

দ্বিতীয় ধাপে আজ মঙ্গলবার সারাদেশের ১৫৭ উপজেলা পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। এ নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি মূল চ্যালেঞ্জ হলেও ইসি বলছে, যত ভাগ ভোট পড়ুক তাতেই তারা খুশি। সেই সঙ্গে ভোট গ্রহণকালে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও নির্বাচনে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সতর্ক রয়েছে।

রবিবার মধ্যরাতেই শেষ হয়েছে প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচার। ইতোমধ্যে দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপি থেকে ৭১ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের বহিষ্কারের পরও স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন।

প্রথম ধাপের নির্বাচনেও বিএনপির ৮০ জন প্রার্থী ছিলেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ২৮ জন প্রার্থীর মধ্যে ৭ জন বিজয়ী হয়েছেন। এবারও বিভিন্ন উপজেলায় বহিষ্কৃত বিএনপি নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ বিজয়ী হবেন বলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা প্রত্যাশা করছেন। 
৮ মে প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলা নির্বাচনে ভোট পড়ে মাত্র ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ। তাই এ নির্বাচনের পর থেকেই ভোট কম পড়ার বিষয়টি ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়েও কম ভোট পড়লÑ এ নিয়ে জনমনে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই।

এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন ও ক্ষমতাসীন দল নানামুখী প্রশ্নের মুখে পড়েছে। তাই এবার যাতে বেশি সংখ্যক ভোটার কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান করে সে জন্য ইসি ও সরকারের পক্ষ থেকে অংশীজনের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। 
ভোট পড়লেই খুশি ॥ নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, জাতীয় কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কোনো বিধিনিষেধ বা নিয়ম নেই যে, কত শতাংশ ভোট পড়লে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। এগুলো নিয়ে ইসি ভাবে না। যে কোনো শতাংশ ভোট পড়লেই খুশি। ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে ইসি উদ্বিগ্ন নয়।
সোমবার নির্বাচন কমিশন ভবনে উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়া প্রসঙ্গে ইসি আলমগীর বলেন, ভোটাররা ভোট দিতে ইচ্ছুক। তারা কেন্দ্রে আসবেন। ধান কাটার মৌসুম, বৈরী আবহাওয়া, বড় রাজনৈতিক দল নির্বাচনে আসছে না, এসব কারণে ভোটার উপস্থিতি কম।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা-অনাস্থার বিষয় নয়, পছন্দের প্রার্থী না পাওয়ায় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ভোটের উপস্থিতি কম। তবে কত শতাংশ ভোটার উপস্থিত হলে সন্তোষজনক হবেÑ এ বিষয়ে কমিশনের কোনো দায়বদ্ধতা নেই।
দ্বিতীয় ধাপের ভোট, ভোটার অংশগ্রহণ কম, চ্যালেঞ্জ মনে করেন কি নাÑ এ বিষয়ে ইসি আলমগীর বলেন, দ্বিতীয় ধাপের ভোট যাতে সুষ্ঠুভাবে হতে পারে এ জন্য ব্যাপক সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন হয়েছে। প্রথম ধাপের নির্বাচনেও তাই করেছি। মঙ্গলবারের নির্বাচনও তেমন হবে। কমিশনের দায়িত্ব নির্বাচন শান্তিপূর্ণ রাখা।

নির্বাচন কমিশনের আন্তরিকতার কোনো কমতি নেই। সারাবিশ্বে ভোটারদের ভোটের প্রতি আগ্রহ কমছে। বিভিন্ন কারণে ভোটাররা অংশ নিতে চান না। ভালো প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ না নিলেও অনেক সময় ভোটাররা ভোট দিতে যান না।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি ভোট বর্জনের জন্য লিফলেট বিতরণ করছে, এটা তাদের রাজনৈতিক অধিকার। তবে কোনো সহিংসতা করলে সেক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তা ব্যবস্থা নেবেন। কমিশনের প্রতি আস্থা নেই এটা ঠিক নয়, কমিশন সবসময় শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করে। কারও প্রতি কমিশনের আলাদা কোনো পক্ষপাতিত্ব নেই।
চারধাপের উপজেলা নির্বাচন শুরু হয় ৮ মে থেকে। ৫ জুন পর্যন্ত চার ধাপে শেষ হবে ৪৯৫টির মধ্যে ৪৮১টি উপজেলার নির্বাচন। প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত হয় ১৩৯ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। দ্বিতীয় ধাপে আজ ২১ মে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৫৭টি উপজেলায় নির্বাচন। তৃতীয় ধাপে ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে ১১২ উপজেলার নির্বাচন।

আর চতুর্থ ধাপে ৫ জুন অনুষ্ঠিত হবে ৫৫ উপজেলার নির্বাচন। প্রথম ধাপের  ২২টিতে ভোটগ্রহণ হয় ইভিএমে। আজ দ্বিতীয় ধাপে ৮টি উপজেলায় ইভিএমে ভোট হবে। তৃতীয় ধাপে ২১টি উপজেলায় ভোট হবে ইভিএমে। আর চতুর্থ ধাপে ২টি উপজেলায় ভোট হবে ইভিএমে।

দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ভোটগ্রহণকালে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে প্রতিটি কেন্দ্র ও আশপাশের এলাকায় থাকবে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে ১৭ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৯ জন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। আর দুর্গম এলাকায় সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন ও ঝঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২০ থেকে ২১ জন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে।

সাধারণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ৪৫৭ প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করবে। এই নির্বাচনে জরুরি সেবা মিলবে ৯৯৯ নম্বরে। নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালনে প্রতি ইউনিয়নে থাকবে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ ছাড়া মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে, বিশেষ করে বিজিবির প্রতিটি মোবাইল টিমের সঙ্গে একজন করে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন। ভোটের দিন আজ মঙ্গলবার ১৫৭ উপজেলায় সাধারণ ছুটি থাকছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি সবাইকে জানানো হয়।
দ্বিতীয় ধাপে সারাদেশের ৬৩টি জেলার মধ্যে যে ১৫৭টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচন হবে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- রংপুর বিভাগের পঞ্চগড় জেলার বোদা ও দেবীগঞ্জ; ঠাকুরগাঁও জেলার সদর ও রাণীশংকৈল; নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর, কিশোরগঞ্জ ও জলঢাকা; দিনাজপুর জেলার বিরল, কাহারোল, বীরগঞ্জ ও বোচাগঞ্জ; লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ ও আদিতমারী; রংপুর জেলার মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জ; কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট, উলিপুর ও সদর; গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ী ও সদর।
উল্লেখ্য, দেশে প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ সালে। এর পর ১৯৯০ সালে দ্বিতীয়বার ও ২০০৯ সালে তৃতীয়বার, ২০১৪ সালে চতুর্থবার এবং ২০১৯ সালে পঞ্চমবার উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৯ সালে দেশে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

সে সময় ৪৮৮টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ৪৫৫টির নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হয়। বাকি উপজেলাগুলোর নির্বাচন পরে অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৯ সালের ১০ মার্চ প্রথম ধাপে ৮২টি উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর পর ১৮ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে ১২৩টি, ২৪ মার্চ তৃতীয় ধাপে ১২২টি, ৩১ মার্চ চতুর্থ ধাপে ১০৬টি এবং ১৮ জুন পঞ্চম ধাপে ২২টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

×