ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে বড়দিন উদ্্যাপন

বিশ্বশান্তি কামনায় গির্জায় গির্জায় প্রার্থনা

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৫০, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩

বিশ্বশান্তি কামনায় গির্জায় গির্জায় প্রার্থনা

বড়দিন উপলক্ষে হোটেল সোনারগাঁওয়ে শিশুরা সান্তাক্লজের সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠে

বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে এবং নানা আয়োজনে পালিত হয়েছে খ্রিস্টানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন। গির্জায় গির্জায় প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিনটির আনুষ্ঠানিকতা। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা ধর্মীয় আচার, আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে দিনটি উদ্যাপন করেন। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
বড়দিন পালন উপলক্ষে দেশের সংশ্লিষ্ট গির্জা কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। উৎসব উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের গির্জা সাজানো হয়। আলোকসজ্জা করা হয় গির্জার ভেতরে-বাইরে। রঙিন কাগজ, ফুল ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বাতি দিয়ে সাজানো হয় ক্রিসমাস ট্রি এবং প্রতীকী গোয়ালঘর।
সোমবার সকাল আটটায় রাজধানীর কাকরাইলের সেন্ট মেরিস ক্যাথিড্রালে প্রার্থনার মধ্য দিয়ে বড়দিনের উৎসব শুরু হয়। প্রার্থনায় যিশুর মহিমাকীর্তন এবং শান্তি ও ন্যায়ের কথা বলা হয়। এ সময় বিশ্বশান্তির জন্য প্রার্থনাও করা হয়। প্রার্থনায় অংশ নিতে ভোরে চার্চে সমবেত হন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা। আবালবৃদ্ধবনিতা ভোর থেকেই আসেন গির্জায়। সকাল সাতটায় ফার্মগেট এলাকার তেজগঁাঁও ধর্মপল্লী গির্জায় প্রার্থনা শুরু হয়। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা এই প্রার্থনায় অনেক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী অংশ নেন। এ ছাড়া দেশের সব গির্জাতেও কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা বড়দিনের উৎসব পালন করেন। 
জানা গেছে, তেজগাঁও ধর্মপল্লী গির্জায় (ফার্মগেট) সকাল ৭টা ও সকাল ৯টায় খ্রিস্টজাগ ও প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। লুর্দের বাণী গির্জাতেও (মহাখালী) সকাল ৯টায় প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া মিরপুর গির্জায় (বড়বাগ, মিরপুর-২) সকাল ৯টায়, কাফরুল ধর্মপল্লীতে সকাল ৯টায়, ঐশী করুণা গির্জায় (ভাটারা) সকাল ৮টায়, ডি ম্যানেজড গির্জায় (নয়ানগর) সকাল ৭টা ও সকাল ৯টায়, সাধ্বী খ্রিস্টিনার গির্জায় (আসাদগেট) সকাল সাড়ে ৮টায়, পবিত্র ক্রুশ গির্জায় (লক্ষ্মীবাজার) সকাল ৯টায়, সেন্ট মেরিস ক্যাথিড্রালে (কাকরাইল) সকাল সাড়ে ৮টায় খ্রিস্টজাগ ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রসঙ্গত, খ্রিস্টান ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট ২৫ ডিসেম্বর বেথেলহেমে জন্মগ্রহণ করেন। স্রষ্টার মহিমা প্রচার এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতে তিনি জন্মছিলেন। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, যিশুর জন্ম হয়েছিল গোয়ালঘরে। সেই স্মৃতিকে স্মরণ করে বড়দিনে গির্জাগুলোতে প্রতীকী গোয়ালঘর তৈরি করা হয়েছে। অনেকে তাদের বাড়িতেও তৈরি করেছেন গোয়ালঘর।
রাজধানীর কাকরাইল ও তেজগাঁওয়ের দুটি চার্চ ঘুরে দেখা যায়, খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা বড়দিন পালন করতে গির্জায় এসেছেন। তারা যিশুখ্রিস্টের শান্তির বার্তা নিজের মধ্যে ধারণ করতে সৃষ্টি কর্তার কাছে প্রার্থনা করছেন। প্রার্থনা উপলক্ষে হলেও অনেকে পরিবার, আত্মীয়স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে ঘোরাঘুরি ও আড্ডাতে মেতে ছিলেন। গির্জায় এসে প্রিয় মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করে রাখছেন সবাই। তবে তরুণদের বেশিরভাগই সেলফিতে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে।
দুই সন্তান ও স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে কাকরাইলের সেন্ট মেরিস ক্যাথিড্রালে এসেছেন স্পন্দন রোজারিও। তিনি সৃষ্টি কর্তার কাছে নিজের পরিবার এবং দেশের মানুষের কল্যাণে প্রার্থনা করেছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে সাধারণ মানুষের যেন ক্ষতি না হয় সেই চাওয়াও ছিল তার।
স্পন্দন বলেন, এ দিনটি আমাদের জন্য বিশেষ দিন। গডের কাছে চাওয়ার দিন। সন্তানরা যেন ভালো মানুষ হতে পারে গডের কাছে সে প্রার্থনাই করেছি। দেশের মানুষের জন্য প্রার্থনা করেছি। নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো ধর্মের মানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটাও প্রার্থনায় বলেছি। স্পন্দনের স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা রোজারিও বলেন, খুব ভালো লাগছে। পরিবারে সবাই একসঙ্গে চার্চে এসেছি। সন্তানরাও খুব খুশি। 
রমানা চার্চের প্রধান পুরোহিত ফাদার অ্যালবার্ট রোজারিও বলেন, সকালে প্রার্থনা হয়েছে। পুণ্যার্থীরা চার্চে আসছে, গডের কাছে প্রার্থনা করছে। রাত আটটা পর্যন্ত লোকজন আসবে। দেশের কল্যাণে প্রার্থনা করা হচ্ছে গির্জাগুলোতে। আমাদের চাওয়া বাংলাদেশ যেন ভালো থাকে। আমাদের এখন আনন্দের মধ্যে একটা ভয় কাজ করে, কখন কোথায় বোমা ফাটায় সেই ভয়। বাসে, ট্রেনে কোথাও মানুষ নিরাপদ নয়। সব সময় একটা ভয় কাজ করে। মানুষ ভয়ের মধ্যে থাকে। আমরা সবাই প্রার্থনা করছি, বাংলাদেশে যেন শান্তি বজায় থাকে। নির্বাচনকে সামনে রেখে যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।
জবি সংবাদদাতা জানায়, পুরান ঢাকার গির্জাগুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয়েছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব বড়দিন বা ক্রিসমাস ডে। বড়দিনে পুরান ঢাকার বিখ্যাত চার গির্জা লক্ষ্মীবাজারের হলিক্রস, সদরঘাট ব্যাপ্টিস্ট চার্চ, আরমানিটোলার আর্মেনিয়ান গির্জা ও শাঁখারি বাজারের সেন্ট থমাস চার্চে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের এ উৎসব পালন করতে দেখা যায়। ছবি তোলা, যিশুর জন্ম উপলক্ষে কেক কাটা, প্রার্থনা করাসহ নানা আয়োাজনে দিনটি পালিত হয়েছে। 
ঢাকা ব্যাপ্টিস্ট চার্চের পালক রেভারেন বার্নাবাস হ্যামরোন বলেন, বড়দিন হলো ঈশ্বরপুত্র যিশুখ্রিস্টের পৃথিবীতে আগমনের দিন। মানবজাতিকে পাপ থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য তিনি পৃথিবীতে আসেন। বর্তমান বিশ্ব যুদ্ধ-বিগ্রহে অস্থির। এসময় যিশুর দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। হলিক্রস চার্চে প্রার্থনায় আসা বিকাশ বাড়ৈ বলেন, যিশু শান্তির বার্তা নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু ইহুদিরা তাকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করে। তিনি আবারও পৃথিবীতে ফিরে আসবেন।
এদিকে গির্জাগুলোয় নিরাপত্তায় এদিন মোতায়ন করা হয় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুলিশ। সকাল থেকে সারাদিনই পুলিশ সদস্যরা গির্জার ভেতরে ও বাইরে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলেন। 
প্রধান বিচারপতি কাকরাইল চার্চে ॥ বড়দিন উপলক্ষে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। সোমবার বিকেলে আর্চ বিশপের আমন্ত্রণে সস্ত্রীক কাকরাইলের সেন্ট মেরি’স ক্যাথেড্রাল চার্চে যান প্রধান বিচারপতি। 
সেখানে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। প্রধান বিচারপতি সবাইকে ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার আহ্বান জানান। এ সময় সেন্ট ম্যারি ক্যাথেড্রাল চার্চের আর্চ বিশপ, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান, আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান, প্রধান বিচারপতির একান্ত সচিব হাসান মো. আরিফুর রহমানসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। 
পুরান ঢাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ ॥ জবি সংবাদদাতা জানান, পুরান ঢাকার গির্জাগুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয়েছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব বড়দিন বা ক্রিসমাস ডে। সোমবার বড়দিনে পুরান ঢাকার বিখ্যাত চার গির্জা লক্ষ্মীবাজারের হলিক্রস গির্জা, সদরঘাট ব্যাপ্টিস্ট চার্চ, আরমানিটোলার আর্মেনিয়ান গির্জা ও শাঁখারি বাজারের সেন্ট থমাস চার্চে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের এ উৎসব পালন করতে দেখা যায়। ছবি তোলা, যিশুর জন্ম উপলক্ষে কেক কাটা, প্রার্থনা করাসহ নানা আয়োজনে দিনটি পালিত হয়েছে। 
গির্জায় প্রদর্শন করা হয় সদ্যজাত যিশু, যিশুর মা মারিয়া ও পূর্ণবয়স্ক যিশুর মূর্তি। খ্রিস্টানরা সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পার্বত্যাঞ্চল প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি  থেকে জানান,  যিশুখ্রিস্টের জন্মতিথি উপলক্ষে খাগড়াছড়ির শহর, শহরতলির বিভিন্ন স্থানে শুভ বড়দিন উদ্যাপিত হয়েছে। নানা রঙের সাজে সেজেছে গির্জা, চার্চ ও ধর্মীয় প্রচার প্রতিষ্ঠানসমূহ। বিভিন্ন চার্চ ও গির্জায় আনুষ্ঠানিকভাবে কেক কেটে বড়দিনের উৎসব পালন করেন খ্রিস্টান ধর্মপ্রিয়রা। খিস্ট ধর্মাবলম্বীরা বাড়িতে বাড়িতে চলছে নানা অনুষ্ঠান।
খাগড়াছড়ি জেলার ৯ উপজেলায় প্রায় শতাধিক ব্যাপ্টিস্ট, ক্যাথলিক, সেভেন ডে অ্যাডভেন্টিস্ট, প্রেসবেটেরিয়ান এবং গসফেল ফর এশিয়াসহ বিভিন্ন খ্রিস্টধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বড়দিন উপলক্ষে পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালন করে। 
এ ছাড়াও দেশ ও বিশ্বশান্তি কামনা করে প্রার্থনা, শিশুদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি,  চকোলেট ও শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ। 
নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান থেকে জানান, বান্দরবান জেলায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদ্যাপিত হয়েছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন। এ উপলক্ষে জেলার পাহাড়ি জনগোষ্ঠী বম, লুসাই, খুমি, পাংখোয়া ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী এ উৎসব পালন করেছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন পাড়ার খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের গির্জাগুলোকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। সোমবার ভোর থেকে দলে দলে বান্দরবান শহরের ফাতেমা রানী ক্যাথলিক গির্জায় মিলিত হয়ে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষরা নতুন বছরে সুখ-শান্তির জন্য সমবেত বিশেষ প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করেন। 
বড়দিন উপলক্ষে জেলার সাতটি উপজেলার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের পল্লীগুলোতে জাঁকজমকভাবে বড়দিন পালন করেছেন। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে জেলায় বসবাসরত অন্যান্য জাতি গোষ্ঠীর মানুষও মেতে উঠেছে উৎসব আনন্দে। বান্দরবান জেলা সদরের ফারুকপাড়া, লাইমিপাড়া, গেৎশীমানীপাড়া, শেরনপাড়া, রুমা উপজেলার বেথেলপাড়া, মুনলাইপাড়াসহ রোয়াংছড়ি, থানচি, লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বিভিন্ন পাড়ার গির্জাগুলোতে দিনব্যাপী ধর্মীয় উৎসব উদ্যাপিত হয়েছে। 
নিজস্ব সংবাদদাতা, রাঙ্গুনিয়া থেকে জানান,  উৎসবমুখর পরিবেশে চন্দ্রঘোনা খ্রিস্টান পল্লীগুলোতে বড়দিন উৎসব পালিত হয়েছে। গতকাল সোমবার  সকাল থেকে দিনব্যাপী  নানা ধর্মীয়  অনুষ্ঠান মালার মাধ্যমে  চন্দ্রঘোনা মিশনারি  হাসপাতালের  পরিচালক প্রবীর খিয়াংয়ের বাসভবনে, জাতীয়  দলের  সাবেক  ফুটবলার ও চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বিপ্লব মারমার  বাসভবনে বনগ্রাম  জুম পল্লীতে বড়দিন উদ্যাপন হয়েছে।  রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা কুষ্ঠাশ্রম ব্যাপ্টিস্টম-লীর উদ্যোগে পাস্টর স্টিপেন মিত্রের পরিচালনায় বিশেষ প্রার্থনা, কেক কাটা ও শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সংবাদদাতা, ঝিনাইগাতী, শেরপুর থেকে জানান, খ্রিস্টান ধর্মাবম্বলীদের সব চেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ বড় দিন’ যথাযোগ্য মর্যাদার মধ্য দিয়ে শেরপুরে ৪৪টি ধর্ম পল্লীতে পালন করা হচ্ছে। ২৪ ডিসেম্বর রবিবার রাতে নিশি জাগরণী খ্রিস্টযাগের মধ্য দিয়ে উৎসবের সূচনা করা হয়। ২৫ ডিসেম্বর সোমবার সকাল ৮টায় আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মপল্লীগুলোতে প্রার্থনা, আলোচনা সভা ও কীর্তন অনুষ্ঠিত হয়।
দিবসটি জাঁকজমকভাবে আধিবাসী অধ্যুষিত ঝিনাইগাতী উপজেলার বারুয়ামারীর সাধু জর্জের ধর্মপল্লী, মরিয়মনগরসহ ১৮টি, শেরপুর সদরে ৭টি, নালিতাবাড়ীতে ৭টি, নকলায় ৩টি, শ্রীবরদীতে ৯টিসহ মোট ৪৪টি স্থানে একই সময়ে প্রার্থনা, আলোচনা সভা ও কীর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নালিতাবাড়ী, শেরপুর সংবাদদাতা জানান, দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে নানা আয়োজনে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব বড়দিন উদ্যাপিত হয়েছে।
বড়দিনের কর্মসূচির মধ্যে সোমবার সকালে গির্জায় মহাখ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করা হয়। ওই খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন ধর্মপল্লীর পালপুরোহিত রেভারেন্ড ফাদার তরুণ বনোয়ারি ও রেভারেন্ড ফাদার প্রদীপ ¤্রং।  
সংকীর্তন অনুষ্ঠানে পালপুরোহিত রেভারেন্ড ফাদার তরুণ বনোয়ারির সভাপতিত্বে মুঠোফোনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ও বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য, সংসদ উপনেতা ও স্থানীয় এমপি বেগম মতিয়া চৌধুরী। 
নলছিটি ঝালকাঠি থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নের রাজাবাড়িয়ায় খ্রিস্টান পল্লীর গির্জায় পালিত হলো যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে বড়দিনের উৎসব। 
নিজস্ব সংবাদদতা, ঝিনাইদহ থেকে জানান, ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ঝিনাইদহে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন উদ্যাপিত হয়েছে। সোমবার সকালে কালীগঞ্জ উপজেলার ব্যাপ্টিস্ট  চার্চে প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। পরে পবিত্র বাইবেল থেকে আলোচনা ও প্রার্থনা করা হয়। প্রার্থনা করেন রেভারেস্ট দীপক রায়। পরে কেক কেটে ও বড়দিনের অনুষ্ঠান পালন করা হয়। এ ছাড়াও দিনব্যাপী কীর্তনের পাশাপাশি ধর্মীয় গানের আসর হয়। 
স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম থেকে জানান, কেক কেটে, আলোচনা সভা ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে সারাদেশের ন্যায় কুড়িগ্রামেও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব বড়দিনের আনুষ্ঠানিকতা যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়। 
নিজস্ব সংবাদদাতা, লালপুর, নাটোর থেকে জানান,  খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে বড়দিন উদ্যাপন হয়েছে। এ উপলক্ষে ২৫ ডিসেম্বর সোমবার সকালে উপজেলার ডহরশৈলা জপমালার রানী মারিয়ার গির্জায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য ও নাটোর-১ আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. আবুল কালাম আজাদ। এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন ঝুলফু, উপজেলা চেয়ারম্যান ইসাহাক আলী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লাবণী সুলতানা, জেলা পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান মতি, জেলা আওয়ামীলীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক আমজাদ হোসেন, দুয়ারিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সেলিম রেজা মাস্টার, এবি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার প্রমুখ।
নিজস্ব সংবাদদাতা, মাধবপুর, হবিগঞ্জ থেকে জানান, মাধবপুর উপজেলার ৫টি চা বাগানে ৯টি গির্জায় চা শ্রমিক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা বড়দিনের উৎসব পালন করেছে। ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন উপলক্ষে গির্জাগুলোতে মহাসমারোহে ধর্মীয় উৎসব শিশুদের খেলাধুলা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উদ্যাপন করা হয়েছে। উপজেলার নোয়াপাড়া, বৈকণ্ঠপুর, জগদীশপুর, সুরমা ও তেলিয়াপাড়া চাবাগানে ৯টি গির্জায় রবিবার থেকেই আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। বড়দিন উপলক্ষে চাবাগানের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে উৎসব দেখা গিয়েছে। 
নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও থেকে জানান, উৎসবমুখর পরিবেশ ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা উদ্যাপন করেছেন তাদের সবচেয়ে বড় উৎসব শুভ বড়দিন।
এ উপলক্ষে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দোগাছি টলিপাড়ার ক্যাথলিক চার্চসহ জেলার অন্য গির্জাগুলোতে রঙিন আলো প্রজ্বালন ও ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয়। যিশু গোয়ালঘরে জন্মেছিলেন বলে তার অনুসারীরা ঘরে ঘরে তৈরি করেন প্রতীকী গোশালা। এসব গির্জায় রবিবার মধ্যরাত থেকে শুরু হয় বড়দিনের বিশেষ প্রার্থনা। 
নিজস্ব সংবাদদাতা, মধুপুর, টাঙ্গাইল থেকে জানান, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে টাঙ্গাইলের মধুপুরের বনাঞ্চল অধ্যুষিত আদিবাসী সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব বড়দিন। 
সোমবার সকালে ঈশ্বর যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে এ অঞ্চলের গারো আদিবাসী সম্প্রদায়ের খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিন নানা আয়োজনে পালিত হয়।

×