ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

১ ফেব্রুয়ারি থেকে খোলা চিনি ১০৭, প্যাকেট ১১২ টাকা

রোজার আগেই চিনির দাম বাড়ল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩

রোজার আগেই চিনির দাম বাড়ল

রমজানের আগে আরেক দফা খুচরা পর্যায়ে কেজিতে ৫ টাকা বাড়িয়ে

রমজানের আগে আরেক দফা খুচরা পর্যায়ে কেজিতে ৫ টাকা বাড়িয়ে পরিশোধিত খোলা চিনি ১০৭ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ১১২ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন এ দাম আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে নিত্যপণ্যের বাজারে কার্যকর হবে। বাজারে চিনি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতেই দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, নতুন দামে বাজারে চিনি পাওয়া যাবে, অন্যথায় সামনে সংকট হওয়ার ঝুঁকি ছিল।

এদিকে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি মূল্যে বাজারে চিনি বিক্রি হয় বলে অভিযোগ রয়েছে ভোক্তাদের। খুচরা পর্যায়ে বর্তমান প্রতিকেজি খোলা চিনি মানভেদে ১১৫-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে প্যাকেট চিনির সরবরাহ নেই। ফলে অস্থিরতার মধ্যে আরেক দফা বাড়ল চিনির দাম। এদিকে বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে চিনির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে চিনি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অপরিশোধিত চিনির আন্তর্জাতিক বাজারদর বৃদ্ধি, ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি ও স্থানীয় পরিশোধনকারী মিলগুলোর উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। এসব বিষয় বিবেচনায় এনে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন এ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ গত বছরের ১৭ নভেম্বর খুচরা পর্যায়ে চিনির দাম বাড়ানো হয়েছিল। সেবার প্যাকেটজাত চিনির দাম ৯৫ টাকা থেকে ১২ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছিল ১০৭ টাকা। আর প্রতিকেজি খোলা চিনির দাম বাড়িয়ে করা হয় ১০২ টাকা। 
চিনির শুল্ক কমাতে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ॥ চিনির বাজারে অস্থিরতা কমাতে আমদানি শুল্ক কমানোর জন্য  জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত বছরের বেশির ভাগ সময় চিনির বাজারে অস্থিরতা ছিল। এবার নতুন বছরের প্রথম মাসে আরেক দফা দাম বাড়ানো হয়েছে। আগামী মার্চ থেকে রমজান মাস শুরু হচ্ছে।

ওই সময় চিনির বাড়তি চাহিদা তৈরি হবে। সেই চাহিদা তৈরি হওয়ার আগে এবার চিনির দাম বাড়ানো হয়েছে। তবে চিনির দাম যাতে সহনীয় পর্যায়ে থাকে সেলক্ষ্যে আমদানি শুল্ক কমানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি এনবিআরকে চিঠি দেয়া হয়। চিঠি পেয়ে এনবিআরও হিসাব-নিকাশ শুরু করেছে। 
এদিকে রমজান সামনে রেখে চিনি শুল্ক কমানোর ঘোষণা দিতে পারে এনবিআর। ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দাবি জানিয়েছেন, বর্তমানে চিনিতে যে কাঠামোয় শুল্কারোপ করা আছে, সেটি থেকে কমিয়ে নতুন কাঠামো করতে হবে, যাতে বাজারে চিনির দাম কমে আসে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশীয় শিল্প রক্ষা করার জন্য চিনিতে ৩০-৩২ শতাংশ শুল্কারোপ করা আছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ জনকণ্ঠকে বলেন, রমজান সামনে রেখে চিনিসহ কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে।

এ কারণে চিনির ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহারে এনবিআরকে চিঠি দেয়া হয়েছে। বিষয়টি এনবিআর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে ছয়টি নিত্যপণ্য আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলায় ডলারের কোটা সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। মূলত রমজান উপলক্ষে বাজারে যেন নিত্যপণ্যের সংকট তৈরি না হয় সেজন্যই ডলার সরবরাহ বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হয়েছে। চিনি আমদানির বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে ঋণপত্র খোলা অব্যাহত রাখার ব্যাপারেও বলা হয়েছে।

নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা কমিয়ে আনতে নানাভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। বাণিজ্যমন্ত্রীর দাবি সরবরাহ নিশ্চিত করতে দাম বাড়ানো ॥  বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি দাবি করেছেন, সরবরাহ নিশ্চিত করতেই আরেক দফা চিনির দাম বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, মূল্যবৃদ্ধি তখনই করা হয় যখন প্রয়োজন হয়। মূল্যায়ন করেই এটা করা হয়েছে। অন্যথায় বাজারে চিনি সংকট হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এটা বিবেচনা করেই করে যেটা হওয়া উচিত সেটা করা হয়েছে। আবার যখন কমার প্রয়োজন তখন কমানো হবে। বৃহস্পতিবার মতিঝিলে এমসিসিআইয়ের একটি অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।  
মিল থেকে চিনি বের করতে হলে ১৬-১৭ দিন লেগে যায়। আর এর জন্য প্রতিদিন ২/৩ হাজার টাকা করে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এটা আমরা শুনেছি। আমরা চেষ্টা করছি এটা যেন না হয়। ব্যবসায়ীরা চিনির দাম ইচ্ছামতো বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী দাবি করেন, এটা ঠিক নয়। দেশে যে পরিমাণ চিনি উৎপাদন হয় তা মোট চাহিদার মাত্র ১ শতাংশ।

চিনির দামের ক্ষেত্রে এটা  কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না। দেশে উৎপাদিত চিনির পরিমাণ ৫০ হাজার টন। আমাদের চিনির চাহিদা পূরণ করতে হয় আমদানি করে। গ্লোবাল মার্কেটে চিনির দাম বেড়েছে। যার জন্য সমস্যাটা হয়েছে। পাশাপাশি আমরা চেষ্টা করছি যাতে আমদানি শুল্ক একটু কমিয়ে দেওয়া হয়, যাতে দামে প্রভাব পড়ে। বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব বাংলাদেশে পড়ছে। একারণে চিনিসহ অন্যান্য পণ্যের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

×