ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হেনোলাক্স দম্পতির কাছে গাজী আনিসের পাওনা তিন কোটি টাকা

প্রকাশিত: ১৫:২৮, ৬ জুলাই ২০২২; আপডেট: ১৫:৫১, ৬ জুলাই ২০২২

হেনোলাক্স দম্পতির কাছে গাজী আনিসের পাওনা তিন কোটি টাকা

আটক হেনোলাক্স দম্পতি নুরুল আমিন ও ফাতেমা আমিন

রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে নিজের গায়ে আগুন দিয়ে গাজী আনিসের চাঞ্চল্যকর মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত প্ররোচনার মামলায় আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আমিন ও পরিচালক ফাতেমা আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

তাদের কাছে ব্যবসায়ী গাজী আনিস তিন কোটি টাকা পেতেন বলে জানিয়েছেন ্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন

বুধবার ( জুলাই) দুপুরে কাওরান বাজার ্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি তথ্য জানান

খন্দকার আল মঈন বলেন, গাজী আনিসের সঙ্গে লেনদেনে টাকার পরিমাণ নিয়ে আসামিদের আপত্তি আছে লেনদেন হয়েছে তা তারা স্বীকার করেছেন বিভিন্ন সময়ে চেকে নগদে ৭৬ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন তবে গাজী আনিসের লভ্যাংশসহ ন্যায্য পাওনা তিন কোটি টাকা এটা নিয়েই মূলত তাদের মধ্যে একাধিকবার বাকবিতণ্ডা হয়েছে

তিনি বলেন, গত জুলাই বিকেল পৌনে ৫টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় গাজী আনিস নিজের গায়ে পেট্রোল জাতীয় দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয় সেখানে তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়

 

গাজী আনিসের শরীরের ৯০ শতাংশ দগ্ধ হয়ে যায় অতঃপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত জুলাই ভোরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় প্রকাশ্য দিবালকে মর্মান্তিক এই ঘটনা আলোড়িত করে দেশবাসীকে

মামলা অন্যান্য সূত্রের বরাতে কমান্ডার মঈন বলেন, ২০১৭ সালে আমিন গ্রুপের কর্ণধার নুরুল আমিন এবং তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের সঙ্গে ভিকটিমের পরিচয় হয় ধীরে ধীরে তাদের সঙ্গে ভিকটিমের সখ্যতা এবং আন্তরিকতা গড়ে ওঠে গ্রেফতাররা ২০১৮ সালে চিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী একটি দেশে গেলে সেখানে স্থানীয় একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থানকালে গাজী আনিসকে হেনোলাক্স কোম্পানিতে বিনিয়োগের জন্য প্ররোচিত করেন প্রথমে অসম্মতি জানালেও পরে রাজি হন এবং প্রাথমিকভাবে এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন এরপর তাদের প্ররোচণায় তিনি আরও ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন

অধিকাংশ টাকাই ভিকটিম ঋণ হিসেবে আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ধার নিয়েছিলেন বিনিয়োগ করার সময় পরস্পরের প্রতি সম্মান এবং বিশ্বাসের কারণে তাদের মধ্যে কোনো চুক্তিনামা করা হয়নি তারা বিনিয়োগপরবর্তী চূড়ান্ত রেজিস্ট্রি চুক্তিপত্র সম্পাদনে গড়িমসি করতে থাকেন এক পর্যায়ে প্রতিমাসে লভ্যাংশ প্রদানও বন্ধ করে দেন কয়েকবার আনিসকে হেনস্তা-ভয়ভীতিও প্রদর্শন করা হয়

ওই টাকা উদ্ধারের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়ার আদালতে দুটি মামলা দায়ের করেন গাজী আনিস এছাড়াও টাকা ফিরে পাওয়ার জন্য গত ২৯ মে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন গত ৩১ মে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে পাওনা টাকা আদায় সংক্রান্তে মামলা দায়ের বিষয়টি পোস্ট করেন বন্ধু-বান্ধব শুভাকাঙ্ক্ষিদের কাছে সহায়তা চান

এজাহার সূত্রে আরও জানা যায়, গত জুলাই পাওনা টাকা পরিশোধের দিন ধার্য ছিল কিন্তু বিকেল গড়ালেও তারা নিহতকে টাকা প্রদান করেনি এরপর গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি

নিহত গাজী আনিস কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ঠিকাদারি ব্যবসার পাশাপাশি একটি টেলিকম কোম্পানিতে চাকরি করতেন পরে চাকরি ছেড়ে কুষ্টিয়ায় গাড়ীর ব্যবসা শুরু করেন তিনি সাহিত্যচর্চা করতেন এবং তার বেশ কয়েকটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে

আসামি নুরুল আমিন ১৯৮১-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত গোপীবাগ ঢাকা এলাকায় কাদের হোমিও হল নামে হোমিও হলে ১৫ বছর চাকরি করেন ওই সময়ে তার একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার কথা মাথায় আসলে ১৯৯১ সালে হেনোল্যাক্স কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসা শুরু করেন পরে কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি নামকরণ করেন ওই কোম্পানির অধীনে হেনোলাক্স কসমেটিকস্ যেমন- হেনোলাক্স কমপ্লেকশান ক্রিম, হেনোলাক্স স্পট ক্রিম, হেনোলাক্স মেছতা আউট ক্রিম হেনোলাক্স হেয়ার অয়েল পোলট্রি ফার্মের ব্যবসা করেন

পরবর্তীকালে বাজারে হেনোলাক্সের চাহিদা কমে গেলে ২০০৯ সালে তিনি আমিন হারবাল নামে কোম্পানি নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসা শুরু করেন এবং ২০১৬ সালে হেনোলাক্সের ব্যবসাও বন্ধ করে দেন তাদের কাকরাইলে একটি ফ্ল্যাট, পুরানা পল্টনে স্কাই ভিউ হেনোলাক্স সেন্টার নামে একটি ১০তলা ভবন, পিংক সিটিতে ১টি ডুপ্লেক্স বাড়ি, মেরাজনগর কদমতলীতে হেনোলাক্স নামে ৪তলা ভবন, মোহাম্মদবাগ কদমতলী এলাকায় হেনোলাক্স ফ্যাক্টরি রয়েছে

×