ট্রেনের আগাম টিকেট বিক্রির দ্বিতীয় দিনেও
পবিত্র ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে ট্রেনের আগাম টিকেট বিক্রির দ্বিতীয় দিনেও রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে টিকেট প্রত্যাশীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রতীক্ষার পর কেউ পেয়েছেন রেলের টিকেট। আবার কেউ না পেয়ে পরের দিনে টিকেট পেতে সিরিয়ালে নাম লিখিয়েছেন। তবে নারীদের ভোগান্তিতে বেশি পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ করে তারা নারীদের জন্য কাউন্টারের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি করেছেন। সড়ক পথে যানজট ও দীর্ঘপথের ক্লান্তি এড়াতে বরাবরের মতো এবারও ট্রেনের ওপর বেশি মানুষের আস্থা রাখায় টিকেট জোগাড়ের চেষ্টা করছেন যাত্রীরা। তাদের কেউ কেউ পরিবারের সদস্যকে নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছে দিতে রেল স্টেশনে সব কষ্ট ও যন্ত্রণা নিজের ঘাড়েই নিচ্ছেন। তবে যাত্রীর তুলনায় প্রতিদিন বিক্রিযোগ্য টিকেটের সংখ্যা নগণ্য হওয়ায় বাংলাদেশ রেলওয়েকেও অসহায়ত্ব বরণ করতে হচ্ছে।
এদিকে শনিবার সকালে রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, গত ঈদে অনলাইনে (টিকেট প্রাপ্তির বিষয়ে) কিছু অভিযোগ ছিল। এবার এখন পর্যন্ত সে ধরনের অভিযোগ পাইনি। গণমাধ্যমে দেখলাম অনেকেই অনলাইন মাধ্যমে টিকেট কাটতে পেরেছেন। তবে অনলাইনে কোন ফাঁকফোকর পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
কাউন্টারে টিকেট না পাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে মন্ত্রী বলেন, চাহিদার তুলনায় ট্রেনের সংখ্যা কম। মাত্র ৬ হাজার টিকেটের জন্য ২ লাখ মানুষ লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। অনলাইনে টিকেটের জন্য ৬ কোটি মানুষ প্রতিদিন ওয়েবসাইট হিট করছে। সবাই টিকেট পাবেন না, এটাই তো স্বাভাবিক।
এখন ঈদযাত্রায় যাত্রীদের প্রধান চাহিদা এখন ট্রেনের টিকেট উল্লেখ করে রেলমন্ত্রী বলেন, এবার গার্মেন্টস কারখানায় একটা স্পেশাল ট্রেন যাবে, যাদের জন্য জয়দেবপুর থেকে টিকেটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আমাদের ডুয়েলগেজ ৬০টি কোচ আসছে আরও ১০০টি পাইপলাইনে আছে। আমাদের ডাবল লাইন এবং পদ্মা সেতু হয়ে গেলে আমাদের সক্ষমতা আরও বেড়ে যাবে। তখন নিরাপদে সকল যাত্রী ট্রেনের মাধ্যমে নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে পারবেন।
শনিবার সকালে সরেজমিনে কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, গত শুক্রবার বিকেল থেকেই ৬ জুলাইয়ের টিকেট পেতে মানুষ দীর্ঘ লাইন দিয়ে রয়েছেন। প্রতিটি কাউন্টারের সামনেই মানুষের মানুষের প্রতীক্ষা ছিল। সকাল ৮টা বাজতেই শুরু হয় শোরগোল। সারারাত লাইনে বসে ও শুইয়ে কাটানোর পর টিকেট হাতে পেয়ে খুশি সবাই। দীর্ঘ অপেক্ষার পর টিকেট পাওয়ার আনন্দকে ফ্রেমবন্দীও করছিলেন অনেকে। আবার কেউ যুদ্ধ জয়ের মতো উল্লাস করেছেন।
বেসরকারী একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি পাবনা জেলার শরৎনগরে। তিনি পদ্মা এক্সপ্রেসের টিকেট পেয়েছেন ১ নম্বর সিরিয়ালধারী হিসেবে। রফিকুল ইসলাম বলেন, রাত ১১টার একটু আগে আমি সিরিয়ালে দাঁড়াই। এরপর আমার পেছনে অন্য সবাই সিরিয়ালে দাঁড়ায়। তিনি বলেন, তিনটি টিকেট কেটেছেন। তিনি বলেন, রেলওয়ে টিকেট কাটার পদ্ধতি সহজ করলে রাতে কষ্ট করে মশার কামড় খেয়ে বসে থাকতে হতো না।
নাসিমা বেগম বলেন, টিকেট কিনতে আসা নারীরা পুরুষের তুলনায় ভোগান্তিতে পড়ছেন বেশি। নারীদের জন্য আরও একটি কাউন্টারের ব্যবস্থা করতে পারলে ভাল হতো। অতিরিক্ত গরমে নারীদের টিকেট পেতে কষ্ট বেশি করতে হচ্ছে। কিন্তু সেই তুলনায় কাউন্টার কম থাকায় টিকেট কম পাচ্ছেন তারা।
সরকারী তিতুমীর কলেজের বাংলা বিভাগে শিক্ষার্থী সিফাত হোসেন বলেন, ৫ জুলাইয়ের টিকেট না পেয়ে শুক্রবার বিকেল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন রাজশাহীর টিকেট কাটার জন্য। তার সিরিয়াল ৩৫ নম্বর হলেও সকাল সোয়া নয়টাতেও টিকেট পাননি। জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে টিকেট কাটতে গিয়ে নিবন্ধনসহ নানা জটিলতার কারণে টিকেট প্রাপ্তিতে দেরি হচ্ছে।
এবারের ঈদযাত্রায় অগ্রিম টিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬টি স্টেশনে। সমগ্র উত্তরাঞ্চলগামী আন্তঃনগর ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকেট বিক্রি হচ্ছে ঢাকা (কমলাপুর) রেলস্টেশনে। রাজশাহী ও খুলনাগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট বিক্রি হচ্ছে ঢাকা (কমলাপুর) শহরতলী প্ল্যাটফর্মে। চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট বিক্রি হচ্ছে ঢাকা বিমানবন্দর রেল স্টেশনের কাউন্টারে। ময়মনসিংহ, জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জগামী সব আন্তঃনগর ট্রেন ও দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকেট বিক্রি হচ্ছে তেজগাঁওয়ে। মোহনগঞ্জগামী মোহনগঞ্জ ও হাওড় এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট বিক্রি হচ্ছে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে, সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট বিক্রি হচ্ছে ফুলবাড়িয়ায় এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম (পঞ্চগড়) এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে জয়দেবপুর স্টেশনে।
ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে যাত্রীদের সুবিধার্থে ৬ জোড়া বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে। সেগুলো হলো- দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল, চাঁদপুর স্পেশাল ১, ২, বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম (পঞ্চগড়) ঈদ স্পেশাল, শোলাকিয়া স্পেশাল ১, ২।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শনিবার বিক্রি হয়েছে ৬ জুলাইয়ের টিকেট। আজ রবিবার বিক্রি হবে ৭ জুলাইয়ের টিকেট, ৪ জুলাই ৮ জুলাইয়ের এবং ৯ জুলাইয়ের টিকেট ৫ জুলাই বিক্রি হবে। এছাড়া ১১ জুলাইয়ের ট্রেনের ফিরতি টিকেট ৭ জুলাই, ১২ জুলাইয়ের টিকেট ৮ জুলাই, ১৩ জুলাইয়ের টিকেট ৯ জুলাই এবং ১৪ ও ১৫ জুলাইয়ের টিকেট বিক্রি করা হবে ১১ জুলাই। অনলাইন টিকেটের অর্ধেক ওয়েবসাইটে এবং অর্ধেক এ্যাপে বিক্রি করা হবে।
কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার বলেন, টিকেটের তুলনায় কয়েকশ’গুণ বেশি মানুষ অপেক্ষার জন্য জটিলতা তৈরি হয়। সবাই টিকেট পেতে চায়, কিন্তু সবাইকে তো আর টিকেট দেয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আইন মেনেই টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। কোন কালোবাজারি হচ্ছে না। অনলাইনে একসঙ্গে অনেক মানুষ হিট করায় সেবা পেতে কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছে।