
বন্যায়
সিলেট ও সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নদ-নদীর পানি ফের বাড়তে শুরু করেছে। সিলেটে মঙ্গলবার রাতভর বৃষ্টির পর বুধবার দিনেও বৃষ্টি হয়েছে। ফলে সুরমা ও কুশিয়ারার পানি ফের বাড়তে শুরু করেছে। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার ধকল এখনও সামলে উঠতে পারেনি সিলেটবাসী। এর মধ্যে বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এই দুই জেলার পাশাপাশি নীলফামারী, পঞ্চগড় ও কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছে। ভারি বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নীলফামারীর তিস্তার গজলডোবার ৪৪ জলকপাট খুলে দেয়া হয়েছে। গত ২৫ ঘণ্টায় পঞ্চগড়ে সর্বোচ্চ ১৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড তৈরি হয়েছে। পাহাড়ী ঢলে মহানন্দা, করতোয়া, তালমা ও ডাহুক নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। কুড়িগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার অন্তত ৩০টি চরের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। -খবর সিলেট অফিস, স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার।
সিলেটে মঙ্গলবার রাতভর ভারি বর্ষণের পর বুধবার দিনেও বৃষ্টি হয়েছে। ৬দিন বৃষ্টি না থাকায় পানি কমতে শুরু করেছিল। ধীরগতিতে হলেও পরিস্থিতির উন্নতিতে বন্যার্তদের ঘরে ফেরার সুযোগ সৃষ্টি হয়। মানুষের মনে আশার সঞ্চার হলেও সেটা আবারও বিষাদে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সিলেট অঞ্চলের প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার পানি বাড়ছে। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় ছিল ১০.৫৯ সেন্টিমিটার। বুধবার দুপুর ১২টায় দাঁড়িয়েছে ১০.৭৫ সেন্টিমিটার। এ নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ১৩.৩৫ সেন্টিমিটার ছিল।
বুধবার দুপুরে হয়েছে ১৩.৬৪ সেন্টিমিটার। বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে পানি। কুশিয়ারার আমলশিদ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১.১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শেওলা পয়েন্টেও কুশিয়ারার পানি বিপজ্জনকভাবে বইছে। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার পানি এখনও সর্বত্র দুর্গতি বাড়িয়ে চলেছে। এখনও প্লাবিত হয়ে আছে জেলার বেশিরভাগ এলাকা। এরই মাঝে বুধবার ফের নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে সিলেটে। মঙ্গলবার রাতের ভারি বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ে নগরের বেশিরভাগ এলাকা। উপশহর, তালতলা, তেররতন, মির্জাজাঙ্গালসহ কিছু এলাকার ঘরবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়ে। এতে ফের দুর্ভোগ পোহাতে হয় এসব এলাকার বাসিন্দাদের।
পানি আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটে অনেকের। পাউবো, সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা বলেন, সিলেটের পাশাপাশি উজানেও বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে নদ-নদীর পানি বাড়ছে। নদী, ড্রেন ও ছড়া পানিতে ভরাট হয়ে পড়ায় অল্প বৃষ্টিতেই নগরে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, সব জলাধার পানিতে টইটম্বুর। সিলেট অঞ্চলে বন্যার কবলে পড়েছে ৬৮২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে চার লাখেরও বেশি।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে সিলেট বিভাগ ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে। বিশেষ করে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতি হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। বন্যায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এ বিভাগের শত শত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ে। আবার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রুয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সুনামগঞ্জ ॥ জেলায় ফের বাড়তে শুরু করেছে পানি। বুধবার ১১ সে.মি পানি বৃদ্ধি পায়। মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার পর্যন্ত ২২ সে.মি পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই নদীতে পানি বাড়তে শুরু হয়েছে। তবে সুরমার পানি বৃদ্ধি পেলেও এখনও বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বইছে।
ছাতকে পানি বৃদ্ধি পেয়ে সুরমা নদীর ছাতক পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৩ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।