অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে সবচেয়ে গরিব ১০টি জেলার ৬টিই রংপুর বিভাগে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত। তিনি বলেন, শাসকগোষ্ঠীর কারণে শুধু নির্দিষ্ট অঞ্চল ও গোষ্ঠীর মানুষের প্রতি যুগ যুগ ধরে চলা এ ধরনের বৈষম্য-বঞ্চনা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ঘুণেধরা রাজনীতিই রংপুর-রাজশাহী বিভাগের দারিদ্র্য-বৈষম্যের নেপথ্য কারণ।
শুক্রবার রাতে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ‘বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২২-২৩ প্রস্তুতি আলোচনা: রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সভায় তিনি এসব কথা বলেন। অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের সভাপতিত্বে বাজেট প্রণয়ন বিষয়ক এই মতবিনিময় সভায় রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী, আইনজ্ঞ, কৃষক, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতারা, মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ, উন্নয়ন ও সাংস্কৃৃতিক কর্মী, সাংবাদিক নেতাসহ নানা শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধি আঞ্চলিক সমস্যা ও সম্ভাবনার আলোকে জাতীয় বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য স্থানীয় মানুষের আকাক্সক্ষার কথা তুলে ধরেন। সভায় অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, যতদিন পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আয় বৈষম্য-সম্পদ-স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বৈষম্য নির্মূলের লক্ষ্য নিয়ে বাজেটের আয় ও ব্যয় খাতের মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তন না করা হবে, ততদিন পর্যন্ত রংপুর-রাজশাহীর মতো পিছিয়ে পড়া অঞ্চলসমূহের দারিদ্র্য ও দুর্ভোগের পরিসমাপ্তি ঘটবে না। তিনি বলেন, কোন সময়ই বাংলাদেশের কোন জেলা কুড়িগ্রামের চেয়ে কম গরিব ছিল না, কোন বিভাগই রংপুর বিভাগের চেয়ে কম নিঃস্ব-রিক্ত হতে পারেনি। এর প্রমাণ- দেশের গরিব ১০টি জেলার ৬টিই রংপুর বিভাগে।
আয়, ক্ষুধা, কর্মহীনতা, স্বল্পমজুরি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিশু-প্রবীণ-নারী, ভূমিহীন, প্রান্তিক কৃষক, ভাসমান মানুষ, প্রতিবন্ধী, পরিবেশ-প্রতিবেশ বিপর্যয়, মঙ্গা, প্রান্তিকতা, সংখ্যালঘু, পশ্চাৎপদ, চরাঞ্চল, রাজনৈতিক দারিদ্র্য, সরকারের প্রতি আস্থা, মানসকাঠামোসহ দারিদ্র্যের যত রূপ ও ধরন আছে-তার সবই বাংলাদেশের পশ্চাৎপদতম রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে বিদ্যমান। তীব্র অনুন্নয়নসৃষ্ট এই দারিদ্র্য-বৈষম্যের নেপথ্যে ঘুণেধরা রাজনীতিই মূল কারণ। জাতীয় বাজেট বরাদ্দকালে এই দুই বিভাগের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ সে কথাই প্রমাণ করে। অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোঃ আইনুল ইসলাম বলেন, দুর্ভিক্ষ, জাতিগত দাঙ্গা ও যুদ্ধপীড়িত ইথিওপিয়ার দারিদ্র্যের হার যেখানে ২৪ শতাংশ, সেখানে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসা বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার দারিদ্র্যের হার ৭০ দশমিক ৮ শতাংশ।