ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৭ আগস্ট ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২

সংস্কৃতি সংবাদ

বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায়ও ভূমিকা রেখেছেন কামরুল হাসান

প্রকাশিত: ২৩:৩০, ৩ ডিসেম্বর ২০২১

বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায়ও ভূমিকা রেখেছেন কামরুল হাসান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বৃহস্পতিবার ছিল পটুয়া কামরুল হাসানের শততম জন্মবর্ষ। সেই সুবাদে ভোরবেলা থেকে সরব হয়ে ওঠে চারুকলা অনুষদ আঙিনা। হেমন্তের সকালে ধীরে ধীরে সম্মিলিত হন চারুশিল্পী, চারুশিক্ষক ও চারুশিক্ষার্থীরা। শুরুতে সকলে মিলে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পথিকৃৎ এই চিত্রকরের প্রতি। অনুষদসংলগ্ন শিল্পীর সমাধিতে অর্পণ করেন পুষ্পাঞ্জলি। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর একঝাঁক বর্ণিল বেলুন উড়িয়ে দুই দিনব্যাপী কামরুল হাসান জন্মশতবর্ষ উৎসবের সূচনা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান. চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেনসহ অন্য অতিথিরা। যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগ এবং গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগ এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশন। কামরুল হাসানের জন্মশতবর্ষকে কেন্দ্র করে রঙিলা রূপ অনুষদের পেছনের অংশের উৎসব আঙিনা। সেখানে গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে শোভা পাচ্ছে কাগজের রঙিন ফুল। চারপাশে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে কামরুল হাসানের আঁকা তিন কন্যাসহ বিভিন্ন বিখ্যাত চিত্রকর্মের পোস্টার। শুধু কি তাই? শিল্পীর বিভিন্ন ভঙ্গিমার আলোকচিত্রও চমৎকারভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। সেখানে আলো-আঁধারির খেলায় নিজের আঁকা ছবির সামনে ফ্রেমবন্দী হয়েছেন কামরুল হাসান। আরেকটি ছবিতে ধরা দিয়েছে থুতনিতে আঙুল রাখা শিল্পীর চিন্তামগ্নতার প্রতিচ্ছবি। আর এখানেই চমৎকারভাবে সজ্জিত হয়েছে উৎসব মঞ্চ। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতার পর কামরুল হাসানকে নিবেদিত আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। এ পর্বে কিংবদন্তি শিল্পীর মূল্যায়নে নিসার হোসেন বলেন, উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী কামরুল হাসান। আর শুধুমাত্র শিল্পচর্চার ভেতরেই নিজেকে সীমাবদ্ধ থাকেননি এই পথিকৃৎ চিত্রকর। তিনি ছিলেন সামাজিকভাবে ও রাজনৈতিকভাবে দায়বদ্ধ একজন শিল্পী। সেই অর্থে জনসম্পৃক্ত এক শিল্পীর নাম কামরুল হাসান। ভারতীয় উপমহাদেশের তাঁর মতো এমন জনসম্পৃক্ত শিল্পী আর একজনও পাওয়া যায় না। তিনি দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি থাকতেন সামনের সারিতে। ভূমিকা রেখেছেন ভাষা আন্দোলনে। একইভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধেও রেখেছেন অবিস্মরণীয় অবদান। সব মিলিয়ে তিনি শুধু চারুকলা অনুষদ নয় বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায়ও ভূমিকা রেখেছেন। আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও রেখেছেন আপসহীন ভূমিকা। সেই সময় তাঁর আঁকা ‘দেশ আজ বিশ্ব বেহায়ার খপ্পরে’ শিরোনামের পোস্টারটির বিশেষ গতি সঞ্চার করেছিল আন্দোলনে। প্রচ- সাহসী এই মানুষটি নানা ক্রান্তিলগ্নে দেশের শিল্পী সমাজের নেতৃত্ব দিয়েছেন। অন্যদিকে ছিলেন দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। দেশের হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে প্রগাঢ়ভাবে ধারণ করেছেন এই শিল্পী। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের আহ্বানে তিনি এদেশে চলে এসেছিলেন। ভূমিকা রেখেছিলেন চারুকলা অনুষদ প্রতিষ্ঠায়। এছাড়া কামরুল হাসানকে নিবেদিত আলোচনায় অংশ নেন শিল্পীকন্যা সুমনা হাসান ও শিল্পী রুমানা রশীদ দৌলা। সভাপতিত্ব করেন গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগ এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস। শিল্পীকন্যা সুমনা হাসান আক্ষেপ করে বলেন, সমাজ গঠন, দেশ গঠন কিংবা যে কোন সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন কামরুল হাসান। সেই বিবেচনাতেই তাঁর জন্মশতবর্ষ রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্্্যাপন করা উচিত ছিল। সে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের কাছে তাঁর কৃতির কথা ছড়িয়ে দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু আক্ষেপের বিষয় সেটি হয়নি। আজ শুক্রবার উৎসবের দ্বিতীয় দিন। এদিন সকাল থেকে রাত অবধি মুখরিত থাকবে নানা আয়োজন। বের করা হবে আনন্দ শোভাযাত্রা। অনুষ্ঠিত হবে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। উপস্থাপিত হবে নাচে-গানে সজ্জিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। হবে কামরুল হাসানের মূল্যায়নধর্মী আলোচনা। সঙ্গে আলোকিচত্রী নাসির আলী মামুনের ধারণকৃত আলোকচিত্র প্রদর্শনী। এদিনের অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতিজন আসাদুজ্জামান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ।
×