ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

মামুনুলের প্রথম পক্ষের শ্বশুরের পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে

প্রকাশিত: ২৩:২৪, ২৮ এপ্রিল ২০২১

মামুনুলের প্রথম পক্ষের শ্বশুরের পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে

শংকর কুমার দে ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারের হত্যাকা-ের পলাতক পাঁচ খুনীর মধ্যে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত পলাতক মেজর বরখাস্ত শরিফুল হক ডালিম কোন দেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছে তার ‘ক্লু’ খোঁজ করছে পুলিশ। হেফাজতে ইসলামের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের প্রথম পক্ষের শ্বশুর জাহিদুল ইসলামের ভায়রা ভাই খুনী ডালিম। ডালিম মামুনুল হকের শ্বশুরের ভায়রা ভাই হওয়ার সুবাদে তাদের কাছে তথ্য থাকা স্বাভাবিক। শুধু তাই নয়, ডালিম যেমন সেনা বাহিনীর কর্মকর্তা ছিল, তেমনি মামুনুল হকের শ্বশুরও ছিলেন সেনা কর্মকর্তা। মামুনুল হকের শ্বশুর জাহিদুল ইসলাম জামায়াতে ইসলামীর মতাদর্শী ও তবলীগ জামাতের সদস্য। মামুনুল হকের প্রথম পক্ষের শ্বশুর জাহিদুল ইসলামের পরিবারের লোকজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পলাতক খুনী ডালিমের সন্ধান করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে পুলিশ। পুলিশের উচ্চ পর্যায় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। হেফাজত নেতা মামুনুল হককে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ করার সময়ে বঙ্গবন্ধুর খুনী ডালিমের সঙ্গে প্রথম পক্ষের শ্বশুরের সঙ্গে আত্মীয়তার তথ্য ফাঁস করেন মামুনুল হক। এর আগে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে এক নারীকে সঙ্গে নিয়ে মামুনুল হক স্থানীয় জনতার হাতে অবরুদ্ধ হওয়ার সময় তার প্রথম পক্ষের স্ত্রীর পরিচয়ের তথ্য দেন তিনি। তার দেয়া তথ্যানুযায়ী প্রথম পক্ষের স্ত্রীর নাম আমিনা তৈয়বা। আমিনা তৈয়বার বাবার নাম জাহিদুল ইসলাম। বাড়ি খুলনায়। সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টের যেই নারী জান্নাত আরা ঝর্ণাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন রিসোর্টের রেজিস্টারে তার নাম লিখেননি। আমিনা তৈয়বাকে সঙ্গে না নিয়ে না গিয়েও রিসোর্ট রেজিস্টারে তার নাম লিখেছিলেন মামুনুল হক, যা এখন পুলিশের তদন্তনাধীন। তখনই মামুনুলের প্রথম পক্ষের শ্বশুরের পরিচয় উদঘাটিত হয়। এরপর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে পলাতক খুনী ডালিমের সঙ্গে প্রথম পক্ষের শ্বশুরের আত্মীয়তার পরিচয়ের তথ্য দেন মামুনুল হক। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোঃ হারুন-অর-রশীদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনী ডালিমের ভায়রা ভাই মামুনুল হকের প্রথম পক্ষের শ্বশুর। গত রবিবার নিজ কার্যালয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময়ে খুনী ডালিম যে মামুনুল হকের প্রথম পক্ষের শ্বশুরের ভায়রা ভাই এই তথ্য দেন তিনি। এ বিষয়ে আরও খোঁজ খবর নিচ্ছেন বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা। এরপর থেকে খুনী ডালিম কোন দেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছে তার তথ্য উদঘাটনের চেষ্টা করছে পুলিশ। পলাতক অবস্থায় খুনী ডালিম কোন দেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছে তার খোঁজখবর করা যাচ্ছিল না। এমনকি ইন্টারপোলের রেড নোটিস দেয়া সত্ত্বেও ডালিমের কোন খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে খুন করার পর ভোর বেলায় রেডিওতে বারবার খুনের ঘটনার ঘোষণা দিচ্ছিল মেজর ডালিম। রেডিওতে বলছিল, আমি মেজর ডালিম বলছি, স্বৈরাচার শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছেÑ ডালিমের রেডিওতে এমন ঘোষণার পর সমস্ত জাতি শোকে স্তম্বিত হয়ে যায়। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর ইতিহাসে চিহ্নিত কালো ইনডেমনিটি কালো অধ্যাদেশ বাতিলের পর জাতির পিতার খুনের বিচারের পথ খোলে। বঙ্গবন্ধু খুনের মামলার রায়ে ১৯৯৮ সালের ৮ নবেম্বর ঢাকার তখনকার জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদ- দেন। আপীলের রায়ে এ ১৫ জনের মধ্যে তিনজন খালাস পান। যে ১২ জনের মৃত্যুদ- বহাল রাখে উচ্চ আদালত, তাদের একজন আজিজ পাশা পলাতক থাকা অবস্থায় দেশের বাইরে মারা যান বলে খবর আসে। বাকি ১১ জনের মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ, মহিউদ্দিন আহমদ, এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন বন্দী অবস্থায় আদালতে রিভিউ আবেদন করলে তা খারিজ হয়ে যায়। আদালতের রায়ের পর মৃত্যুদ- কার্যকর হয়েছে সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ, এ কে বজলুল হুদা, আব্দুল মাজেদ, মহিউদ্দিন আহমদ ও এ কে এম মহিউদ্দিন। গত বছরের ৭ এপ্রিল ভোরে পলাতক ৬ জনের একজন ৭২ বছর বয়সী মাজেদকে ঢাকার গাবতলী থেকে গ্রেফতারের পর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। কিন্তু এখনও পাঁচ খুনীর মৃত্যুদ- কার্যকর করা যায়নি। তারা বিদেশে পলাতক। বিদেশে পলাতক পাঁচ খুনী হচ্ছে আব্দুর রশীদ, শরীফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী ও এবিএমএইচ নূর চৌধুরী। এবিএমএইচ নূর চৌধুরী আছেন কানাডায়। রাশেদ চৌধুরী রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু শরীফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন ও আবদুল রশীদ কোন দেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তার হদিস করা যাচ্ছে না। এর মধ্যে মোসলেম উদ্দিন সম্প্রতি ভারতে ধরা পড়েছেন বলে সেদেশের গণমাধ্যমে খবর বের হলেও তার সত্যতা নিশ্চিত হতে পারেনি বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু রশীদ ও ডালিম যে কোথায় আছেন, তার তালাশ এখনও পায়নি দেশের গোয়েন্দারা। ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) বরাবরের মতোই বলছে, পলাতক খুনীদের আনতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, শরীফুল হক ডালিম পাকিস্তান বা লিবিয়ায় থাকতে পারে। চীন, হংকং, থাইল্যান্ড মতো দেশগুলোতে থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। তবে পলাতক খুনী ডালিম যে মামুনুল হকের প্রথম পক্ষের শ্বশুর জাহিদুল ইসলামের ভায়রা ভাই তা এতদিন কারও জানা ছিল না। শুধু তাই নয়, মামুনুল হকের আপন ভগ্নিপতি মাওলানা নিয়ামত উল্লাও আছেন পাকিস্তানে। আত্মীয়তার সুবাদে মামুনুল হকের প্রথম পক্ষের শ্বশুর জাহিদুল ইসলামের পরিবারের ডালিমের পালিয়ে থাকা অবস্থানের বিষয়টি জানা থাকতে পারে। এমনকি মামুনুল হকের ভগ্নিপতি মাওলানা নিয়ামত উল্লা পাকিস্তানে অবস্থান করার কারণে তাদের পরিবারেও ডালিমের খোঁজখবর থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। হেফাজত নেতা মামুনুল হককে নাশকতাসহ সহিংসতার তা-বের ঘটনায় দুই দফায় চৌদ্দ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নাশকতাসহ সহিংসতা তা-বের ঘটনার সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে সপরিবারে হত্যাকা-ের অন্যতম খুনী শরীফুল হক ডালিমের পলাতক অবস্থান কোথায় তার খোঁজখবর পাওয়া গেলে সেটা হবে আরও এক চমকপ্রদ তথ্য যা ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী বা নজির হয়ে থাকতে পারে বলে পুলিশ কর্মকর্তার দাবি।
×