ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নেত্রকোনায় ঐতিহাসিক দুর্গের কবরস্থান গুঁড়িয়ে দিল দুর্বৃত্তরা

প্রকাশিত: ২১:২০, ৪ এপ্রিল ২০২১

নেত্রকোনায় ঐতিহাসিক দুর্গের কবরস্থান গুঁড়িয়ে দিল দুর্বৃত্তরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, নেত্রকোনা, ৩ এপ্রিল ॥ জেলার ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি রোয়াইলবাড়ি দুর্গের অভ্যন্তরের একটি পাকা কবরস্থান ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়েছে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। স্থানীয়ভাবে এটি ডেঙ্গু মিয়ার (ডেঙ্গু মাল) সমাধি নামে পরিচিত ছিল। এর কয়েক বছর আগেও একই দুর্গের অভ্যন্তরের একটি টিনশেড ঘর পুড়িয়ে দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো কোন প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর কাজ। জানা গেছে, ১২ ফুট দীর্ঘ ও ৬ ফুট প্রশস্ত এ পাকা কবরস্থানটি রোয়াইলবাড়ি দুর্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে পরিচিত ছিল। নির্জন স্থান হওয়ায় গত দুতিন আগে কোন এক রাতের আঁধারে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা সেটি ভেঙ্গে মাটিতে মিশিয়ে দেয়। কবরস্থানটির পাশে একটি মসজিদ এবং মাদ্রাসা থাকলেও সেখানকার কেউ বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানায়নি। সাংবাদিকদের মাধ্যমে খবর পেয়ে কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মইন উদ্দিন খন্দকার শুক্রবার সন্ধ্যায় থানা পুলিশ নিয়ে জায়গাটি পরিদর্শন করেন। তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে রবিবার কেন্দুয়া থানায় মামলা অথবা জিডি করা হবে। পরে আইনগতভাবে দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হবে। পরবর্তীতে কবরস্থানটি পুনরায় আগের নক্সা অনুযায়ী পাকা করা হবে বলেও জানান তিনি। স্থানীয়রা জানান, ডেঙ্গু মিয়ার কবরস্থানের পাশেই রয়েছে নেয়ামত বিবির কবর। সেখানে একটি টিনশেড ঘর ছিল। স্থানীয় কিছু লোক প্রতিবছর সেখানে বার্ষিক ওরশের আয়োজন করতেন। অনেকের মতো, এটি তৎকালীন শাসকদের সৈন্যবাহিনী বা পদাতিক বাহিনীর আউটপোস্ট ছিল। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর প্রথমে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত এবং পরে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সেখানে খনন কাজ চালায়। এসব খনন কাজের মাধ্যমে ইটের দেয়ালবেষ্টিত দুর্গ, মূল প্রবেশদ্বার (সিংহদ্বার), বহু কক্ষবিশিষ্ট একাধিক ইমারতের চিহ্ন, শান বাঁধানো ঘাটসহ দুটি বড় পুকুর, দুটি পরিখা, বুরুজ ঢিবি বা উঁচু ইমারত (টাওয়ার), বার দুয়ারী ঢিবি, কবরস্থান, মসজিদ, মিহরাব, চওড়া প্রাচীর, সুড়ঙ্গপথ, লতাপাতা ও ফুল-ফলে আঁকা রঙিন প্রলেপযুক্ত কারুকাজ, পোড়ামাটির অলঙ্কৃত ইট, টালি, জ্যামিতিক মোটিফ, টেরাকোটা, বর্শা, প্রস্তরখ- এবং লোহা ও চিনামাটির নানা জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়। ঐতিহাসিক এ দুর্গটিতে স্থায়ী কোন পাহারাদার নেই। চারদিকে নেই সীমানা প্রাচীরও।
×