ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

যমুনাপাড়ে ‘মুজিব দর্শন’ ম্যুরাল

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের দুর্লভ ছবি,ছাপচিত্র

প্রকাশিত: ০২:১০, ১৬ মার্চ ২০২১

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের দুর্লভ ছবি,ছাপচিত্র

বাবু ইসলাম ॥ বাহ্ কী চমৎকার! পেছনে বহমান যমুনা নদী, দক্ষিণে অনতিদূরে বঙ্গবন্ধু সেতু আর সামনে জাতির পিতার আলোকোজ্জ্বল ম্যুরাল। অনিন্দ্য সুন্দর অবয়বে নির্মাণ করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নামে ‘মুজিব দর্শন’ ম্যুরাল। সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের দুর্লভ কিছু ছবি দিয়ে ছাপচিত্র অঙ্কন করা হয়েছে ম্যুরালের পাশের দেয়ালে। মনে হয় টেরাকোটা। সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর হার্ডপয়েন্টে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থ দুটির আদলে গড়ে তোলা এই ‘মুজিব দর্শন’ ম্যুরাল দেখতে প্রতিদিন হাজারো মানুষের ভিড় জমে যমুনাপাড়ে। শহরতলীর নতুন ভাঙ্গাবাড়ি মহল্লার আল আমিন খান বাবু ম্যুরাল ঘুরেফিরে দেখার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে চেনা এবং জানার আগ্রহ প্রকাশ করলেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন সিরাজগঞ্জ সরকারী কলেজে। কিন্তু এতদিন বঙ্গবন্ধুকে চেনা ও জানার এত আগ্রহ জন্মায়নি। যতটা জন্মেছে যমুনার হার্ডপয়েন্টে ‘মুজিব দর্শন’ ম্যুরাল দেখে। বেলকুচি উপজেলার মুকুন্দগাতির আসাদুজ্জামান আসাদ এসেছিলেন সপরিবারে। তিনিও খুব আগ্রহ প্রকাশ করলেন বঙ্গবন্ধুকে চেনা ও জানার। তার বর্ণনায় চাঁদের আলো আর বিদ্যুতের আলোকচ্ছটায় যমুনাপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল আরও দর্শনীয় হয়ে ওঠে। স্মৃতির পাতায় জেগে ওঠে বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা। বাংলাদেশ এক ও অভিন্ন। প্রায় ১৬ ফুট উচ্চতার তিন হাজার ছয় শ’ বর্গফুট এলাকাজুড়ে নির্মিত এই ‘মুজিব দর্শন’ ম্যুরাল পরিদর্শনে প্রতিদিন হাজারো মানুষের আগমন ঘটে যমুনাপাড়ে। জাতির পিতার ম্যুরালের নিচে ছোট পরিসরে ওয়াকওয়ে এবং নানা জাতের ফুলের বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু যেমন নিঃস্বার্থভাবে তাঁর জীবনোৎসর্গ করেছেন দেশের জন্য, জনগণের জন্য, বাগানের ফুলও তেমন বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে সুগন্ধ ছড়াবে দর্শনার্থীদের মাঝে, জনগণের মাঝে। পাশের দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের দুর্লভ কিছু ছবি দিয়ে ছাপচিত্র অঙ্কন করা হয়েছে। ভাষা আন্দোলনে একুশের প্রথম শোক সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি, জাতীয় চার নেতার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু, ১৯৫৪ সালের নির্বাচনী প্রচারে রাজশাহীতে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সঙ্গে, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজধানী ক্রেমলিনে ভাষণের ছবি, ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে চীনা প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইয়ের সঙ্গে, ’৫৭ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদের সঙ্গে, মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে, শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবিসহ আরও কিছু দুর্লভ ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো দেয়াল। যমুনার হার্ডপয়েন্টের পুরাতন জেলখানার ঘাটে পৌঁছালেই চোখের সামনে ভেসে উঠবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যতদিন ‘বাংলাদেশ’ নামক ভূখণ্ড থাকবে, ততদিন বঙ্গবন্ধু থাকবেন প্রতিজন বাঙালীর স্মৃতির পাতায়Ñ এমনটাই বলেছেন ‘মুজিব দর্শন’ ম্যুরালের পরিকল্পনা ও নক্সা প্রণয়নকারী পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার। আগামী প্রজন্মের মধ্যে মুজিব আদর্শ ছড়িয়ে দিতে এই পরিকল্পনা নেয়ার কথা জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারে জন্ম নেয়া এবং অসাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনায় সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা সরকারী এই কর্মকর্তা জানান, যমুনা নদীর পাড়ে হার্ডপয়েন্টে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পানি উন্নয়ন বোর্ড এই ম্যুরাল নির্মাণ করেছে। যমুনাপাড়ের ভ্রমণবিলাসী হাজারো দর্শক এই ম্যুরালের সামনে এলেই মনে হবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কথা, স্মৃতির পাতায় ভেসে উঠবে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের সংগ্রামী ইতিহাস। এ প্রজন্মের সন্তানেরা বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশকে জানবে। মুজিব জন্মশতবর্ষে ঐতিহাসিক ৭ মার্চে সিরাজগঞ্জের যমুনারপাড়ে এই ‘মুজিব দর্শন’ শীর্ষক ম্যুরাল উন্মোচন করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধের পুরাতন জেলখানা ঘাটে ‘মুজিব দর্শন’ শীর্ষক ম্যুরাল উদ্বোধন করেছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি। এ সময় তাঁর সঙ্গে উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এমপি, আব্দুল মমিন মণ্ডল এমপি, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক একেএম ওয়াহেদ উদ্দিনসহ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
×