ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

এপ্রিলের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ না হলে এ অর্থবছরে এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না

অর্থের অভাবে আটকে আছে বুড়িগঙ্গা পুনরুদ্ধার প্রকল্প

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

অর্থের অভাবে আটকে আছে বুড়িগঙ্গা পুনরুদ্ধার প্রকল্প

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ অর্থের অভাবে আটকে আছে ‘বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার (নতুন ধলেশ্বরী-পুংলী-বংশাই-তুরাগ-বুড়িগঙ্গা রিভার সিস্টেম)’ প্রকল্প। বাস্তবায়নে বিলম্ব হলে আরও একদফা বাড়বে প্রকল্প ব্যয়। এই প্রকল্পের কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। চলতি বছর এপ্রিলের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ না করলে এই অর্থবছরে এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। বর্ষা মৌসুম শুরু হলে আরও একদফা ঝুলে যাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ। এক্ষেত্রে অর্থ প্রাপ্তির ওপর প্রকল্পটির শেষ মুহূর্তের কাজ নির্ভর করছে। প্রায় এক যুগ ধরে চলছে এই প্রকল্পের কাজ। অর্থ সঙ্কটের কবলে পড়ে বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে এই প্রকল্পটি। অনেকের কাছেই এই প্রকল্পটি ‘উচ্চাভিলাষী’; আবার কারো মতে ‘বাস্তবমুখী’। তবে এর কাজ যথাসময়ে সম্পন্ন হোক এটি সকলেরই প্রত্যাশা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ১৬৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে যমুনা নদীর পানি আসবে বুড়িগঙ্গায়। বাড়তি ফসল উৎপাদনসহ বহুমুখী সুবিধা সংবলিত এই প্রকল্পটির সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন নির্ভর করছে অর্থনৈতিক জোগানের ওপর। অতীতেও অর্থের অভাবে প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়েছিল। যার ফলে ২০০৮ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটির কাজ এখনও শেষ হয়নি। এক যুগ আগে এই প্রকল্পটির যেখানে ব্যয় ছিল ৯৮৮ কোটি টাকা। বর্তমানে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তাগিদ থাকলেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অর্থের টানাপোড়েন এখনও রয়ে গেছে। দশ বছরে ভূমি অধিগ্রহণ, ভৌত কাজ, ড্রেজিং বাবদ এই প্রকল্পের পেছনে ৬শ’ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রকল্পটি যথাসময়ে বাস্তবায়ন করতে হলে দ্রুততার সঙ্গে অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন বলে সেখানে কর্মরত একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জানায়। ওই প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তার মতে, তারা বিল না পাওয়ায় ঠিকভাবে কাজ করতে পারছেন না। জানা গেছে, এই অর্থ বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দ এখনও মেলেনি। এছাড়াও প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পর এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও প্রয়োজন হবে বছরে ৭২ কোটি টাকা। অন্যথায় এর সুফল পাওয়া যাবে না। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেছেন, এটি প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি। এর সঙ্গে আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট। আমরা বুড়িগঙ্গাকে সচল করতেই যমুনার পানি কয়েকটি নদীর মাধ্যমে বুড়িগঙ্গায় আনার প্রকল্প গ্রহণ করেছি। কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা প্রকল্প কাজ শেষ করতে পারবো। প্রকল্পের ব্যাপারে সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেছেন, প্রকল্পটির ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ইনশাআল্লাহ আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বাকি কাজ সম্পন্ন করতে পারব। অর্থ সঙ্কটের কবলে পড়ে আবারও প্রকল্পের কাজ বাধাগ্রস্ত হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অর্থের কোন সমস্যা হবে না। কাজ শেষ করতে প্রয়োজনীয় অর্থ অবশ্যই বরাদ্দ দেয়া হবে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, চলতি বছর জুনের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে হলে দ্রুততার সঙ্গে এই প্রকল্পের ১শ’ কোটি টাকা প্রয়োজন। মার্চের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে না পারলে এপ্রিল থেকে যমুনায় পানি বাড়তে শুরু করবে। তখন কাজ নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে কয়েক কিলোমিটার উজানে আলীপুর ও বেলটিয়ার মাঝে নিউ ধলেশ্বরীর অফটেক মুখ। এই মুখ কেটেই যমুনার পানি আনা হবে বুড়িগঙ্গায়। প্রকল্পের কাজে যথেষ্ট গতি রয়েছে। তিনটি স্থানে এই প্রকল্পের কার্যক্রম চলছে। যমুনা থেকে নিউ ধলেশ্বরীর যে মুখটি কেটে পানি নেয়া হবে সেখানে কাজ করছে নারায়ণগঞ্জ ড্রেজার। অফটেক মুখ থেকে এরা ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত কেটে সেডিমেন্ট বেসিন পর্যন্ত যাবে। এই বেসিনে যমুনা নদী থেকে আসা পানি বালিমুক্ত করবে। এই সেডিমেন্ট বেসিন, ইনটেক চ্যানেল ও সেডিমেন্ট বেসিনের বাইরে বছরে গড়ে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ২৩৫ ঘনমিটার পলি জমা হবে। জমা হওয়া বালু ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে অপসারণ ও তা বিক্রিও করা যাবে। ৪০০ মিটার চওড়ায় ৩ লাখ ১৪ হাজার স্কয়ার মিটারের বেসিনটির নির্মাণ কাজও এগিয়ে চলছে দ্রুততার সঙ্গে। এরপর থেকে সাড়ে ১৪ কিলোমিটার খনন কাজ করছে এডিএল ও ডব্লিউইএল যৌথভাবে। ৬৭ থেকে ৮৭ দশমিক ৫ এর মাঝে সাড়ে ২০ কিলোমিটার খননের কাজ করছে বঙ্গ ড্রেজার লিমিটেড।
×