স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ নগরীর রমেশ সেন রোডের যৌনপল্লী এখন নারী কেনা বেচার হাট! উদ্ধারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিনিয়ত এই যৌনপল্লীতে কেনা বেচা হচ্ছে নারী। এর মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীর চাহিদাই বেশি। ময়মনসিংহ নগরীর প্রাচীন এই যৌনপল্লীতে অন্তত ১০০ অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীকে দিয়ে ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক যৌনকর্মী হিসেবে সেক্সট্রেড করতে বাধ্য করা হচ্ছে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক নারীদের বয়সের তথ্য গোপন করে যৌনপল্লীর সর্দারনীরা নিজ হেফাজতে রেখে বছর জুড়ে এই ব্যবসা চালিয়ে আসলেও দেখার কেউ নেই! অভিযোগ রক্ষকরাই ভক্ষকের ভূমিকা পালন করায় এর কোন প্রতিকার মিলছে না। সর্বশেষ ব্যারিস্টার সালমা আলীর নেতৃত্বে একটি দল রমেশ সেন রোডের এই যৌনপল্লী থেকে একদিনেই উদ্ধার করে নিয়ে যায় ২২ অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীকে। এরপর কিছুদিন এই যৌন পল্লীতে নারী কেনা বেচা বন্ধ থাকলেও ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে এর সঙ্গে জড়িত দালালচক্র। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসেই অন্তত ১৫/২০ অপ্রাপ্ত বয়স্ক নারী কেনা বেচা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র। সূত্র জানায়, নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত যৌনপল্লীর বিভিন্ন বাড়িতে অন্তত ১০০ অপ্রাপ্ত বয়স্ক যৌনকর্মী রয়েছে। যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করছে এমন সংস্থার সূত্রগুলো জানায় সংঘবদ্ধ একটি দালালচক্র অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীদের এখানে এনে সর্দারনীদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। বিক্রি হওয়া নারীদের কয়েকদিন যৌনপল্লীর সর্দারনীরা আটকে রাখে। এ সময় বিভিন্ন কৌশলে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি-ধমকি প্রদানসহ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করার ২/৩ দিন পর নামিয়ে দেয়া হয় সেক্সট্রেডে। সূত্রগুলো আরও জানায়, অপ্রাপ্ত বয়স্ক প্রতিটি নারী ২০-৪০ হাজার টাকায় কেনা হয় দালালদের কাছ থেকে। এরপর নগরীর ১ নম্বর ফাঁড়ি পুলিশের সঙ্গে ৪০-৫০ হাজার টাকা লেনদেন সেরে নাম তোলা হয় যৌনকর্মীর তালিকায়। এ সময় প্রকৃত বয়সের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদ কিংবা নাম পরিচয় ও ঠিকানা যাচাই বাছাইয়ের কোন নজির নেই। তথ্য গোপন করে ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহারসহ ১৪-১৭ বয়সী নারীদের প্রাপ্ত বয়স্ক দেখিয়ে নেয়া হচ্ছে যৌনকর্মীর লাইসেন্স। যৌনপল্লীর সূত্রগুলোর দাবিÑ ফেব্রুয়ারি মাসেই এ রকম ২০ অপ্রাপ্ত বয়স্ক নারীকে সেক্সট্রেডের অনুমতি নেয় সর্দারনীরা। পুরো যৌনপল্লী নিয়ন্ত্রণ করছে আনু ও লাভলী। যৌনপল্লীর ১, ২,৩ নম্বর বাড়ি, ঠাকুরবাড়ি ও সৌরভের বাড়ি আনু এবং ৪ ও ৫ নম্বর বাড়ি লাভলী নিয়ন্ত্রণ করছে। যৌনপল্লীর মিতা ও শিল্পীর বিরুদ্ধে নারী পাচারের অভিযোগ রয়েছে। চট্টগ্রাম ও ফরিদপুরের দুই কিশোরীকে উদ্ধারের ঘটনায় বের হয়ে এসেছিল নারী কেনা বেচার নানা কাহিনী। সর্বশেষ সালমা আলীর নেতৃত্বে ২২ কিশোরী উদ্ধারের ঘটনা তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এসব ঘটনায় অনেকে ফেঁসে যাচ্ছে আশঙ্কা করা হলেও শেষতক কিছুই হয়নি।
সবকিছুই ধামাচাপা দেয়া হয়। গত ২০১৭ সালে এই যৌনপল্লী থেকে অন্তত ২৫ অপ্রাপ্ত বয়স্ক নারীকে উদ্ধার করা হয়।