ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রসূতিদের পাশে

মো. দেলোয়ার হোসেন

প্রকাশিত: ০১:৫১, ৯ ডিসেম্বর ২০২২

প্রসূতিদের পাশে

গর্ভবতী মায়ের সন্তান হওয়ার পর সন্তান যখন কেঁদে উঠে তখন খুবই আনন্দ লাগে

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ সাতবাড়ীয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের স্বাস্থ্য সেবিকা শাহানা ফেরদৌসীর গর্ভবতী মা’দের সেবা দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
স্বাস্থ্য সেবিকা শাহানা ১৯৮৯ সালে এসএসসি পাস করার পর কুমিল্লা পরিবার কল্যাণ প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়ে ১৮ মাসের স্বাস্থ্য পরিদর্শিকা হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৯৮ সালে মে মাসে প্রশিক্ষণ শেষে চট্টগ্রামের সূর্যের হাসি ক্লিনিকে দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত কাজ করেন। এ সময় তিনি নগরীর বস্তি এলাকায় গিয়ে এইডস রোগী, যৌনকর্মী ও গর্ভবতী মা’দের চিকিৎসা দিয়ে গেছেন।

পরবর্তীতে ৩ বছর মেয়াদি মমতার অধীনে গর্ভবতী মা’দের নিয়ে বন্দরটিলা এলাকায় কাজ করেন। শাহানা পূর্ব সাতবাড়ীয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৯ সালে এসএসসি, ১৯৯২ সালে নগরীর এমইএস কলেজ থেকে এইচএসসি, একই কলেজ থেকে ১৯৯৭ সালে বি.এ (পাস) ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ২০০১ সালে ১ম বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে ১৭ নভেম্বর ২য় সংসারে পদার্পণ করলেও তিনি কোনো সন্তান ধারণ করতে না পারায় গর্ভবতী মা’দের সেবা দিয়ে ব্যস্ত জীবন পার করছেন।

তার বর্তমান শ^শুরবাড়ি চন্দনাইশ হাশিমপুর সিকদার বাড়িতে। তার বাপের বাড়ি চন্দনাইশ সাতবাড়ীয়াতে। বর্তমান শ^শুরবাড়িতে ২ মেয়ে সন্তান রয়েছে একজন বিবাহিত হলেও অপরজন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। ২ মেয়ে ও স্বামী নিয়ে তিনি খুব সুখে সংসার জীবন অতিবাহিত করছেন। ২০১১ সালে ২৪ জানুযারি সাতবাড়ীয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে যোগদান করার পর থেকে তিনি প্রতি সপ্তাহে ৪/৫ জন মহিলার ডেলিভারি করে থাকেন।

তিনি বলেন, এ পর্যন্ত তিনি সহস্রাধিক গর্ভবতী মহিলার প্রসব বেদনা দেখেছেন এবং তাদের সেবা দিয়েছেন। তার সবচেয়ে ভালো লাগে একজন মা যখন অনেক কষ্টের পর তার সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়, তখন তার হাসি তাকে আনন্দিত করে। তিনি আরও বলেন, একজন গর্ভবতী মায়ের সন্তান হওয়ার পর সন্তান যখন কেঁদে উঠে তখন খুবই আনন্দ লাগে। আর না কাঁদলে মন খুব খারাপ হয়ে যায়। অনেক সময় গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়। রোগী পেলে বাড়ি যেতে ইচ্ছা করে না।

তিনি স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে বলেন, ডেলিভারির কোনো কোনো সময় সন্তান অর্ধেক আটকে যায়, তখন খুব ভয় লাগে। সন্তান ডেলিভারির পর মা’র স্বস্তি ও আনন্দ তাকেও আনন্দিত করে। তিনি বলেন, এ পেশা তার খুবই ভালো লাগে। যতদিন বেঁচে থাকবেন, ততদিন গর্ভবতী মায়েদের সেবা দিয়ে যাবেন। তার এ সেবা যেন স্থানীয় গ্রাম পর্যায়ের মহিলারা স্বাচ্ছন্দ্যে পায়, সেজন্য তিনি অধিকাংশ সময় বাপের বাড়িতে অবস্থান করেন।

স্থানীয়দের মধ্যে মাঈন উদ্দীন বলেছেন, তার স্বজনদের সেবা নিতে গিয়ে সেবিকা শাহানা রোগীদের প্রতি আচরণ, আন্তরিকতা, ব্যবহার তাকে নয় অনেককেই মুগ্ধ করেছেন। কোনো রোগী আসলে তার সামনের খাবার পেলে আগের রোগীর সেবা দেয়। যার ফলে সাতবাড়ীয়া এলাকার এই কেন্দ্রটি চন্দনাইশে ২০২২ সালে মডেল ক্লিনিক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। নাজির হাট বাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম বলেছেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি বাজার সংলগ্ন হওয়ায় সবসময় তারা খবর রাখেন।

গভীররাতেও শাহানা ম্যাডামকে রোগীদের ডাকে সাড়া দিয়ে কেন্দ্রে সেবা দিতে দেখা যায়। বিশেষ করে গ্রামের মহিলারা তার নিকট গিয়ে  চিকিৎসা নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাতায়াতের পথটি সরু হওয়ায় রোগী এবং সেবকদের যাতায়াতের অসুবিধা হচ্ছে। পাশাপাশি রোগী বহনকারী যানবাহন বাজার থেকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতে পারে না। এ ব্যাপারে তিনি যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

×