
ছবি: সংগৃহীত
কানাডার ট্রেন ভ্রমণে দেখা হয়েছিল আমেরিকান সেভরি মুর ও কানাডিয়ান জিসেল রেমকের। দুজনেই সদ্য প্রয়াত স্বামী-স্ত্রীর শোকে বিধ্বস্ত। সেই ভ্রমণেই গড়ে ওঠে এক গভীর বন্ধুত্ব, যার পরিণতি, একসাথে বিশ্বভ্রমণ।
সেভরি মুর এবং তার স্ত্রী জান বহু বছর ধরে স্বপ্ন দেখতেন কানাডা ভ্রমণের। ট্রেনে বসে পাহাড়, হ্রদ আর বন পেরিয়ে যেতে যেতে জীবনকে নতুনভাবে উপভোগ করার পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু অবসরের কিছুদিন পরই সেই স্বপ্নে ছেদ পড়ে। জানের ক্যান্সার ধরা পড়ে এবং মাত্র ১৬ মাসের মধ্যে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সেভরি তখন জীবন থেকে যেন হারিয়ে যান। কিন্তু সেই ট্রেন ভ্রমণের স্বপ্নটা কখনোই ভুলতে পারেননি। চার বছর পর, একা সেই ভ্রমণেই বেরিয়ে পড়েন মনে মনে জানকে সাথে নিয়েই।
২০২৪ সালের ১ এপ্রিল, ভ্যাঙ্কুভার থেকে ‘দ্য কানাডিয়ান’ ট্রেনে উঠেছিলেন সেভরি। ট্রেনের সবচেয়ে বিলাসবহুল ‘প্রেস্টিজ’ শ্রেণিতে ছিলেন তিনি একমাত্র যাত্রী। দ্বিতীয় দিন, হঠাৎ দেখলেন এক অচেনা নারী তার আসনে বসে আছেন। পরে জানা যায়, তিনি জিসেল রেমকে একজন কানাডিয়ান যিনি সদ্য ক্যান্সারে স্বামী হারিয়েছেন।
দুজনেই একা, দুজনেই ব্যথিত, আবার দুজনেই এই ট্রিপটাকে মনে করছিলেন একরকম আত্মিক পুনর্জন্মের সুযোগ হিসেবে। ধীরে ধীরে আলাপ জমে, একসাথে ডিনার, গল্প, হাসি। সেভরি ও জিসেল একে অপরের পাশে দাঁড়ান, ঠিক যেমন একজন প্রকৃত বন্ধু দাঁড়ায় আরেকজনের শোকগ্রস্ত সময়ে।
টরন্টোতে এসে তারা বিদায় নেন, কিন্তু সিদ্ধান্ত হয় গুডবাই নয়, আউ রেভোয়ার আবার দেখা হবে। এবং তা হয়ও। ফোনালাপ, বার্তা আদান-প্রদান, তারপর সেভরির ভিক্টোরিয়ায় জিসেলের বাড়িতে ভ্রমণ, এবং সবশেষে একসাথে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা জুড়ে প্রায় দুই মাসের এক দীর্ঘ ট্রেনযাত্রা।
এই সফর তাদের সম্পর্ককে আরও গভীর করে। একজন অন্যজনের দুর্বলতা বুঝতে শেখেন, মানিয়ে চলেন, সমর্থন দেন। সেভরি একজন ক্যান্সার বেঁচে থাকা ব্যক্তি, প্রতিদিন তাকে ওষুধ খেতে হয়; এক সফরে ওষুধ ফেলে আসার পর জিসেলের তৎপরতায় দ্রুত সমাধান হয়।
এরপর তারা পৌঁছান ইউরোপে সেভরির জীবনের প্রথম মহাদেশ-ভ্রমণ। ২০২৫ সালের বসন্তে, তারা ছিলেন জার্মানির নিউশভানস্টেইন ক্যাসলে।
দুজনের সম্পর্ক প্রেম নয়, কিন্তু জীবনের দুঃসময়ে সঙ্গী হয়ে ওঠা এই বন্ধুত্ব যেন এক মহামূল্যবান সঙ্গ। তারা একে অপরের মৃত স্বামী-স্ত্রীর কথা বলেন, গল্প শোনান, স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখেন।
জিসেল বলেন, “আমি যেন আমার স্বামী ডেভকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরছি। ওর অকালমৃত্যুর পর আমি ওর জন্যই যেন এই জীবনটা উপভোগ করছি।” সেভরি যোগ করেন, “আমার স্ত্রী জানের হাজারো স্মৃতি আমি এখন জিসেলের সঙ্গে শেয়ার করি। ও যেন জানকে চিনতে শুরু করেছে। আমি ঠিক তেমনটাই অনুভব করি ডেভকে নিয়ে।”
দুজনের এই ভ্রমণ কেবল নতুন পথ দেখায়নি, বরং পুরনো জীবনের ক্ষতগুলোকে এক নতুন আলোর নিচে দেখতে সাহায্য করেছে।
সূত্র: সিএনএন
রবিউল