
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বজুড়ে ধনী ও ক্ষমতাবানদের প্রতি ক্ষোভ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এই ক্ষোভ এখন শুধুমাত্র কথায় সীমাবদ্ধ নেই—বড় ব্যবসায়ী ও ধনীদের বিরুদ্ধে সরাসরি হামলা, অপহরণ এবং অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনাও ঘটছে। এসব পরিস্থিতিতে নিজেদের এবং পরিবারের সুরক্ষায় বিলিয়নিয়ার ও সিইওরা এখন বিপুল অঙ্কের অর্থ খরচ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন।
গত ডিসেম্বরে ইউনাইটেডহেলথ কেয়ারের সিইও ব্রায়ান থম্পসনের হত্যাকাণ্ড, জানুয়ারিতে ফরাসি ক্রিপ্টোকারেন্সি উদ্যোক্তা ডেভিড বাল্যান্ডের অপহরণ ও নির্যাতন এবং এপ্রিলে বিলিয়নিয়ার স্টিভ সারোউইটজের বাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনা এই উদ্বেগকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী ভোটারদের মধ্যে ৪১% মনে করছেন, থম্পসনকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত লুইজি ম্যাঞ্জিওনের কাজ “গ্রহণযোগ্য” ছিল। যদিও ম্যাঞ্জিওনে দোষ স্বীকার করেননি। একই সময়ে সিইওদের প্রতি অনলাইন হুমকি ৪১% বেড়েছে বলে জানিয়েছে নিরাপত্তা বিশ্লেষণ সংস্থা নিসোস।
এ অবস্থায় নিরাপত্তা পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিলিয়নিয়ার ও কোম্পানিগুলোর চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রাইভেট সিকিউরিটি কোম্পানি Allied Universal জানিয়েছে, গত বছরের তুলনায় তাদের কাছে ১,৫০০% বেশি থ্রেট অ্যাসেসমেন্টের অনুরোধ এসেছে।
নিরাপত্তা চাহিদার সঙ্গে প্রতারকও বেড়েছে
নিরাপত্তা পরিষেবার উচ্চ চাহিদার সুযোগ নিয়ে অনেকেই মিথ্যা পরিচয়ে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সেজে প্রতারণা করছেন। অনেক রাজ্যে নিরাপত্তা পরিষেবা চালু করতে শুধু কয়েক দিনের প্রশিক্ষণেই লাইসেন্স পেয়ে যায়। ফলে সাধারণ মানুষের পক্ষে প্রকৃত নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ চেনা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একজন সাধারণ দেহরক্ষী রাখার বার্ষিক খরচই ১২০,০০০ ডলার থেকে শুরু। কিন্তু যারা প্রকৃত নিরাপত্তা চায়, তাদের জন্য খরচ আরও অনেক বেশি। উদাহরণস্বরূপ:
-
ইন্টারনেট নজরদারি ও তথ্য ফাঁস রোধ: বার্ষিক ২ থেকে ৩ লাখ ডলার।
-
নিরাপত্তা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ড্রাইভার: বার্ষিক ২.৫ থেকে ৫ লাখ ডলার।
-
বাড়ির নিরাপত্তা (সিসিটিভি ও অস্ত্রধারী নিরাপত্তারক্ষী): ৭.৫ লাখ ডলার থেকে ১০ লাখ ডলারের বেশি।
-
ভ্রমণকালীন সুরক্ষা: অবস্থানভেদে ব্যয় পরিবর্তনশীল।
-
সম্পূর্ণ এক্সিকিউটিভ প্রোটেকশন প্যাকেজ: কমপক্ষে ২০ লাখ ডলার, অনেক ক্ষেত্রেই তার চেয়ে বেশি।
এই ব্যয় অনেক সময় কোম্পানিগুলো নির্বাহীদের পারিশ্রমিক প্যাকেজের অংশ হিসেবে বহন করে। মার্কিন কর কোড অনুযায়ী, বাস্তব নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকলে এসব ব্যয় করছাড়যোগ্য।
কে কত খরচ করছেন?
-
মেটার সিইও মার্ক জুকারবার্গের নিরাপত্তায় গত চার বছরে খরচ হয়েছে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার।
-
স্ন্যাপের সিইও এভান স্পিগেল: ২.৮ মিলিয়ন ডলার (২০২৪ সালে)।
-
গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেটের সিইও সুন্দর পিচাই: ৮.৩ মিলিয়ন ডলার।
-
জুকারবার্গের ব্যক্তিগত রক্ষীদের সংখ্যা প্রায় ২০ জন বলে জানা গেছে। তার দলে পানি ও পর্বতারোহণ বিশেষজ্ঞ পর্যন্ত রয়েছে।
সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ
ধনীদের নিরাপত্তা নিয়ে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের একটি বিষয় হলো তাদের সন্তানরা। অপহরণ, সহিংসতা বা দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে অভিভাবকেরা চরম দুশ্চিন্তায় থাকেন। অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের সুরক্ষায় গোপনে ট্র্যাকিং ডিভাইস ব্যবহার করেন। কারও কারও নিরাপত্তারক্ষী বিদ্যালয়ের কর্মচারী সেজে থাকেন। এমনকি কিছু শিশু ভুয়া নাম ব্যবহার করেও স্কুলে যায়।
তবে শিশুদের ওপর কঠোর নিরাপত্তা চাপিয়ে দেওয়াকে অনেক বিশেষজ্ঞই অস্বাস্থ্যকর বলছেন। এটি শিশুদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্ত করে। ধনীরা চাইছেন তাদের সন্তান যেন স্বাধীনভাবে বেড়ে উঠতে পারে, যদিও নিরাপত্তা সবসময়ই গোপনে থাকে।
নিরাপত্তা খাতে এই চাহিদা দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ইনসাইট রিস্ক ম্যানেজমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা চিস ফাল্কেনবার্গ বলেন, মানুষ এখন খুব সচেতন, কিন্তু ১২ মাসের মধ্যেই এই মনোযোগ কমে যাবে। স্মৃতিশক্তি খুবই ক্ষণস্থায়ী।
সূত্র:https://www.forbes.com/sites/monicahunter-hart/2025/05/09/how-the-ultra-wealthy-are-protecting-themselves-against-arson-attacks-kidnapping-and-worse/?utm_source=whatsapp&utm_medium=social&utm_campaign=forbes
রবিউল