
দিনটা কেমন যাবে, তার অনেকটাই নির্ভর করে আপনি সকালে কীভাবে শুরু করছেন তার ওপর। যেমন শরীরকে সক্রিয় রাখতে দরকার ওয়ার্ম-আপ, তেমনই ব্রেনকে সক্রিয় ও সজাগ রাখতে দরকার একটু হালকা ব্রেন এক্সারসাইজ। মাত্র কয়েক মিনিট সময় দিলেই আপনি পেতে পারেন আরও ভালো ফোকাস, শক্তিশালী মেমোরি এবং দ্রুত সমস্যা সমাধানের দক্ষতা।
বিজ্ঞানীরা বলেন, প্রতিদিন সকালে ব্রেনকে একটু চ্যালেঞ্জ দিলেই নিউরনের কার্যক্রম বেড়ে যায়, বাড়ে কগনিটিভ স্কিলস। নিচে এমন ৯টি সহজ কিন্তু কার্যকর ব্রেন অনুশীলনের কথা বলা হলো, যেগুলো আপনি চাইলে আজ থেকেই শুরু করতে পারেন।
১. পাঁচ মিনিটের মাইন্ড ম্যাপ চ্যালেঞ্জ
দিনের শুরুর আগে একটুখানি সময় নিয়ে খাতায় লিখে ফেলুন আপনার আজকের লক্ষ্য বা কোনো একটা গুরুত্বপূর্ণ ভাবনা। তারপর সেই কেন্দ্রীয় বিষয়ের চারপাশে সম্পর্কিত কিছু উপ-পয়েন্ট সাজিয়ে নিন। এই প্রক্রিয়ায় আপনার ব্রেন একটা পরিষ্কার রোডম্যাপ পায় এবং মনোযোগ বাড়ে।
২. উল্টো অভ্যাস শেখা
আপনার প্রতিদিনের অভ্যাসে একটু উল্টো দিক থেকে ভাবুন। যেমন-বাঁ হাতে দাঁত মাজা, অন্য পথে হাঁটা বা প্রতিদিন যে কাপে চা খান সেটি বদলে ফেলা। এই ছোট ছোট পরিবর্তন ব্রেনকে নতুনভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করে, ফলে বেড়ে যায় মানসিক নমনীয়তা ও সক্রিয়তা।
এতে ব্রেনকে নিজের স্বাভাবিক ‘অটো মোড’ থেকে বের করে আনা হয়। ব্রেন তখন নতুন করে রাস্তাঘাট বুঝে নিতে শেখে,নতুনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, ফলে বুদ্ধি আর মনোযোগ বাড়ে।
৩. মানসিক অঙ্ক কষা
হাতের ক্যালকুলেটর বা ফোন ছাড়াই কয়েকটি অঙ্ক মনের মধ্যে কষে ফেলুন। যেমন,১৬ গুণ ৫ কত? ৭৫ + ৬৫ বা ১৩৭ - ৮৯। আস্তে আস্তে গুণ ও ভাগে যান।যেমন ১৭ গুণ ৬ বা ৮৪ ভাগ ৭।
এতে আপনার ব্রেন দ্রুত প্রসেসিং আর সঠিক অনুমানের ক্ষমতা বাড়াতে শেখে, যা বাস্তব জীবনের অনেক সমস্যার সমাধানে সহায়ক হয়।এমন চ্যালেঞ্জ ব্রেনকে একটিভ রাখে, বিশেষ করে সেই অংশগুলো যেগুলো অঙ্ক ও যুক্তির সঙ্গে জড়িত।
৪. তিন মিনিটে গল্প বলা
নিজের মনে বা কারও সামনে দাঁড়িয়ে তিন মিনিটে একটা গল্প বলুন। এটা হতে পারে আপনার কোনো পুরনো অভিজ্ঞতা, কাল্পনিক গল্প বা আজকের পরিকল্পনা। এর ফলে আপনার ব্রেনের ভাষা, স্মৃতি ও কল্পনার অংশগুলো একসঙ্গে সক্রিয় হয়ে ওঠে।
এই চর্চা ভাষাগত দক্ষতা, স্মৃতি এবং কল্পনাশক্তিকে একসঙ্গে জাগিয়ে তোলে। ব্রেন শেখে যুক্তি ধরে রেখে ধারাবাহিক চিন্তা করা।
৫. চার ইন্দ্রিয়ের সচেতনতা অনুশীলন
চোখ বন্ধ করে এক মিনিটের জন্য কেবল শোনার চেষ্টা করুন আশপাশে কী কী শব্দ হচ্ছে। এরপর মন দিন গন্ধ, ছোঁয়া ও স্বাদের দিকে। এমন অনুশীলন ব্রেনকে পরিবেশ সম্পর্কে আরও সংবেদনশীল করে তোলে এবং মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।
৬. শব্দ মিল খেলার ঝটিকা রাউন্ড
মনে মনে বা কারও সঙ্গে খেলে ফেলুন শব্দ নিয়ে খেলা। ধরুন আপনি বললেন ‘বৃষ্টি’। এখন দ্রুত বলুন, এর সঙ্গে মিল আছে এমন তিনটি শব্দ।যেমন ‘মেঘ’, ‘জল’, ‘ছাতা’। এমন খেলা ব্রেনের রিফ্লেক্স ও শব্দভান্ডার বাড়াতে দারুণ কাজ করে।
৭. এক মিনিটের স্মৃতি পরীক্ষা
একটি তালিকা বা ৪–৫ লাইনের একটি লেখা একবার পড়ে রাখুন। এরপর চোখ বন্ধ করে বা আলাদা খাতায় লিখে ফেলুন যতটা মনে আছে। প্রতিদিন এমন অনুশীলনে আপনার ব্রেনের রিটেনশন ক্ষমতা অনেক বেড়ে যাবে।
৮. ছোট্ট সকালের হাঁটা
সকালে মাত্র ৫–১০ মিনিট হাঁটলে শুধু শরীরই নয়, ব্রেনও রিফ্রেশ হয়। হাঁটার সময় ব্রেনে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ে, ডোপামিন নিঃসরণ হয় এবং মন হয়ে ওঠে আরও ফোকাসড।
৯. আয়নায় উল্টো লেখা
একটি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের নাম বা যেকোনো সাধারণ শব্দ উল্টো হাতে উল্টো দিক থেকে লিখুন। যেমন আপনি ডানহাতি হলে বাঁ হাতে ‘ভালোবাসা’ শব্দটি উল্টো থেকে সোজা লেখার চেষ্টা করুন। এতে ব্রেনের মোটর স্কিল এবং মনোযোগ দুই-ই বাড়ে।
এই ৯টি ছোট্ট ব্রেন এক্সারসাইজ প্রতিদিন সকালে মাত্র কয়েক মিনিট সময় নেবে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে আপনার মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অনেকটাই বাড়িয়ে তুলবে। চাইলে একসঙ্গে সব না করে প্রতিদিন একটি অনুশীলন বেছে নিতে পারেন। এক সপ্তাহ পরেই টের পাবেন।আপনার ব্রেন হয়ে উঠেছে আরও সজাগ, ধারালো ও সচল।
তাহলে আজ সকালে কোন ব্রেন এক্সারসাইজ দিয়ে শুরু করছেন?
সূত্র:https://tinyurl.com/yypbnd4f
আফরোজা