
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বখ্যাত বিনিয়োগকারী ও “ওমাহার ওরাকল” খ্যাত ওয়ারেন বাফেট নিজেকে একজন অন্তর্মুখী (ইন্ট্রোভার্ট) ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেন। জনসমক্ষে কথা বলার আতঙ্ক একসময় তার শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলেছিল। কিন্তু সেই ভয় কাটিয়ে উঠে আজ তিনি একজন আত্মবিশ্বাসী বিলিয়নেয়ার। তার জীবন ও অভিজ্ঞতা আজকের ইন্ট্রোভার্টদের জন্য এক অনন্য প্রেরণার উৎস।
বাফেট প্রমাণ করেছেন, অন্তর্মুখী স্বভাব কোনো দুর্বলতা নয়—বরং সঠিকভাবে ব্যবহৃত হলে এটি হয়ে উঠতে পারে এক অসাধারণ শক্তি। অন্তর্মুখীদের জন্য তিনি দিয়েছেন দশটি কার্যকর পরামর্শ, যা তাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে সাফল্যের পথ সুগম করতে পারে।
১. নিজের ভয়ের মুখোমুখি হন
বাফেট নিজেই স্বীকার করেছেন, ছাত্রজীবনে জনসমক্ষে কথা বলার ভয়ে অসুস্থ হয়ে পড়তেন। সেই ভয় কাটাতে তিনি ‘ডেল কার্নেগি’ কোর্সে ভর্তি হন, যা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তার মতে, ছোট ছোট চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেই ধীরে ধীরে ভয় কাটে এবং আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়।
২. গভীর চিন্তায় সময় দিন
বাফেট প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়াশোনা ও চিন্তায় কাটান। ইন্ট্রোভার্টদের স্বভাবসিদ্ধ মনোযোগী মন এই অভ্যাসে সহায়ক। তিনি বলেন, এই চিন্তাশীলতাই তাকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
৩. নিজের মতো করে যোগাযোগ দক্ষতা তৈরি করুন
যোগাযোগে দুর্বলতা থাকলে প্রতিভাও অচেনা থেকে যায়—এমনটাই মনে করেন বাফেট। ইন্ট্রোভার্টদের জন্য লিখিত যোগাযোগ ও পূর্বপ্রস্তুত বক্তব্য কার্যকর হতে পারে। ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে স্পষ্ট বার্তা পৌঁছে দেওয়াই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।
৪. অভ্যাস গড়ে তুলুন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব
বাফেটের পরামর্শ, যত তাড়াতাড়ি অভ্যাস গড়ে তোলা যায়, তত ভালো। কৈশোর ও যৌবনেই যদি দক্ষতা গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করা যায়, ভবিষ্যতে তা আরও বেশি কার্যকর হয়।
৫. “না” বলার অভ্যাস গড়ুন
তিনি বলেন, “খুব সফল মানুষরা প্রায় সব কিছুকেই ‘না’ বলে।” ইন্ট্রোভার্টদের জন্য এই পরামর্শ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সীমিত শক্তি সংরক্ষণ করে তা গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
৬. যা ভালোবাসেন, সেটিই করুন
নিজের পছন্দের কাজেই মগ্ন থাকলে তাতে স্বাভাবিকভাবে উৎসাহ আসে এবং সফলতাও ধরা দেয়। ইন্ট্রোভার্টদের জন্য এমন কাজ বেছে নেওয়া জরুরি যা তাদের ভেতর থেকে অনুপ্রাণিত করে।
৭. নিজের ওপর বিনিয়োগ করুন
নিজেকে দক্ষ করে তোলা এবং নিয়মিত উন্নত করার পরামর্শ দিয়েছেন বাফেট। তিনি মনে করেন, নিজের উন্নয়নে বিনিয়োগই সবচেয়ে ফলপ্রসূ।
৮. যা জানেন না, তাতে ঝুঁকবেন না
নিজের দক্ষতার বাইরে ঝুঁকি না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। অপরিচিত বিষয়ে কাজ করলে উদ্বেগ বাড়ে, কিন্তু পরিচিত ও বোঝা যায় এমন কাজে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়।
৯. গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলুন, সংখ্যায় নয়
বাফেটের দীর্ঘ দিনের ব্যবসায়িক অংশীদার চার্লি মাংগারের সঙ্গে সম্পর্কই প্রমাণ করে, গভীর ও অর্থবহ সম্পর্কই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ইন্ট্রোভার্টদের জন্য এটি একটি কার্যকর দৃষ্টান্ত।
১০. ধৈর্য ধরুন, দীর্ঘমেয়াদি ভাবুন
তাড়াহুড়োর পরিবর্তে ধৈর্য ও সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দেন বাফেট। ইন্ট্রোভার্টদের এই স্বভাব তাদের দীর্ঘমেয়াদে বড় সাফল্য এনে দিতে পারে।
ওয়ারেন বাফেটের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে, সাফল্যের জন্য অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্ব কোনো প্রতিবন্ধকতা নয়। বরং নিজের বৈশিষ্ট্যকে বুঝে, তা দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগালে ইন্ট্রোভার্টরাও হয়ে উঠতে পারেন সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব।
এম.কে.