
ছবি: প্রতীকী
সকালের শুরুটা যদি সঠিকভাবে করা যায়, তাহলে সারাদিনের কাজও হয় সজীব ও গতিময়। আর এই সঠিক শুরুটা করতে হলে প্রয়োজন পুষ্টিকর এবং ব্যালান্সড একটি সকালের নাস্তা। অনেকেই মনে করেন সকালে শুধু কিছু খেয়ে নিলেই হয়, কিন্তু বাস্তবতা হলো, দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার হচ্ছে সকালের নাস্তা। কারণ রাতে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার পর আমাদের শরীর মেটাবলিজম পুনরায় সক্রিয় করে এনার্জি উৎপাদন করে এই নাস্তা থেকেই। তাই ভুলভাল খেলে দিনের শুরুতেই শরীর হয়ে পড়ে ক্লান্ত ও মন থাকে অচঞ্চল। আবার সঠিক খাবার খেলে তা দীর্ঘ সময় ধরে শরীরে এনার্জি সরবরাহ করে এবং মানসিক ফোকাস বাড়ায়।
একটি শক্তিশালী সকালের নাস্তা গঠনের জন্য দরকার হয় কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং কিছুটা আঁশ। কার্বোহাইড্রেট শরীরকে তাৎক্ষণিক শক্তি দেয়, প্রোটিন দীর্ঘস্থায়ী শক্তি ও পেশি গঠনে সাহায্য করে, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট মস্তিষ্কের জন্য জরুরি আর আঁশ হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখে ও ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
প্রথমেই বলা যেতে পারে ওটসের কথা। ওটস এক ধরনের স্লো-রিলিজ কার্বোহাইড্রেট যা শরীরে ধীরে ধীরে গ্লুকোজ সরবরাহ করে। এর ফলে রক্তে চিনি দ্রুত বেড়ে আবার হঠাৎ কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না, যা ক্লান্তির বড় কারণ হতে পারে। এক বাটি ওটসে দুধ মিশিয়ে তার সঙ্গে কলা, আঙুর বা আপেল কেটে খাওয়া যেতে পারে। চাইলে সামান্য বাদাম, দারচিনি বা মধুও যোগ করা যায়। এতে স্বাদ যেমন বাড়বে, তেমনই পুষ্টিমানও হবে পূর্ণ।
যাদের সকালটা একটু তাড়াহুড়োর মধ্যে শুরু হয়, তারা চাইলে ডিমকে তাদের প্রধান খাদ্য করতে পারেন। ডিমে আছে উচ্চমাত্রার প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং বেশ কিছু ভিটামিন ও মিনারেল। একটি বা দুটি সেদ্ধ ডিমের সঙ্গে একটু লাল পাউরুটি, সঙ্গে শশা ও গাজরের সালাদ – এমন একটি প্লেটই হতে পারে দিনভর উদ্যমের জ্বালানি। চাইলে ডিম ভাজাও খাওয়া যায়, তবে কম তেলে ও অতিরিক্ত মসলা ছাড়া রান্না করাই ভালো।
ফলমূলও সকালের নাস্তার অপরিহার্য অংশ হতে পারে। কলা, পেঁপে, আপেল বা কমলা জাতীয় ফল দ্রুত এনার্জি দেয়, পাশাপাশি এগুলোতে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য পেঁপে বা আপেলের সঙ্গে দই একটি চমৎকার কম্বিনেশন। ঘন টকদই বা গ্রিক ইয়োগার্টে থাকা প্রোবায়োটিক হজমশক্তি বাড়ায় ও গ্যাসের সমস্যা কমায়। এটি খেলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা ভাবও থাকে।
সকালে চিনি বা অতিরিক্ত প্রসেসড খাবার খাওয়া যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত। বেকারি থেকে কেনা মিষ্টি পাউরুটি, প্যাকেটজাত সিরিয়াল বা মিষ্টিযুক্ত দুধ প্রক্রিয়াজাত খাবার শরীরে হঠাৎ চিনি বাড়িয়ে দেয়, পরে হঠাৎ করেই আবার সেই চিনি কমে গিয়ে ক্লান্তি ও ঘুম ঘুম ভাব তৈরি করে। তাই চেষ্টা করতে হবে প্রাকৃতিক বা কম প্রসেসড খাদ্যের দিকে ঝুঁকতে।
শক্তিশালী সকালের আরেকটি উপাদান হতে পারে বাদাম ও বীজজাত খাদ্য। যেমন: কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, চিয়া বীজ বা ফ্ল্যাক্স সিড। এদের মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, আঁশ এবং মিনারেল যা মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। সকালবেলায় এক মুঠো বাদাম বা ওটসের সঙ্গে মিশিয়ে খেলেই কাজ হয়ে যায়।
এছাড়া যারা চা বা কফি পান করেন, তারা অবশ্যই খালি পেটে না খেয়ে সেটি খাবার পর গ্রহণ করবেন। কারণ খালি পেটে কফি পান করলে গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি বেড়ে যেতে পারে। আবার কিছু মানুষ মনে করেন সকালে শুধু এক কাপ চা খেয়ে দিন শুরু করলেই যথেষ্ট, কিন্তু এটি খুবই ক্ষতিকর অভ্যাস। চায়ে সাময়িকভাবে মন চাঙা লাগলেও এতে শরীর পায় না পর্যাপ্ত শক্তি বা পুষ্টি। বরং চায়ের সঙ্গে হালকা করে কয়েকটি বিস্কুট বা পাউরুটি না খেয়ে বরং চেষ্টা করুন চায়ের আগেই ফলমূল বা অন্য কিছু খেতে।
আরেকটি উপযুক্ত নাস্তা হতে পারে মুগ ডাল দিয়ে তৈরি খিচুড়ি। হালকা করে রান্না করা ডাল-চালের খিচুড়িতে থাকে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেটের চমৎকার সমন্বয়। চাইলে এর সঙ্গে সবজি বা ডিমও যোগ করা যেতে পারে। এটি গ্রামীণ পরিবেশে বিশেষভাবে জনপ্রিয়, আর শহুরে জীবনেও এটি সহজে রান্না করা যায়। হালকা খিচুড়ি খেয়ে সারাদিন কর্মচঞ্চল থাকা যায় খুব সহজেই।
আবার কিছু মানুষ আছেন যারা সকালের নাস্তায় রুটি বা পরোটা খেয়ে অভ্যস্ত। তাদের জন্য পরামর্শ থাকবে, অতিরিক্ত তেলে ভাজা পরোটা না খেয়ে শুকনো রুটি বা অল্প তেলে ভাজা পরোটা খাওয়া ভালো। এর সঙ্গে ডিম, টক দই, সবজি বা ডাল – যেকোনো কিছু মিলিয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ প্লেট তৈরি করা যেতে পারে।
সবশেষে বলা যায়, সকালের নাস্তা কেবল ক্ষুধা মেটানোর জন্য নয়, বরং এটি একটি স্বাস্থ্যকর জীবনের ভিত্তি। যারা নিয়মিত ও সঠিকভাবে সকালের নাস্তা করেন, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে বেশি, ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে সহজ এবং মানসিক চাপও কম থাকে। সুতরাং আজ থেকেই অভ্যাস করুন পুষ্টিকর, সুষম ও পরিপূর্ণ সকালের নাস্তা খাওয়ার। এতে শুধু শরীর নয়, মনও থাকবে উদ্যমী, আর সারাদিনে আপনার প্রতিটি পদক্ষেপ হবে আরও আত্মবিশ্বাসী ও সচেতন।
এম.কে.