ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মেকআপের আড়ালে বিষ! বিশেষজ্ঞরা জানালেন সতর্ক থাকার কারণ

প্রকাশিত: ১৪:২৪, ৩ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৪:৩১, ৩ জুন ২০২৫

মেকআপের আড়ালে বিষ! বিশেষজ্ঞরা জানালেন সতর্ক থাকার কারণ

ছবি: সংগৃহীত।

সৌন্দর্য অর্জনের পেছনে স্বাস্থ্য যেন মূল্য না দেয়, কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা, জনমত ও বিশেষজ্ঞদের আলোচনা বলছে—কসমেটিকস বা সৌন্দর্য পণ্যে ব্যবহৃত কিছু নির্দিষ্ট উপাদান আমাদের শরীরে ক্যান্সার ডেকে আনতে পারে। প্যারাবেন, ট্যালকের মতো উপাদান ঘিরে বারবার উঠে আসছে প্রশ্ন। যদিও এই বিষয়ে চূড়ান্ত প্রমাণ মেলেনি, তবে সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

অ্যাপোলো ক্যান্সার সেন্টার, ভুবনেশ্বরের কনসালটেন্ট রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট ডাঃ সন্দীপ মুজুমদার এই বিষয়ে বলেন, “প্যারাবেন একটি প্রচলিত কসমেটিক প্রিজারভেটিভ, যা ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি রোধ করে। তবে এটি শরীরের ইস্ট্রোজেন হরমোনের মতো আচরণ করে বলে সন্দেহ করা হয় যে এটি স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যদিও বড় পরিসরে মানবদেহে এর সরাসরি প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি, তবে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে গবেষণা চলছে।”

তিনি আরও বলেন, “ট্যালক, যা সাধারণত পাউডারে ব্যবহৃত হয়, তা অ্যাসবেস্টস দিয়ে দূষিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। অ্যাসবেস্টস নিশ্চিতভাবেই ক্যান্সারের কারণ হিসেবে চিহ্নিত। যদিও কসমেটিক গ্রেড ট্যালক অ্যাসবেস্টসমুক্ত হওয়ার কথা, তবুও গোপন বিপদ থেকেই যায়, বিশেষ করে গোপনাঙ্গে ব্যবহারে ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের সম্ভাবনার দিকে গবেষণা ইঙ্গিত দিয়েছে। যদিও এ সম্পর্কিত প্রমাণ দুর্বল বা বিতর্কিত, তবুও পণ্যের গুণমানের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ জরুরি।”

ডাঃ মুজুমদার আরও জানান, প্যারাবেন ও ট্যালক ছাড়াও আরও কিছু উপাদান যেমন সিন্থেটিক রঙ, কৃত্রিম সুগন্ধি এবং ফরমালডিহাইড নির্গতকারী সংরক্ষণ উপাদান নিয়েও গবেষণা চলছে। দীর্ঘমেয়াদি, অল্প মাত্রার একাধিক রাসায়নিক উপাদানের একসাথে প্রভাব শনাক্ত করা কঠিন হলেও এর সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি উপেক্ষা করা যায় না।

তিনি বলেন, “আজকের বিজ্ঞান এখনও সরাসরি বলছে না যে প্রতিদিন ব্যবহৃত কসমেটিকস ক্যান্সার সৃষ্টি করে, তবে গবেষণা চলমান। ভোক্তাদের সচেতন হওয়া, স্বচ্ছ লেবেল পড়া ও নিরাপদ উপাদানযুক্ত পণ্য বেছে নেওয়া জরুরি।”

পিডি হিন্দুজা হাসপাতাল ও মেডিকেল রিসার্চ সেন্টার, মুম্বাই-এর মেডিকেল অনকোলজি বিভাগের প্রধান ডাঃ সাচিন আলমেল বলেন, “সৌন্দর্যচর্চা জনপ্রিয় হলেও এর অপ্রকাশিত দিকগুলো নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। অনেক পণ্যের উপাদান নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা, এমনকি ক্যান্সারের সঙ্গেও যুক্ত বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। সব পণ্য ক্ষতিকর না হলেও প্রতিদিনের ব্যবহার আমাদের শরীরে বিষাক্ত উপাদান জমা করার পথ তৈরি করে।”

তিনি আরও বলেন, “অনেকেই বিশ্বাস করেন যে কসমেটিকস পণ্যের নিরাপত্তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত, কিন্তু বাস্তবে নিয়ন্ত্রক দুর্বলতাগুলো এই বিপদের সুযোগ তৈরি করে দেয়। তাই প্রাকৃতিক বা অর্গানিক পণ্য বেছে নেওয়া এবং সরকারি নিয়মকানুন আরও কঠোর করা উচিত। স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি—যাতে বাহ্যিক সৌন্দর্যের পেছনে দৌড় আমাদের ভেতরের সুস্থতাকে খর্ব না করে।”

দ্রষ্টব্য: এই প্রতিবেদনটি কেবল তথ্যের উদ্দেশ্যে তৈরি। কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

সূত্র: https://l8.nu/-tZb

মিরাজ খান

×