ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শৈশব স্মৃতি হারিয়ে যায় কেন? গবেষণায় মিলছে নতুন তথ্য

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:২৪, ৩১ মে ২০২৫

শৈশব স্মৃতি হারিয়ে যায় কেন? গবেষণায় মিলছে নতুন তথ্য

ছবি: সংগৃহীত

আমাদের শৈশবের স্মৃতিগুলো কেন এত ঝাপসা হয়ে যায়? কেন শিশুকালে ঘটে যাওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার কিছুই মনে থাকে না? এই প্রশ্নগুলো প্রায় সবাইকেই ভাবায়। সম্প্রতি এই বিষয়ে একগুচ্ছ নতুন গবেষণা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ‘পপুলার সায়েন্স’-এর একটি প্রতিবেদন, যেখানে মানুষের ‘চাইল্ডহুড অ্যামনেশিয়া’ বা শৈশব স্মৃতিভ্রংশের রহস্য নিয়ে আলোচনা করেছেন গবেষক সারা পাওয়ার।

শৈশব বনাম শিশুকাল: কোনটা ভুলে যাই, কোনটা নয়?

ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের ‘লাইফস্প্যান সাইকোলজি’ বিভাগে কর্মরত সারা পাওয়ার বলেন, শিশুদের বয়স তিন বছরের নিচে থাকাকালীন স্মৃতিকে বলা হয় ‘ইনফ্যানটাইল অ্যামনেশিয়া’—যা একেবারেই মুছে যায়। আর তিন থেকে ছয় বছর বয়স পর্যন্ত থাকা ঝাপসা স্মৃতিগুলোকে বলা হয় ‘চাইল্ডহুড অ্যামনেশিয়া’।

গবেষণায় দেখা গেছে, শিশু ইঁদুরেরা স্মৃতি রেকর্ড করতে পারে, কিন্তু বড় হওয়ার পর সেই স্মৃতিগুলো তারা সচেতনভাবে মনে করতে পারে না। কিছু নির্দিষ্ট ব্রেইন রিসেপটর প্রোটিন নিয়ন্ত্রণ করে এসব স্মৃতি আবার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এই ফলাফল মানুষ নিয়েও গবেষণার দরজা খুলে দিয়েছে।

সারা পাওয়ার ব্যাখ্যা করেন, অনেক সময় মানুষ ছোটবেলার কোনো ঘটনার স্মৃতি বলে যা মনে করে, তা আসলে ছবি বা অভিভাবকের কথার পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে তৈরি হওয়া ‘ভুল স্মৃতি’। তিনি বলেন, “যদি আপনি বারবার নিজের দ্বিতীয় জন্মদিনের ছবি দেখেন, তাহলে আপনি মনে করতে শুরু করবেন যে ঘটনাটি আপনি নিজে দেখেছেন।”

স্মৃতি নিয়ে গবেষণার জন্য পাওয়ার তার ল্যাবে একটি অভিনব প্লেরুম তৈরি করেছেন, যা কখনো গভীর জঙ্গল, কখনো জলের রাজ্য হিসেবে পরিণত হয়। সেখানে একাধিক বাক্সে খেলনা লুকানো থাকে। শিশুদের স্মৃতিশক্তি যাচাই করার জন্য পুনরায় একই রুমে পাঠিয়ে পরীক্ষা করা হয় তারা আগের খেলনার জায়গা মনে রাখতে পারে কি না।

এই গবেষণায় অংশ নিচ্ছে ১৮ থেকে ২৪ মাস বয়সী ৩৬০টি শিশু। তাদের কয়েকটি দলে ভাগ করে বিভিন্ন সময় বিরতিতে আবার একই পরিবেশে পাঠানো হবে, যাতে বোঝা যায় কোন বয়সে দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি তৈরি হতে শুরু করে।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যেসব শিশুর অভিভাবকরা গল্প বলার সময় তাদের অংশগ্রহণ করান, যেমন—“তুমি তখন কী করেছিলে?”, “তারপর কী হয়েছিল?”—সেসব শিশু ভবিষ্যতে বেশি স্মৃতি ধরে রাখতে পারে।

আমরা শৈশব ভুলে যাই কেন? প্রশ্নটা কোটি টাকার। গবেষক পাওয়ার বলেন, কিছু প্রাণী যেমন ডেগু ইঁদুরের ক্ষেত্রে এমন স্মৃতিভ্রংশ হয় না। কারণ তারা জন্ম থেকেই কিছুটা স্বনির্ভর। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে হয়তো এটি একটি ‘রিসেট সিস্টেম’, যা জীবনের একটি নতুন অধ্যায়ের জন্য প্রস্তুত করে।

ইলেকট্রোএনসেফালোগ্রাফি (EEG) এবং ফাংশনাল এমআরআই (fMRI) প্রযুক্তির মাধ্যমে দেখা গেছে, তিন বছরের নিচের শিশুরা স্মৃতি তৈরি করতে পারে। কিন্তু বড় হয়ে সেই স্মৃতি মনে রাখতে পারে না—কারণ সেগুলো হয়তো মস্তিষ্কে সংরক্ষিত থাকলেও পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয় না।

এই বছরের শেষদিকে পাওয়ারের গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হবে। হয়তো তখনো চূড়ান্ত উত্তর পাওয়া যাবে না, কিন্তু আমাদের হারিয়ে যাওয়া শৈশবের স্মৃতির সীমারেখা সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে।

মুমু

×