
ছবিঃ সংগৃহীত
চট্টগ্রাম নগরীতে দেশের প্রথম মনোরেল নির্মাণে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) বড় ধরনের অগ্রগতি অর্জন করেছে। যানজট নিরসনে ও পরিবহন ব্যবস্থায় আধুনিকতা আনতে চসিক আজ রোববার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে জার্মানি ও মিশরের যৌথ উদ্যোগে গঠিত ওরাসকম কনস্ট্রাকশন এবং আরব কন্ট্রাক্টর গ্রুপের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষর করেছে।
চুক্তি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান দুটি চট্টগ্রামে মনোরেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি) শুরু করবে। সমঝোতা স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, বিদেশি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, নগরের ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
সম্মেলনে ওরাসকম-পেনিনসুলা কনসোর্টিয়ামের চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ কাউসার আলম চৌধুরী জানান, এই প্রকল্পটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলে বাস্তবায়ন হবে এবং এতে সম্পূর্ণ বিনিয়োগ আনবে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো। তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী হলেও যানজট ও পরিবহন সংকট দ্রুত বাড়ছে। মনোরেল একটি পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক সমাধান হিসেবে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।”
প্রকল্পের প্রস্তাবিত তিনটি রুট হলো:
লাইন-১ (২৬.৫ কিমি): কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর (বহদ্দারহাট, চকবাজার, লালখান বাজার, দেওয়ানহাট ও পতেঙ্গা হয়ে)।
লাইন-২ (১৩.৫ কিমি): সিটি গেট থেকে শহীদ বাশিরুজ্জামান স্কয়ার (এ.কে. খান, নিমতলী, সদরঘাট ও ফিরিঙ্গি বাজার হয়ে)।
লাইন-৩ (১৪.৫ কিমি): অক্সিজেন থেকে ফিরিঙ্গি বাজার (মুরাদপুর, পাঁচলাইশ, আন্দরকিল্লা ও কোতোয়ালি হয়ে)।
চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, “চট্টগ্রামকে দক্ষিণ এশিয়ার গেটওয়ে হিসেবে গড়ে তুলতে এই মনোরেল প্রকল্প যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। প্রায় ৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পে বিনিয়োগ হবে ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা। এতে চসিকের কোনো আর্থিক দায় থাকবে না, আমরা শুধু লজিস্টিক সহায়তা ও ভূমি বরাদ্দ দেব।”
তিনি আরও বলেন, “মনোরেল শুধু যানজট নয়, এটি চট্টগ্রামকে একটি পরিবেশবান্ধব, পর্যটন ও ব্যবসাবান্ধব নগরীতে রূপান্তরের দিকেও এগিয়ে নেবে। রাজস্ব আয় শুধু টিকিট নয়, বরং বিজ্ঞাপন, স্টেশনভিত্তিক দোকানপাট এবং আশপাশের সম্পত্তির মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমেও অর্জন হবে।”
গ্রেটার চিটাগাং ইকোনমিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “চট্টগ্রামকে স্মার্ট ও টেকসই নগরীতে রূপান্তরের অংশ হিসেবে এই মনোরেল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা নাগরিক ফোরাম গঠন করে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখবো।”
চসিক কর্মকর্তারা জানান, মনোরেল হচ্ছে একক রেলপথে চলা একটি আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা যা সাধারণত উঁচু পিলারের ওপর নির্মিত হয়। এটি মেট্রোরেলের তুলনায় প্রায় ৪০% খরচ সাশ্রয়ী, দ্রুত নির্মাণযোগ্য এবং শহরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কার্যকরভাবে চলতে সক্ষম।
বিশেষজ্ঞরা জানান, বিশ্বজুড়ে জাপান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও ভারতের বিভিন্ন শহরে মনোরেল সফলভাবে চালু রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালেও কয়েকটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান চসিককে মনোরেল নির্মাণে প্রস্তাব দিয়েছিল, তবে তা নানা কারণে বাস্তবায়িত হয়নি। এবার চসিকের উদ্যোগ ও বিদেশি বিনিয়োগে প্রকল্পটি বাস্তব রূপ পেতে চলেছে।
সূত্র: বাসস
মুমু