ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৪ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট বক্তৃতার বিবরণ

প্রকাশিত: ০১:৫৪, ৩ জুন ২০২৫

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট বক্তৃতার বিবরণ

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপনের জন্য সোমবার বিটিভি ভবনে

প্রিয় দেশবাসী, আসসালামু আলাইকুম
শুরুতেই বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ এবং সম্ভ্রমহারা মা-বোনদের- যাদের চূড়ান্ত আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন দেশ। পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসের বিপ্লবের অকুতোভয় শহীদগণকে যারা দ্বিধাহীন ত্যাগের মহিমায় মৃত্যুকে ছাড়িয়ে আরোহণ করেছেন অনন্য উচ্চতায়। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন-এর কাছে আমি তাদের সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। 
২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের এক ক্রান্তিলগ্নে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। আমাদের উপর বর্তায় বিগত সরকারের রেখে যাওয়া প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার এবং নৈরাজ্য দূর করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার কঠিন কাজটি। আমি স্বস্তি এবং আনন্দের সঙ্গে জানাতে চাই, মাত্র ১০ মাসেরও কম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে সে লক্ষ্য পূরণে অনেকদূর এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থান-এর পর যে আশায় আমরা বুক বেঁধেছিলাম তা খুব শীঘ্রই আমরা পূরণ করতে সক্ষম হবো ইনশাল্লাহ। 
মধ্যমেয়াদি নীতি-কৌশল 
প্রিয় দেশবাসী
জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ভেঙে পড়া আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, শ্রমিক অসন্তোষ প্রশমিত করে শিল্প খাতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা এবং বিগত সরকারের সময়ে লাগামহীন দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার ফলে চরম সংকটাপন্ন ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের মত কঠিন চ্যালেঞ্জ আমাদের মোকাবেলা করতে হয়েছে। শুরু থেকেই আমরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে চেষ্টা করেছি এসব সমস্যার সমাধানপূর্বক দেশকে একটি স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে।

প্রবাস আয়ের আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি, রপ্তানি আয়ের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি, কৃষি ও শিল্প খাতের উৎপাদন অব্যাহত থাকা এবং সঠিক মুদ্রা ও রাজস্বনীতির সমন্বিত প্রয়োগের সুফল হিসেবে আমরা ইতোমধ্যে কাক্সিক্ষত স্থিতিশীলতা অর্জনে অনেকদূর এগিয়েছি। তবে, পরিপূর্ণ স্থিতিশীলতা অর্জন করে অর্থনীতিকে স্বাভাবিক গতিতে ফিরিয়ে আনার পথে এখনও বেশ কিছু ঝুঁকি রয়েছে। 
গত বছরের আগস্ট মাসে আমাদের সরকার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে তখন আমাদের সামনে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরে মানুষকে স্বস্তি দেওয়া। 
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে আমরা ধারাবাহিকভাবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করেছি। এর ফলে নীতি সুদের হার ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত কার্যক্রমকে সহায়তা করতে সংকোচনমূলক রাজস্বনীতি অনুসরণ করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনায় সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে।

পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ১০.৮৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। আশার কথা হলো এবারের রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্মরণকালের মধ্যে সবচাইতে স্থিতিশীল ছিল। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এই জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কোঠায় নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে এ লড়াইয়ের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে।     
মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখি ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা জরুরি। তবে এটি নিশ্চিত করতে হলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকা অত্যাবশ্যক। প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হওয়ায় এবং রপ্তানি স্থিতিশীল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এপ্রিল মাসে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সে কারণে আমরা বিগত ১৪ মে তারিখে বাজারভিত্তিক মুদ্রাবিনিময় হার চালু করেছি। 
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার। গত বছর আকস্মিক বন্যায় আউশ এবং আমন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চাইতে কম হওয়ায় খাদ্যশস্যের মজুদে কিছুটা ঘাটতি দেখা দেয়। এ ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে আমরা ৯ লাখ মেট্রিক টন চাল এবং ৭ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত নেই। যার আওতায় ইতোমধ্যে ৮ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং ২ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানি করা হয়েছে।  পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করে কৃষি উৎপাদনের জন্য সারসহ অন্যান্য উপকরণে প্রয়োজনীয় ভর্তুকি দিচ্ছি। এ ছাড়া খাদ্য নিরাপত্তার গুরুত্ব বিবেচনায় সারের মজুদ বা বাফার স্টক বৃদ্ধি করা হয়েছে। 
নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনীতিকে সচল রাখতে জ্বালানির পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং একইসঙ্গে তা যথাসম্ভব সাশ্রয়ী রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে নীতিগতভাবে আমরা বিদ্যুতের মূল্য আপাতত না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিদ্যুৎ খাতে প্রদত্ত ভর্তুকির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস করার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সার্বিক ব্যয় ১০ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। আমরা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিগুলোও পর্যালোচনা করছি এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় কমাতে এনার্জি অডিট করার উদ্যোগ নিয়েছি। এ বছরের মধ্যেই অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৬৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার এবং ২০২৮ সালের মধ্যে স্থানীয় কূপ থেকে অতিরিক্ত ১৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। 
আমদানির তুলনায় রপ্তানিতে অধিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় চলতি হিসেবের ভারসাম্যে ক্রমাগত উন্নতি সাধিত হচ্ছে। ২০২৫ সালের মার্চ মাসের শেষে চলতি হিসেবের ঘাটতি হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ০.৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। তবে সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন নীতি চলমান থাকায় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর গতি কিছুটা শ্লথ হয়ে পড়েছে এবং এর ফলে প্রকল্পগুলোর জন্য প্রতিশ্রুত বৈদেশিক ঋণ ছাড়ে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। তবে, চলতি অর্থবছরের জুন নাগাদ আমরা বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর নিকট হতে আরও প্রায় ৩.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট সহায়তা পাবো মর্মে প্রত্যাশা করছি।  
মধ্যমেয়াদে অর্থনীতির গতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। অথচ তুলনীয় অনেক দেশের চাইতে বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম। রাজস্ব খাতকে আরও গতিশীল করতে এবং রাজস্ব আহরণে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করতে ইতোমধ্যে আমরা বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। অটোমেটেড ব্যবস্থার মাধ্যমে আয়কর রিটার্ন দাখিল সহজ করা হয়েছে, কর আদায় বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন নতুন কর অফিস স্থাপন করা হচ্ছে এবং কর আহরণের মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি রাজস্ব কৌশল তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া, কর ব্যবস্থাপনাকে আরও কার্যকর এবং কর আদায়ের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে রাজস্ব নীতি হতে পৃথক করার লক্ষ্যে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। 
বিগত সরকারের সময়ে আর্থিক খাতে নজিরবিহীন লুটপাট এবং দুর্নীতির ফলে খেলাপি ঋণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেলেও তা বারবার পুনঃতফশিলিকরণের মাধ্যমে আর্থিক খাতের প্রকৃত অবস্থা গোপন রাখা হয়েছিল। কিন্তু আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী Loan Lease Classification ও প্রভিশনিং ব্যবস্থা অবলম্বন করেছি। ফলে এ খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২০২৩ সালের জুন মাসের ১০.১১ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ২০.২০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এ খাতের প্রকৃত চিত্র উদ্ঘাটনের লক্ষ্যে Asset Quality জবারবি (অছজ) এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত অবস্থা নিরুপণের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। 
অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এনে একটি উন্নত সমাজ বিনির্মাণের উদ্দেশে আমরা যে সকল কার্যক্রম গ্রহণ করেছি তার মূল লক্ষ্য হচ্ছে শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য কার্বনভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ যার মাধ্যমে আমূল পরিবর্তন হবে এ দেশের মানুষের জীবনমানের এবং মুক্তি মিলবে বৈষম্যের দুষ্টচক্র থেকে। যে স্বপ্নকে ধারণ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ভিত রচিত হয়েছিল, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা একটি সুন্দর, বাসযোগ্য আবাসস্থল রেখে যেতে চাই, জনগণের জীবনযাত্রায় নিয়ে আসতে চাই এক সুদূরপ্রসারী পরিবর্তনের ঢেউ। আমরা সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে এবারের বাজেট সাজাবার চেষ্টা করেছি।
আমাদের এবারের বাজেট কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আমরা বিগত বাজেটের চেয়ে ছোট আকারের বাজেট আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাব করছি। প্রবৃদ্ধি-কেন্দ্রিক ধারণা থেকে সরে এসে আমরা চেষ্টা করেছি সামগ্রিক উন্নয়নের ধারণায় জোর দিতে। তাই প্রথাগত ভৌত অবকাঠামো তৈরির খতিয়ান তুলে ধরার পরিবর্তে আমরা এবারের বাজেটে প্রাধান্য দিয়েছি মানুষকে। মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা, সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা, জীবিকার নিরাপত্তা এবং বৈষম্যহীন পরিবেশ- এ অত্যাবশ্যক উপাদানগুলো ছাড়া যে কোন রাষ্ট্র অকার্যকর হয়ে পড়ে, দুর্বল হয় সমাজের ভিত।

এবারের বাজেটে তাই শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুশাসন, নাগরিক সুবিধা, কর্মসংস্থান ইত্যাদি বিষয়ের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্রমাগত যে সকল সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে তার সুবিধা ভোগ এবং যে সকল চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে তা মোকাবিলা করে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার দিকেও মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। 
জুলাই বিপ্লবে আত্মোৎসর্গকারীরা আমাদের সামনে একটি বিরল সুযোগ তৈরি করে দিয়ে গেছেন দেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করে ভবিষ্যতের জন্য শক্ত ভিত গড়ার। আপনাদের সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতায় সে লক্ষ্য পূরণের প্রত্যয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের অঙ্গীকার পূরণ করাই হবে আগামী দিনে আমাদের প্রধান লক্ষ্য।       
সুশাসন ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার : গত দেড় দশকে দুর্নীতি এবং সুশাসনের অভাবে দেশের প্রায় সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিল। তাই দেশকে পুনরায় সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে আমাদের অন্তর্বর্তী সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কারের রূপরেখা তৈরি এবং বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। ইতোমধ্যে সবগুলো কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। 
দুর্নীতি প্রতিরোধ : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি নির্মূলের লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর সংশোধন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে দুর্নীতি দমন সংক্রান্ত জাতিসংঘ কনভেনশন (টঘঈঅঈ) অনুসরণে দুর্নীতি দমন কমিশন যথাযথভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গঠিত ‘দুদক সংস্কার কমিশন’ সম্প্রতি তাদের সুপারিশ প্রদান করেছে যা যাচাইপূর্বক দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। 
ভূমি আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনার সংস্কার : ভূমি সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে ধীরগতি হ্রাসের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সে লক্ষ্যে ভূমি সংক্রান্ত ফৌজদারি এবং দেওয়ানি  মামলা মোকদ্দমাগুলো হ্রাস করা এবং ভূমিসেবাকে সহজীকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। অটোমেটেড ভূমি ব্যবস্থাপনার আওতায় ভূমিসেবা ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। ভূমি প্রশাসনের সকল সেবা পরিকাঠামোকে জনগণের নিকট পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ভূমি ব্যবস্থাপনার অটোমেশন প্রকল্প দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার : অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হলো একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর। গত দেড় দশকে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয়েছে। তাই আমরা নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের উপর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করেছি এবং এ লক্ষ্যে বিভিন্ন আইন, নীতিমালা ও আদেশ সংশোধন ও সংস্কারের কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। 
বিচার ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সংস্কার : বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নে সারা দেশের অধস্তন আদালতসমূহ তত্ত্বাবধান করার জন্য হাইকোর্ট বিভাগের ১৩ জন মাননীয় বিচারপতির সমন্বয়ে ১৩টি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে বিচারক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও জবাবদিহিমূলক করার উদ্দেশ্যে সুপ্রীম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করা হয়েছে। 
নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সেবার উন্নয়ন : সুরক্ষা সেবার মানোন্নয়নে পাসপোর্ট প্রদানের ক্ষেত্রে পুলিশ প্রতিবেদন গ্রহণের শর্ত তুলে দেওয়া হয়েছে। কারাগারকে সংশোধনাগারে রূপান্তরের লক্ষ্যে বাংলাদেশ কারা ও সংশোধন পরিষেবা আইন, ২০২৫ প্রণয়নের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। 
আর্থিক খাতের পুনর্গঠন ও সংস্কার : বিগত ১৫ বছরে আর্থিক খাতে নজিরবিহীন অপশাসনের মাধ্যমে এ খাতকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ৫ আগস্ট ২০২৪-এর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ব্যাংকিং খাতের দীর্ঘদিনের কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও আমানতকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে সরকার গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি, তারল্য সংকট, দেউলিয়াত্ব বা অস্তিত্বের জন্য হুমকি এমন সকল ঝুঁকির সময়োপযোগী সমাধান এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণে ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ প্রণয়ন করা হয়েছে।

সংস্কারের অংশ হিসেবে তিনটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, যার প্রধান উদ্দেশ্য হলো: (ক) ব্যাংকিং খাত সংস্কার কর্মসূচির ভিত্তি  তৈরি করতে ব্যাংকগুলোর সম্পদের ব্যাপক গুণগত পর্যালোচনা করা, (খ) নীতি ও প্রবিধানসমূহের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিতকরণে এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সুশাসন বজায় রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা এবং (গ) দেশিয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চুরি/পাচার হওয়া সম্পদ উদ্ধারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা। 
বিগত সরকারের অনিয়ম, কারসাজি ও দুর্নীতির ফলে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে পুনরায় গতি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোতে সরকারের শেয়ার কমিয়ে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্তকরণ, বেসরকারি খাতের দেশিয় বড় কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য উৎসাহ প্রদান, বাজারে কারসাজি রুখতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনা এবং ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভরতা কমাতে পুঁজিবাজার থেকে বন্ড ও ইক্যুইটির মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের সুযোগ বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।   
সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও সেবার উন্নয়ন : সরকারের নীতি ও কর্মকৃতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য বর্তমানে সকল মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের বাজেট প্রণয়নের কাজ রইঅঝ++ এর মাধ্যমে সম্পন্ন করা হচ্ছে। রইঅঝ++ সিস্টেম ব্যবহার করে বর্তমানে প্রায় ১৪ লাখ সরকারি চাকরিজীবী ঊঋঞ এর মাধ্যমে সরাসরি তাদের ব্যাংক একাউন্টে বেতন পাচ্ছেন। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রেও ঊঋঞ ব্যবহার করা হচ্ছে। 
সরকারি অনুদান ও সাহায্য মঞ্জুরীর সঠিক তথ্য সংরক্ষণ এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ১৭২টি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও এর অধীন বাস্তবায়িত প্রকল্পের বিপরীতে প্রজাতন্ত্রের সরকারি হিসাবে চবৎংড়হধষ খবফমবৎ (চখ) অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এছাড়া, সরকারি ক্রয় কার্যক্রমে অধিকতর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘চঁনষরপ চৎড়পঁৎবসবহঃ অপঃ’ সংশোধন করা হয়েছে। ঘরে বসে ঝামেলাবিহীন উপায়ে এক ঠিকানায় সকল সরকারি সেবা অনলাইনে প্রদানের লক্ষ্য নিয়ে অচিরেই ‘নাগরিক সেবা’ শীর্ষক প্ল্যাটফর্ম চালু করা হবে। এ উদ্যোগের মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক তরুণ-তরুণীর উদ্যোক্তা হিসেবে আয়ের সুযোগও তৈরি হবে।      
বিগত সরকারের রেখে যাওয়া সংকটাপন্ন অর্থনীতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক বিষয়ে ‘Re-strategising the Economy and Mobili“ing Resources for Equitable and Sustainable Development’ শীর্ষক টাস্কফোর্স থেকে এবং দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়ে শ্বেতপত্র কমিটি থেকে ইতোমধ্যে সুপারিশ পাওয়া গেছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং পরবর্তী অধ্যায়ে বিবৃত খাতভিত্তিক অগ্রাধিকার নির্ধারণের ক্ষেত্রে এ সকল সুপারিশসমূহ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। 
আমি এখন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট এবং আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট আপনাদের কাছে পেশ করছি।   
২০২৪-২৫ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট : সার্বিক রাজস্ব আহরণ ও ব্যয়ের অগ্রগতি বিবেচনায় নিয়ে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট সংশোধন ও সমন্বয় করতে হয়েছে। 
প্রস্তাবিত সংশোধিত রাজস্ব আয়: চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা মূল বাজেট হতে ২৩ হাজার কোটি টাকা হ্রাস করে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করছি।
প্রস্তাবিত সংশোধিত ব্যয়: চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সরকারি ব্যয় ৫৩ হাজার কোটি টাকা হ্রাস করে ৭ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করছি। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা হতে ৪৯ হাজার কোটি টাকা হ্রাস করে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করছি।
সংশোধিত বাজেট ঘাটতি ও অর্থায়ন: চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ঘাটতি প্রস্তাব করা হচ্ছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ৪.১ শতাংশ।  
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট
প্রিয় দেশবাসী 
সম্পদের সুষম বণ্টন ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া এবারের বাজেটের অন্যতম লক্ষ্য। পাশাপাশি, রাজস্ব আয় ও সরকারি ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে একটা যৌক্তিক ও বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট প্রণয়নও হবে এ বাজেটের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। সে পরিপ্রেক্ষিতে আমি এখন আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট কাঠামোর ওপর আলোকপাত করছি। 
রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর অব্যাহতি যৌক্তিকীকরণসহ মধ্যমেয়াদে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করতে জনবল বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া, কর অব্যাহতি সুবিধা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনা, কর জাল সম্প্রসারণ, বিভিন্ন পণ্য ও পরিষেবায় যথাসম্ভব একই হারে ভ্যাট নির্ধারণ করার বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে। 
প্রস্তাবিত রাজস্ব আয়: আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের প্রস্তাব করছি, যা জিডিপির ৯.০ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর মাধ্যমে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস হতে ৬৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার প্রস্তাব করছি।
প্রস্তাবিত ব্যয়: আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করছি, যা জিডিপি’র ১২.৭ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে, ২০১৫ সালের পর অদ্যাবধি কোনো বেতন কাঠামো প্রণীত না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি। 
প্রস্তাবিত বাজেট ঘাটতি ও অর্থায়ন: আগামী অর্থবছরে আমাদের সামগ্রিক বাজেট ঘাটতি ও ঋণ সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ৩.৬ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ঘাটতির মধ্যে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস হতে এবং ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস হতে নির্বাহ করার প্রস্তাব করছি। আগামী অর্থবছরে সুদ পরিশোধ বাবদ মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। 
এখন আমি খাতভিত্তিক সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করছি। 
খাতভিত্তিক অগ্রাধিকার
শিক্ষা : একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক কাঠামো বিনির্মাণে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষার  কোনো বিকল্প নেই। তাই, এবারের বাজেটে বিজ্ঞানভিত্তিক, প্রযুক্তিনির্ভর ও কর্মোপযোগী শিক্ষার পরিবেশ তৈরি এবং যুব কর্মসংস্থানকে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। 
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা : প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যার মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের জন্য পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি ও মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদান। প্রাথমিক শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে চলতি অর্থবছরে সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ৫ হাজার ৯৪৬টি শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ, ১৭ হাজার ১৬৪টি ওয়াশব্লক নির্মাণ, ৪ হাজার ৪৫০টি টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া, চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫০ হাজার ৪৯২টি বই বিতরণ করা হয়েছে। 
প্রাথমিক স্তরে শতভাগ শিক্ষার্থীকে ইএফটির মাধ্যমে উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচি’-এর জন্য ২ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করছি।  
প্রাথমিক ও গণশিক্ষার গুরুত্ব বিবেচনায় আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এ খাতে ৩৫ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা : উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী, আধুনিক ও বিশ্বমানে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্তর্জাতিক মানের Outcome Based Education (OBE) পদ্ধতিতে কারিকুলাম হালনাগাদ করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আওতায় ৬২টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে শিক্ষা অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়া চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক পর্যায়ে ৫১ লাখ, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ৮ লাখ এবং স্নাতক পর্যায়ে ১ লাখ ৬৫ হাজার অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সংশোধিত পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের মাঝে সরবরাহের লক্ষ্যে ১ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করছি। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বোনাস বৃদ্ধি এবং গ্রাচ্যুইটি প্রদানসহ সকল স্তরের শিক্ষকদের মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।  ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষায় মোট ৪৭ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৪৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা।
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা : বর্তমানে কারিগরি শিক্ষায় এনরোলমেন্টের হার ১৯ শতাংশ। ২০২৫ সালের মধ্যে এটি ২০ শতাংশে উন্নীত করতে প্রতিটি বিভাগীয় পর্যায়ে মহিলা পলিটেকনিক ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, জেলা পর্যায়ে পলিটেকনিক এবং উপজেলা পর্যায়ে টেকনিক্যাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। 
মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে ১ হাজার ১৩৫টি মাদ্রাসা ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে এবং ৫১৩টি বহুতল ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। ৪৯৩টি মাদ্রাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া, ইবতেদায়ী পর্যায়ে বৃত্তি প্রদান এবং মাদ্রাসাসমূহ এমপিওভুক্তি বাবদ ৭২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করছি। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১২ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ : ২০৩০ সালের মধ্যে সকল নাগরিককে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনতে সেবার পরিধি বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন ও দক্ষ জনবল নিয়োগে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের শূন্য পদ পূরণে চিকিৎসক, সেবিকা, টেকনিশিয়ান, ফার্মাসিস্ট ও স্বাস্থ্য সহকারীদের নিয়োগ ত্বরান্বিত করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টির সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে আগামী অর্থবছরে তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে অতিরিক্ত ৪ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা এবং সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির জন্য ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করছি।     
উন্নত দেশসমূহের চাহিদা অনুযায়ী কেয়ারগিভার খাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা সম্ভব হলে একদিকে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রসারিত হবে এবং একইসঙ্গে প্রবাস আয় অর্জনের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। এ লক্ষ্যে কেয়ারগিভারদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নার্সিং শিক্ষায় পিএইচডি কোর্স চালু এবং আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য একটি নার্স শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার বিষয় বিবেচনায় রয়েছে।    
জাতীয় উন্নয়নে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব বিবেচনায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য ৪১ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এ বাবদ বরাদ্দ ছিল ৪১ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা। 
কর্মসংস্থান ও দক্ষতা উন্নয়ন 
তরুণ উদ্যোক্তা এবং যুবসমাজের জন্য আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি : যুব সমাজের অমিত শক্তি ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দক্ষ যুবশক্তি গড়ে তোলা এবং তাদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। ‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’ প্রতিপাদ্যকে ঘিরে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’ উদ্যাপন করা হয়েছে। আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সারাদেশে সফল যুব উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণের সিলিং বৃদ্ধি করে ৫ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।

এছাড়া, তরুণ উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল গঠন করার প্রস্তাব করছি। তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য এমন তহবিল এবারই প্রথম। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের জন্যও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তরুণ-যুবাদের দেশের উন্নয়নে আরও গভীরভাবে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে আগামী অর্থবছরে ‘তারুণ্যের উৎসব’ উদ্যাপনের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করছি।   
দক্ষতা উন্নয়ন : দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীকে অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ কারিকুলাম তৈরি করে বিশ্বমানের কারিগরি প্রশিক্ষণ সনদপত্র প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি চাহিদা নিরূপণ, চাহিদা অনুযায়ী কারিকুলাম প্রণয়ন এবং কারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষা/ প্রশিক্ষণ প্রদান করে ঔড়ন চষধপবসবহঃ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিল্প প্রতিষ্ঠান, প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ও একাডেমিয়া-এর মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের কার্যক্রম চলমান আছে। 
বৈদেশিক কর্মসংস্থান : বিদেশগামী কর্মীদের বহির্গমন প্রক্রিয়াকরণের সকল কাজ ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৬টি জেলায় বহির্গমন ছাড়পত্র প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে সকল জেলা পর্যায়ে এ সুবিধা বিস্তৃত করা হবে।
শ্রমিকের কল্যাণ ও নিরাপত্তা বিধান : বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে বাৎসরিক মজুরি বৃদ্ধির হার শতকরা ৫ ভাগ থেকে বৃদ্ধি করে শতকরা ৯ ভাগে উন্নীত করা হয়েছে। ট্যানারি, সোপ অ্যান্ড কসমেটিকস, কোল্ড স্টোরেজ ও দর্জি কারখানার নিম্নতম মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী তিন অর্থবছরে আরও ১৫টি শিল্প সেক্টরের নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ/পুনঃনির্ধারণ করা হবে। 
কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা : কৃষি ফলন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিকূল পরিবেশসসহিষ্ণু জাত ও উন্নততর চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবন, সুলভ মূল্যে কৃষি উপকরণ সরবরাহ, সেচ এলাকা সম্প্রসারণ, বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়ন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। 
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদেরকে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশ হতে সার আমদানি এবং দেশে ইউরিয়া সার উৎপাদন বাবদ প্রয়োজনীয় ভর্তুকি প্রদান করা হচ্ছে। 
উৎপাদিত কৃষি পণ্যের অপচয় রোধ করাসহ সার্বিক কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা শক্তিশালী করার লক্ষ্যে প্যাকেজিংসহ হিমাগার ও কোল্ড চেইন কাঠামো শক্তিশালীকরণ, কৃষি পণ্য পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, কৃষি পণ্যের সাপ্লাই চেইনের সকল অংশীজনের একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেইজ তৈরি করা, বিশেষায়িত কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা, ইত্যাদি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। 
খাদ্য নিরাপত্তা : দারিদ্র্য বিমোচন এবং নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ওএমএস এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চলমান রয়েছে। বর্তমানে ১ হাজার ৯০১টি কেন্দ্রের মাধ্যমে সারাদেশে ওএমএস কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তালিকাভুক্ত চা বাগানের শ্রমিকদের মাঝে প্রতিকেজি ১৯ টাকা দরে গম বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া, ‘ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট’ কর্মসূচির আওতায় ১০ লাখ ৪০ হাজার দুস্থ মহিলাকে মাসে ৩০ কেজি হারে চাল প্রদান করা হচ্ছে।  
আগামী অর্থবছরে খাদ্য গুদামের ধারণ ক্ষমতা ৩৭ লাখ মে. টনে উন্নীতকরণ এবং খাদ্যশস্য ব্যবস্থাপনার প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ : দেশের ক্রমবর্ধমান নিরাপদ প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে মৎস্য এবং গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির টেকসই জাত উন্নয়ন এবং রোগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কাক্সিক্ষত উৎপাদনের লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার The State of World Fisheries and Aquaculture ২০২৪ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ ২য় এবং বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে ৫ম স্থানে রয়েছে।   
মিঠা পানির মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছর ২৯ মে হতে ২৮ জুন পর্যন্ত হাওড় এলাকায় সকল ধরনের মাছ ধরা বন্ধ রাখার জন্য সরকারি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। সামুদ্রিক জলসীমায় ১৫ এপ্রিল হতে ১১ জুন পর্যন্ত সকল প্রকার মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দেশের মানুষের আমিষের চাহিদা বিবেচনায় রেখে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৫২ লক্ষ ৫৫ হাজার মে. টন মৎস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে কৃষি, খাদ্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জন্য মোট ৩৯ হাজার ৬২০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ছিল ৩৮ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা। সামাজিক নিরাপত্তা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
দরিদ্র, প্রান্তিক ও ঝুঁকিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য হ্রাস, সামাজিক বৈষম্য হ্রাস এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করতে এবারের বাজেটে সুবিধাভোগীর সংখ্যা এবং মাথাপিছু বরাদ্দ উভয়ই বৃদ্ধি করার দিকে নজর দিয়েছি। এ প্রেক্ষাপটে আগামী অর্থবছর থেকে বেশ কিছু ভাতার হার বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করছি। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হলো- বয়স্ক ভাতার মাসিক হার ৬০০ টাকা হতে ৬৫০ টাকায়, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের মাসিক ভাতা ৫৫০ টাকা হতে ৬৫০ টাকায়, প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতা ৮৫০ টাকা হতে ৯০০ টাকায়, এবং মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় প্রদত্ত মাসিক ভাতার হার ৮০০ হতে ৮৫০ টাকায় বৃদ্ধি। এছাড়া, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য মাসিক ভাতার হার ৬৫০ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করছি। 
মূল্যস্ফীতির কশাঘাত থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিতে জানুয়ারি ২০২৫ হতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-এর মাধ্যমে স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডের ভিত্তিতে ৫৭ লাখ পরিবারকে মসুর ডাল, সয়াবিন তেল ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া, আমি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মেয়াদ আগামী অর্থবছরে ৬ মাসে উন্নীত করার প্রস্তাব করছি। একই সঙ্গে বর্তমানে সহায়তাপ্রাপ্ত ৫০ লাখ পরিবারের অতিরিক্ত আরও ৫ লাখ পরিবারকে এর আওতাভুক্ত করার প্রস্তাব করছি।    
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণ, গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার এবং আহত ছাত্র-জনতার পুনর্বাসনসহ গণঅভ্যুত্থানের আদর্শ ও চেতনাকে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। শীঘ্রই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের পরিবার এবং আহতদের জন্য ভাতা প্রদানের লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। এছাড়া, তাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার এবং আহতদের জন্য ৪০৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করছি। 
সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যাপ্তি এবং গুরুত্ব বিবেচনায় আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করছি। এক্ষেত্রে পেনশন ব্যতীত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়াবে ৯১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা।
বিনিয়োগ, শিল্প ও বাণিজ্য : দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হলে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরি। তাই বিনিয়োগের পথে বিদ্যমান অন্তরায়গুলো চিহ্নিত করে তা দ্রুততম সময়ে দূর করার বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। 
বিনিয়োগকারীদের দ্রুত ও সহজে সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ঙহব ঝঃড়ঢ় ঝবৎারপব (ঙঝঝ) পোর্টাল হতে বর্তমানে ৪৩টি সংস্থার ১৩৪টি সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া, ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে একটি সিঙ্গেল প্ল্যাটফর্মে আবেদন, প্রক্রিয়াকরণ ও সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর আওতায় Bangladesh Single Windwo (BSW) খোলা হয়েছে। 
বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগকারীদের একটি পাইপলাইন তৈরি করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতিকে ট্র্যাকিং-এর মাধ্যমে প্রকৃত বিনিয়োগে রুপান্তর করা হবে। এছাড়া, দেশের সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রসমূহে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বিনিয়োগ প্রকল্প বাস্তবায়ন উৎসাহিত করার দিকেও আমরা বিশেষ নজর দিচ্ছি। এ লক্ষ্যে Public-Private Partnership তহবিল হিসেবে আগামী অর্থবছরে ৫ হাজার ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করছি।       
সরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কম গুরুত্বপূর্ণ ও রাজনৈতিক বিবেচনায় গৃহীত  বেশকিছু প্রকল্প বাদ দেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগ প্রকল্প গ্রহণের ফলে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস/বৃদ্ধি অর্থাৎ পরিবেশ ও প্রতিবেশের  ওপর প্রভাব নিরূপণে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগের প্রভাব মোকাবিলায় বিবেচ্য প্রকল্প কতটুকু সহনশীল তা প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণের সময় যাচাই ও মূল্যায়ন করা হচ্ছে। 
আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ২০২৬ সালের নভেম্বর মাসে স্বাভাবিক নিয়মে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা হতে আনুষ্ঠানিক উত্তরণের। উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় ভবিষ্যতের কর্মপরিকল্পনাসমূহ চিহ্নিত করে ইতোমধ্যে Smooth Transition Strategy (STS) প্রণয়ন করা হয়েছে। বাণিজ্যিক খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে লজিস্টিক খাতের উন্নয়নসহ স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে এবং বাণিজ্য সম্ভাবনাময় বিভিন্ন দেশ ও আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোটের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নের কাজ চলমান রয়েছে। 
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়ন : ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রাক্কলন অনুযায়ী বাংলাদেশের জিডিপিতে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অবদান প্রায় ১১.৮৯ শতাংশ। সম্ভাবনাময় এ খাতের বিকাশে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।    
আগামী তিন বছরের মধ্যে এ খাতের বিকাশে ১৫ হাজার নতুন উদ্যোক্তা তৈরি, ২৫ হাজার উদ্যোক্তাকে দক্ষতামূলক ও কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান, বিভাগীয় শহরে এসএমই প্রোডাক্ট ডিসপ্লে ও সেলস সেন্টার স্থাপন, জেলা শহরে আঞ্চলিক এসএমই পণ্য মেলা আয়োজন, সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ প্রতিষ্ঠা, নারী উদ্যোক্তাসহ প্রান্তিক পর্যায়ের সিএমএসএমই খাতের ১০ হাজার উদ্যোক্তাকে ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ, ডিজিটাল প্লাটফর্ম-এর মাধ্যমে ৩ হাজার নারী উদ্যোক্তার সঙ্গে কর্পোরেট ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সংযোগ স্থাপন ইত্যাদি কার্যক্রম বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।    
নারী ও শিশুর কল্যাণ : নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে জাতীয় মহিলা প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন একাডেমির মাধ্যমে মহিলাদের জন্য দক্ষতাভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে এবং উপজেলা পর্যায়ে মহিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে ভিডবি�উবি  কর্মসূচির আওতায় নির্বাচিত ২০ হাজার নারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যবসার পরিবেশ অধিকতর উন্নত করে তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে আগামী অর্থবছরে ১২৫ কোটি টাকার তহবিল বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।    
কর্মজীবী নারীর পাশাপাশি অনেক নারী ঐড়সবসধশবৎ হিসেবে তাদের শ্রম এবং সময় উৎসর্গ করছেন। কিন্তু তাদের এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে প্রায়শই যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। আমি সরকার এবং আপামর জনসাধারণের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। ভবিষ্যতে তাদের অবদান আর্থিক মানদণ্ডের ভিত্তিতে জিডিপিতে যোগ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদ্ধতিগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।   
জুলাই বিপ্লবে শিশু-শহীদদের ৮৪টি পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে এবং এ বিপ্লবে আহত শিশুদের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। 
স্থানীয় সরকার : যাতায়াত ও পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান, পরিবেশ উন্নয়ন, সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার আওতায় জনগণকে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। আধুনিক নগর ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন শহরে সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন, নিরাপদ পানি সরবরাহ, ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়ন, আধুনিক পয়ঃনিষ্কাশন ও প্রাথমিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে।    
সমগ্র দেশের গ্রামাঞ্চলে নিরাপদ পানির উৎস নির্মাণ, পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ, পানি শোধনাগার স্থাপন, সমগ্র দেশে কমিউনিটি/স্যানিটারি ল্যাট্রিন নির্মাণ/রক্ষণাবেক্ষণ, ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে আনা এবং ভূপৃষ্ঠস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং প্রতিটি বাড়িকে স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় আনার কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি : বিদ্যুৎ খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০’ বাতিল করা হয়েছে। এ আইনের আওতায় ইতিপূর্বে সম্পাদিত চুক্তিসমূহ পর্যালোচনার নিমিত্ত একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। রূপপুরে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। 
নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা, ২০০৮ যুগোপযোগী করে নতুন একটি নীতিমালা প্রণয়নের কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের শতকরা ৩০ ভাগ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, Integrated Power Sector Master Plan তৈরি করা হয়েছে এবং এর আওতায় আগামী ২০২৮ সালের মধ্যে ৩ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পরিচ্ছন্ন উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।   
জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার নিজস্ব উদ্যোগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে ২০২৫-২৬ হতে ২০২৭-২৮ পর্যন্ত সময়ে বাপেক্স কর্তৃক প্রয়োজনীয় জরিপ কাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, মধ্যমেয়াদে বাপেক্স-এর নিজস্ব রিগ দ্বারা ৬৯টি কূপ খনন এবং ৩১টি কূপের ওয়ার্কওভার সম্পন্নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। 
পরিশোধিত তেলের চাহিদা মেটাতে প্রতি বছর ৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন অশোধিত তেল শোধন ক্ষমতাসম্পন্ন ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড, ইউনিট-২ স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।
সড়ক ও রেল পরিবহণ : আমাদের সরকার টেকসই, নিরাপদ, ব্যয় সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব সড়ক নেটওয়ার্ক নির্মাণের প্রতিশ্রুতি হিসেবে বিদ্যমান ‘রোড মাস্টার প্ল্যান ২০০৯’ হালনাগাদকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। 
নিরাপদ, আরামদায়ক এবং সাশ্রয়ী হিসেবে রেল পরিবহণ বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত জনপ্রিয়। তবে বাংলাদেশে এ খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এখনও অর্জন করা সম্ভব হয়নি। আমরা এ অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটাতে চাই। এ লক্ষ্যে ৩০ বছর মেয়াদি Railway Master Plan অনুযায়ী বাংলাদেশে রেলওয়ে ডাবল লাইন ট্র্যাক নির্মাণ, গেজ একীভূতকরণ, আধুনিক সিগন্যালিং সিস্টেমের প্রবর্তন, সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে রেল যোগাযোগের উন্নয়ন, আপগ্রেডেড লোকোমোটিভ প্রবর্তন এবং বৈদ্যুতিক ট্র্যাকশন প্রবর্তন ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকা হতে ভাঙ্গা হয়ে যশোর পর্যন্ত রেল চলাচল শুরু হয়েছে এবং যমুনা রেলওয়ে সেতুর নির্মাণকাজ শেষে রেল চলাচল শুরু হয়েছে।  
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান গবেষণা : ক্যাশলেস সোসাইটি বিনির্মাণ, আর্থিক সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং আর্থিক অন্তর্ভূক্তির (Financial Inclusion) পরিসর বৃদ্ধিতে মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মোবাইল আর্থিক পরিষেবার মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণের কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে যাচ্ছে যা তাৎক্ষণিক টাকা পাঠানো,  সরকারি বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা ভাতা গ্রহণ ও সেবার বিল পরিশোধ, রেমিট্যান্স গ্রহণসহ নানাবিধ আর্থিক সেবা সহজে প্রাপ্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।  
সারাদেশে ৫ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইসিটিডি ডিজিটাল ল্যাব ও ৩০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইসিটিডি স্কুল অব ফিউচার স্থাপন করা হয়েছে। সারাদেশে ৪৯১টি উপজেলায় উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে তরুণ-তরুণীদের প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যে ‘উপজেলা সেবা ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ নির্মাণ করা হচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তি খাতের সম্ভাবনা বিবেচনায় এবং এ খাতে নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে আগামী অর্থবছরে ১০০ কোটি টাকা স্টার্ট-আপ তহবিল হিসেবে বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করছি। 
দেশে বিজ্ঞান চর্চা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে গবেষণা ও উন্নয়ন কাজে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা প্রদানের লক্ষ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৪৯২টি প্রকল্পের অনুকূলে প্রায় ১৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকার বিশেষ গবেষণা অনুদান প্রদান করা হয়েছে। উন্নয়নের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছার জন্য বিজ্ঞান গবেষণার গুরুত্ব বিবেচনায় আগামী অর্থবছরে মৌলিক বিজ্ঞান গবেষণা এবং সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ ও এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাবার লক্ষ্যে গবেষণা কার্যক্রম বাবদ ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন : জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে যে দেশগুলো রয়েছে বাংলাদেশ তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের মাধ্যমে বায়ু, পানি ও মাটি দূষণ প্রতিরোধ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনে প্রশমন, স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রভাব নিরূপণ, নারীর অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধি, উপকূলীয় ইকোসিস্টেম মূল্যায়ন, জলবায়ু সহনশীলতা অর্জনে গণমাধ্যমের সক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির গভীরতা ও গুরুত্ব বিবেচনায় প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে আগামী অর্থবছরে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।  
এবার আমি আগামী অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব আহরণের পরিকল্পনা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। 
সপ্তম অধ্যায়: রাজস্ব আহরণ কার্যক্রম
প্রত্যক্ষ কর: আয়কর
দেশের প্রত্যক্ষ কর ব্যবস্থাকে আধুনিক, ন্যায্য, করদাতাবান্ধব ও বিনিয়োগবান্ধব করার ধারাবাহিকতায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমি এ পর্যায়ে আয়করের বিধানে আনীত গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন, সংশোধন ও পরিমার্জন এর সার-সংক্ষেপ উপস্থাপন করছি।
অর্থ আইন, ২০২৪ এর মাধ্যমে ২০২৫-২৬ করবর্ষের জন্য ভবিষ্যাপেক্ষ (prospective) করহার ও সারচার্জ নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর ধারাবাহিকতায় অর্থ অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর মাধ্যমে ২০২৬-২৭ ও ২০২৭-২৮ করবর্ষের করহার ও সারচার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে, করদাতাগণ ২০২৫-২৬, ২০২৬-২৭ এবং ২০২৭-২৮ এই তিন করবর্ষের জন্য প্রযোজ্য করহার সম্পর্কে আগাম ধারণা লাভ করতে সক্ষম হবেন। তবে প্রস্তাবিত ও পরবর্তী ২ বছরের করহার পরবর্তী সরকার পরিবর্তন করতে পারবেন। 
২০২৬-২৭ ও ২০২৭-২৮ করবর্ষের জন্য স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। গেজেটভুক্ত জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এ আহত ‘জুলাই যোদ্ধা’ করদাতাদের ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। 
বর্তমানে স্বাভাবিক ব্যক্তি ও হিন্দু অবিভক্ত পরিবার করদাতাদের জন্য ২০২৬-২৭ ও ২০২৭-২৮ করবর্ষে মোট আয় করমুক্ত আয়ের সীমা অতিক্রম করলে ন্যূনতম করের পরিমাণ এলাকা নির্বিশেষে ৫,০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন করদাতাদের ন্যূনতম করের পরিমাণ ১,০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
কর পরিপালন সহজ করার জন্য লিস্টেড কোম্পানিসমূহের ক্ষেত্রে ২.৫% কর হার সুবিধা প্রাপ্তির শর্ত শিথিল করে আয়, ব্যয় ও বিনিয়োগ এর পরিবর্তে কেবল সকল প্রকার আয় ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে সম্পন্ন করার শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া, পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী (intermediary) হিসেবে কাজ করা মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার ৩৭.৫% হতে কমিয়ে ২৭.৫% নির্ধারণ করা হয়েছে। 
২০২৬-২৭ এবং ২০২৭-২৮ করবর্ষের জন্য সম্পদ সারচার্জের বিদ্যমান হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে ন্যূনতম করকে সারচার্জ পরিগণনার ভিত্তি না রেখে স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার করযোগ্য আয়ের ওপর নিয়মিত করহার প্রয়োগ করে নিরূপিত করের ওপর সম্পদ সারচার্জ পরিগণনা করার বিধান করা হয়েছে। 
কর পরিপালন উৎসাহিত করার লক্ষ্যে কর ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় অর্থ অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর মাধ্যমে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
ন্যূনতম করের কারণে কোনো করদাতাকে নিয়মিত করের যে পরিমাণ অতিরিক্ত কর প্রদান করতে হয় তা পরবর্তী করবর্ষসমূহে সমন্বয় করার সুযোগ রাখা হয়েছে;
কৃষি উৎপাদনকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তির ‘কৃষি হইতে আয়’ অনধিক ৫ (পাঁচ) লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত রাখা হয়েছে; বেসরকারি চাকরিজীবীদের করযোগ্য আয় পরিগণনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বাদযোগ্য অংকের পরিমাণ ৪.৫০ লাখ টাকা হতে  বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করা হয়েছে; চাকরিরত কর্মচারীগণের কিডনি, লিভার, ক্যান্সার, হার্ট-এর চিকিৎসার পাশাপাশি মস্তিস্কে অস্ত্রোপচার ও কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত চিকিৎসা ব্যয় বাবদ প্রাপ্ত অর্থ করমুক্ত করা হয়েছে;
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের আয় এবং জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সর্বজনীন পেনশন স্কিম হতে প্রাপ্ত সুবিধাভোগীর কোনো আয় এবং জিরো কূপন ইসলামিক ইনভেস্টমেন্ট সার্টিফিকেট হতে উদ্ভূত আয় করমুক্ত করা হয়েছে; দেশি-বিদেশি লাভজনক ও নামীদামি কোম্পানিসমূহকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে লিস্টেড এবং নন-লিস্টেড কোম্পানির করহারের ব্যবধান ৫% হতে বাড়িয়ে ৭.৫% করা হয়েছে। 
এছাড়া, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ও লেনদেন বৃদ্ধি উৎসাহিতকরণে সিকিউরিটিজ লেনদেনের মোট মূল্যের ওপর ব্রোকারেজ হাউসসমূহের নিকট হতে উৎসে কর সংগ্রহের হার ০.০৫% হতে হ্রাস করে ০.০৩% নির্ধারণ করা হয়েছে। কর কাঠামোর বিদ্যমান অসামঞ্জস্যতা দূরীকরণ এবং কর জাল সম্প্রসারণে অর্থ অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর মাধ্যমে কার্যক্রম গৃহীত হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
সম্ভাব্য মুনাফার পরিমাণ বিবেচনায় ঠিকাদারি কাজ হতে উৎসে কর কর্তনের সর্বোচ্চ হার ৭% এর স্থলে ৫% এ হ্রাস করা হয়েছে; প্রকৃত বিক্রয়মূল্যে সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশনের লক্ষ্যে জমি হস্তান্তর হতে উৎসে কর সংগ্রহের বিদ্যমান মূলধনি মুনাফা কর হার কমিয়ে এলাকাভেদে বিদ্যমান হার ৮%, ৬% ও ৪% এর স্থলে যথাক্রমে ৬%, ৪% ও ৩% এ হ্রাস করা হয়েছে; সম্ভাব্য মুনাফার পরিমাণ বিবেচনায় ১৫২টি পণ্যের ওপর আমদানি পর্যায়ে হ্রাসকৃত ২% হারে অগ্রিম কর আরোপ করা হয়েছে; পরিবেশবান্ধব রিসাইক্লিং শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তনের হার ৩% এর স্থলে ১.৫% নির্ধারণ করা হয়েছে; গ্যাস বিতরণে নিযুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তনের হার ২% এর স্থলে ০.৬% নির্ধারণ করা হয়েছে; ইন্টারনেট সেবা থেকে উৎসে কর কর্তনের হার ১০% এর স্থলে ৫% করা হয়েছে; সিকিউরিটিজ এর সুদ হতে উৎসে কর কর্তনের হার ৫% এর স্থলে ১০% করা হয়েছে; বিদ্যুৎ ক্রয়ের অর্থ পরিশোধকালে উৎসে কর কর্তনের হার ৬% এর স্থলে ৪% নির্ধারণ করা হয়েছে; সম্ভাব্য মুনাফার পরিমাণ বিবেচনায় সিগারেট প্রস্তুতকারকের নিকট হইতে নিট বিক্রয়মূল্যের ওপর ৩% এর স্থলে ৫% হারে অগ্রিম কর সংগ্রহের বিধান করা হয়েছে; স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার ক্ষেত্রে টার্নওভার করের আওতামুক্ত সীমা ৩ কোটি টাকা হতে বাড়িয়ে ৪ কোটি টাকা করা হয়েছে; মোবাইল অপারেটরদের টার্নওভার করের পরিমাণ ২% হতে কমিয়ে ১.৫% নির্ধারণ করা হয়েছে;
করদাতাদের জন্য কর প্রদান, রিটার্ন দাখিল, দলিলপত্র সংরক্ষণসহ কর পরিপালনের আনুষ্ঠানিকতা সহজ করার লক্ষ্যে নিম্নরূপ বিধান করা হয়েছে: তহবিল, এতিমখানা, অনাথ আশ্রম ও ধর্মীয় উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত কোনো প্রতিষ্ঠানকে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে; উৎসে কর কর্তনকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রতি মাসের পরিবর্তে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে উৎসে করের রিটার্ন দাখিলের বিধান করা হয়েছে; জমি বা জমিসহ স্থাপনা হস্তান্তরকালে দলিল মূল্যের অতিরিক্ত কোনো অর্থ গৃহীত হলে ব্যাংক বিবরণীসহ দালিলিক প্রমাণাদি দ্বারা যাচাইযোগ্য হওয়া সাপেক্ষে উক্ত অতিরিক্ত অর্থের ওপর মূলধনি আয়ের জন্য প্রযোজ্য হারে কর প্রদানের বিধান করা হয়েছে; স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে দাখিলকৃত রিটার্ন অডিট সংক্রান্ত মাঠ পর্যায়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন করে অডিট কার্যক্রমকে কার্যকর ও সহজীকরণের উদ্দেশ্যে অডিট সংশ্লিষ্ট বিধান প্রতিস্থাপন করা হয়েছে; বিদ্যমান ৪৫টি সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ উপস্থাপনের বাধ্যবাধকতা শিথিল করে ক্রেডিট কার্ডসহ ১২টি সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র টিআইএন সার্টিফিকেট দাখিলের বিধান করা হয়েছে;
কর অব্যাহতি যৌক্তিকীকরণ এর অংশ হিসেবে নিম্নরূপ কার্যক্রম গৃহীত হয়েছে:
কর অব্যাহতির সুবিধার মেয়াদ ৩০ জুন, ২০২৫ তারিখে শেষ হবে এমন কতিপয় ক্ষেত্রে কর অব্যাহতির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়নি; দীর্ঘ সময় ধরে কর অব্যাহতি এবং হ্রাসকৃত হারে কর প্রদানের সুযোগপ্রাপ্ত কতিপয় খাতের জন্য প্রযোজ্য বিদ্যমান হ্রাসকৃত কর হার সংশ্লিষ্ট প্রজ্ঞাপনসমূহ বাতিল করা হয়েছে;  তবে, এসব কাজে জড়িত প্রান্তিক পর্যায়ের খামারি এবং উদ্যোক্তাগণকে উৎসাহ প্রদানের জন্য এসকল খাত হতে প্রাপ্ত অনধিক ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত রাখা হয়েছে।
জন্মসূত্রে বাংলাদেশি ছিলেন অথচ পরবর্তীতে বাংলাদেশি নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেছেন এমন ব্যক্তি কর্তৃক বাংলাদেশে অর্জিত আয়ের ওপর যথাযথভাবে কর পরিশোধ না করে নানা উপায়ে বিদেশে পাচারকৃত অর্থ সম্পদের ওপর কর ও জরিমানা আরোপের বিধান করা হয়েছে।
বাজেটের অংশ হিসেবে ‘প্রত্যক্ষ কর ব্যয় প্রতিবেদন’ (Direct Tax Expenditure Report) প্রকাশ করা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর নীতি উইং ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রত্যক্ষ করব্যয় প্রাক্কলন করেছে, যার পরিমাণ ১,০৭,১৩৩ কোটি টাকা।
মূল্য সংযোজন কর : মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ তে কতিপয় সংশোধনী আনা হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
(ক)  উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে আগাম করের হার ৩ শতাংশ হতে কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। বাণিজ্যিক আমদানিকারকের ক্ষেত্রে আগাম কর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭.৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। বাণিজ্যিক আমদানিকারক কর্তৃক স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজনের পরিমাণ ৫০ শতাংশের বেশি না হলে ব্যবসায়ী পর্যায়ে ঋরহধষ ঝবঃঃষবসবহঃ করে পুনরায় ভ্যাট আরোপ না করার বিধান করা হয়েছে।  
বিধি বহির্ভূত রেয়াত গ্রহণের ক্ষেত্রে জরিমানার পরিমাণ ৫০%-১০০% হতে কমিয়ে ৩০%-৫০% নির্ধারণ করা হয়েছে; নির্মাণ সংস্থা, যোগানদার, সিএন্ডএফ এজেন্ট কর্তৃক রিটার্ণ দাখিলের মেয়াদ প্রতিমাসের পরিবর্তে প্রতি ০৬ (ছয়) মাস করা হয়েছে; আগাম কর সমন্বয়, রিফান্ড আবেদন ও রেয়াত গ্রহণের সময়সীমা ০৪ (চার) মাসের পরিবর্তে  ০৬ (ছয়) মাস করা হয়েছে;
কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধিসহ আদর্শ ভ্যাট ব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে ভ্যাট হার কিছুটা বৃদ্ধি করা হয়েছে: বিভিন্ন ‘এমএস প্রোডাক্ট’ এর উৎপাদন পর্যায়ে আরোপিত সুনির্দিষ্ট কর প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে; নির্মাণ সংস্থা সেবার বিপরীতে ভ্যাটের হার ৭.৫ শতাংশ এর পরিবর্তে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে; অনলাইনে পণ্য বিক্রয় কমিশনের ওপর ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে; সেল্ফ কপি পেপার, ডুপ্লেক্স বোর্ড/কোটেড পেপার এর উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাটের হার ৭.৫ শতাংশ এর পরিবর্তে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে; প্লাস্টিকের তৈরি সকল ধরনের টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালী সামগ্রী, হাইজেনিক ও টয়লেট্রিজ সামগ্রীসহ অনুরূপ যে কোনো পণ্যের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাটের হার ৭.৫ শতাংশ এর পরিবর্তে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে; ‘কটন সুতা’ এর উৎপাদন পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট করের পরিমাণ প্রতি কেজি ৩ (তিন) টাকার পরিবর্তে ৫ (পাঁচ) টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে; ‘কৃত্রিশ আঁশ (সধহ সধফব ভরনৎব) এবং অন্যান্য আঁশের সংমিশ্রণে তৈরি ইয়ার্ন’ এর উৎপাদন পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট করের পরিমাণ প্রতি কেজি ৩ (তিন) টাকার পরিবর্তে ৫ (পাঁচ) টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে; ব্লেড এর উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাটের হার ৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭.৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে;
নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে জনসাধারণকে কিছুটা স্বস্তি প্রদানের লক্ষ্যে কতিপয় ক্ষেত্রে ভ্যাট ও আবগারি শুল্ক অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে, যেমন- ১ (এক) লাখ টাকা এর পরিবর্তে ৩ (তিন) লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক স্থিতির ওপর আবগারি শুল্ক অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে; Liquefied Natural Gas (LNG) এর আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে; স্যানিটারি ন্যাপকিন, প্যাকেটকৃত তরল দুধ ও বলপয়েন্ট পেনের স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে; ২২ ইঞ্চির পরিবর্তে ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত কম্পিউটার মনিটরের উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে;
নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক হার আরোপ, হ্রাস অথবা বৃদ্ধি করা হয়েছে: (ক) বাণিজ্যিক আমদানিকারক কর্তৃক সিগারেট পেপার আমদানির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক হার ১৫০ শতাংশ এর পরিবর্তে ৩০০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে; (খ) ওটিটি বা ওভার দ্যা টপ প্ল্যাটফর্ম সেবার সংজ্ঞা প্রদানপূর্বক এর উপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে;  (গ) সকল ধরণের আইসক্রিমের উপর সম্পূরক শুল্ক হার ১০ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে; 
রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি, দেশিয় শিল্পের বিকাশ এবং জনস্বার্থে নিম্নোক্ত বিধান করা হয়েছে:  হাসপাতাল বেড উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি ও স্থানীয়ভাবে ক্রয়ের ক্ষেত্রে সমুদয় ভ্যাট ৩০ জুন ২০৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে; এপিআই (অপঃরাব চযধৎসধপবঁঃরপধষ ওহমৎবফরবহঃং) উৎপাদনের ক্ষেত্রে উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধার মেয়াদ ৩০ জুন ২০৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে; মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা হ্রাসপূর্বক মেয়াদ ৩০ জুন ২০২৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে; খচএ ঈুষরহফবৎ এর স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা হ্রাসপূর্ববক অব্যাহতির মেয়াদ ৩০ জুন ২০২৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে; ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ও ইলেকট্রিক ওভেন এর ওপর স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা হ্রাসপূর্ববক অব্যাহতির মেয়াদ ৩০ জুন ২০৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে; সাধারণ ও আইসিইউ (ওঈট) অ্যাম্বুলেন্সসহ হাইব্রিড ও ইলেক্ট্রিক ভেহিক্যালকে ৩০ জুন ২০৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে; সাবান ও শ্যাম্পুর কাঁচামাল খঅইঝঅ এবং ঝখঊঝ এর স্থানীয় উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা হ্রাসপূর্বক অব্যাহতির মেয়াদ ৩০ জুন ২০২৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে; লিথিয়াম ও গ্রাফিন ব্যাটারী উৎপাদনের ক্ষেত্রে উৎপাদন পর্যায়ে ৩০ জুন ২০২৭ সাল পর্যন্ত সমুদয় মূল্য সংযোজন কর এবং ১ জুলাই ২০২৮ সাল হতে ৩০ জুন ২০৩০ সাল পর্যন্ত ৫ শতাংশের অতিরিক্ত ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে; ই-বাইক এর স্থানীয় উৎপাদনের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশের অতিরিক্ত ভ্যাট ৩০ জুন ২০৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে; রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এয়ারকন্ডিশনার ও এর কম্প্রেসরের উৎপাদনের জন্য কতিপয় প্রয়োজনীয় উপকরণ আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক ৩০ জুন ২০২৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে;  Sterile surgical catgut, surgical suture, lifts and skip hoists, সেট-টপ-বক্স এবং বলপয়েন্ট কলম আমদানি পর্যায়ের ভ্যাট অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হয়েছে।
আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে আমদানি শুল্ক-কর বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবসমূহ উপস্থাপন করছি:  
বিদ্যমান শুল্ক-কর কাঠামো পুনর্বিন্যাস : আগামী অর্থবছরে বিদ্যমান ছয় (০৬) স্তর বিশিষ্ট শুল্ক কাঠামো পুনর্বিন্যাস করে একটি নতুন স্তর (৩%) যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে আমদানি পর্যায়ে বারো (১২) স্তর বিশিষ্ট সম্পূরক শুল্কহারের পাশাপাশি নতুন একটি সম্পূরক শুল্কহার (৪০%) নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে, সর্ব সাধারণের সুবিধার্থে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য, প্রধান প্রধান খাদ্যদ্রব্য, সার, বীজ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ এবং তুলাসহ আরও কতিপয় শিল্পের কাঁচামালের ক্ষেত্রে বিদ্যমান শূন্য শুল্ক হার অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করছি। 
শুল্ক-কর যৌক্তিকীকরণ : আমদানি পণ্যের শুল্ক-কর হার পর্যায়ক্রমে হ্রাস করা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সংলাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ১১০টি পণ্যের আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, ৬৫টি পণ্যের আমদানি শুল্ক হ্রাস, ৯টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার এবং ৪৪২টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক হ্রাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
ট্যারিফ ও ন্যূনতম মূল্য যৌক্তিকীকরণ : বর্তমানে বলবৎ ন্যূনতম ও ট্যারিফ মূল্য পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করার অংশ হিসেবে বিদ্যমান সকল ট্যারিফ মূল্য প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৮৪টি পণ্যের ন্যূনতম মূল্য প্রত্যাহার এবং ২৩টি পণ্যের ন্যূনতম মূল্য বৃদ্ধি করে শুল্ক মূল্য যৌক্তিক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। 
নিত্যপ্রয়োজনীয় ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের শুল্ক-কর হ্রাস : পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে অপরিশোধিত এবং পরিশোধিত উভয় ধরণের পেট্রোলিয়াম আমদানিতে শুল্ক-কর হার হ্রাস করা এবং এ সকল পণ্যের ট্যারিফ মূল্য প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া পরিশোধিত চিনির আমদানি শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব করা হয়েছে।
শিল্প খাতে সহায়তা এবং ন্যায়সঙ্গত প্রতিরক্ষণ প্রদান : শিল্পখাতে প্রণোদনা প্রদানের অংশ হিসেবে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক হার হ্রাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে। স্থানীয় শিল্পের প্রতিরক্ষণের জন্য ক্লোরিনেটেড প্যারাফিন ওয়াক্স, সিল্ড ব্যাটারি, পলিয়েস্টার স্ট্যাপল ফাইবার, ব্যাটারির separator, লিফট-এর যন্ত্রাংশ এবং এলইডি বাতির যন্ত্রাংশসহ কতিপয় পণ্যের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
ওষুধ শিল্প : ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধসহ সকল ধরণের ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল আমদানি এবং এপিআই (API-Active Pharmaceutical Ingredient) তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক-কর অব্যাহতি সুবিধা সম্প্রসারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
কৃষি : কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রদান করে একটি নতুন প্রজ্ঞাপন জারির প্রস্তাব করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে পড়সনরহবফ যধৎাবংঃবৎ তৈরির যন্ত্রাংশ আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব  করা হয়েছে। 
পরিবহন খাত : টায়ার উৎপাদনে ব্যবহার্য উপকরণের শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া, ১৬-৪০ আসন বিশিষ্ট বাস এবং ১০-১৫ আসন বিশিষ্ট মাইক্রোবাসের শুল্ক-কর হ্রাসের প্রস্তাব করা হয়েছে। 
বন্ড ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন : বন্ড ব্যবস্থাকে সহজীকরণ ও ব্যবসাবান্ধব করার উদ্দেশ্যে ‘সেন্ট্রাল বন্ডেড ওয়্যারহাউস’ ও ‘ফ্রি জোন বন্ডেড ওয়্যারহাউস’ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে। 
কাস্টমস আইনের কতিপয় ধারা সংশোধন ও কতিপয় নতুন বিধান সংযোজন : কাস্টমস আইন, ২০২৩ আরও যুগোপযোগী ও কার্যকর করার লক্ষ্যে এর নিম্নোক্ত পরিমার্জন ও সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যথা: আমদানিকৃত পণ্য চালানের মূল্য এবং শুল্ক ফাঁকির পরিমান ২ (দুই) হাজার টাকার কম হলে শুল্ক কর বা অতিরিক্ত শুল্ক কর আরোপ করা হয় না। উভয় ক্ষেত্রেই এই সীমা ৪ (চার) হাজার টাকা করা হয়েছে; বিলম্বে শুল্ক পরিশোধের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সুদের হার এবং সুদ আরোপের সর্বোচ্চ সময়সীমা মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হয়েছে; আমদানি নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিধান লঙ্ঘন এবং কার্গো ঘোষণা দাখিলে ভুল/ত্রুটির ক্ষেত্রে আরোপযোগ্য জরিমানার হার কমানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং শিশুকল্যাণ : দেশে উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে রেফারেল হাসপাতালসমূহের পাশাপাশি ৫০ শয্যার অধিক সকল হাসপাতাল স্থাপনের জন্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম আমদানিতে শুল্ক-কর হ্রাসের প্রস্তাব করা হয়েছে; স্থানীয় পর্যায়ে পরিবেশবান্ধব ই-বাইক উৎপাদনে প্রণোদনা প্রদানের লক্ষ্যে নতুন প্রজ্ঞাপন জারির প্রস্তাব করা হয়েছে। 
উপসংহার : মাত্র অল্প কয়েক মাসে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশকে স্থিতিশীল করার কাজটি প্রায় সম্পন্ন করে আনা সম্ভব হলেও পরিপূর্ণ সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছতে আমাদের এখনও অনেকটা পথ পেরোতে হবে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাওয়ার প্রবণতা দেখা গেলেও তা এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। গত এপ্রিল মাসে মার্কিন প্রশাসন কর্তৃক আরোপিত অতিরিক্ত শুল্কের নেতিবাচক প্রভাবও আমাদের অর্থনীতির ওপর পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ ছাড়া, সম্প্রতি যে বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু করা হয়েছে, তার কোনো নেতিবাচক প্রভাব আপাতত বাজারের ওপর পড়ার সম্ভাবনা না থাকলেও, এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হচ্ছে। এ সকল ঝুঁকি মোকাবেলা করে দেশের অর্থনীতির জন্য একটি  বৈষম্যহীন ও টেকসই ভিত্তি নিশ্চিত করা এখন আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।  
আপাতত প্রবৃদ্ধির গতি বৃদ্ধির পরিবর্তে অর্থনীতির ভিত মজবুত করার দিকে আমরা অধিকতর মনোযোগ দিচ্ছি। এ শক্তিশালী ভিতই হবে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের সোপান। আগামীর সেই বাংলাদেশে সবার জন্য মানসম্মত জীবন এবং সকল স্তরে বৈষম্যহীন ব্যবস্থার নিশ্চয়তা প্রদান হবে আমাদের মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্য পূরণে আমি আপনাদের সকলের সহযোগিতা চাই। ইনশাআল্লাহ্, আমাদের সবার সম্মিলিত প্রয়াসে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের সকল মুক্তিকামী মানুষের জন্য এক অনুকরণীয় আলোকবর্তিকা। 
আল্লাহ্ হাফেজ

×